ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিএসএমএমইউ: রাজনৈতিক আক্রোশে চাকরিচ্যুতি! ভিসির অস্বীকার

মুরসালিন হক জোনায়েদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৭ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১০
বিএসএমএমইউ: রাজনৈতিক আক্রোশে চাকরিচ্যুতি! ভিসির অস্বীকার

ঢাকা : রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার হয়েই চাকরিহারা হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ৪৫ শিক্ষক-কর্মকর্তা। সেইসঙ্গে আওয়ামীপন্থীদের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার বিষয়টিও এখানে কাজ করেছে বলে মনে করছেন তারা।



তবে তাদের এ দাবি অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত বলেছেন, দুর্নীতি অনিয়মের সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

নিয়োগ ও পদোন্নতি সংক্রান্ত অনিয়মে সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে চাকুরিচ্যুত করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। তালিকায় থাকা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবও দিতে বলা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, চাকরিচ্যুতরা চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নিয়োগ পান। সে সময়ই তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাতে কেনাকাটা, নিয়োগ-পদোন্নতিতে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু ক্ষমতাসীন জোট সরকারের আমলে এই দুর্নীতির কোনো সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো মেডিসিন বিভাগের চাকরিচ্যুত মেডিকেল অফিসার ডা. জুবায়ের দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি-কে বলেন, যাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাদের দুর্নীতি করার প্রশ্নই আসে না। কারণ তাদের কেউই প্রশাসনিক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।

এ সময় তিনি বিভাগের কো-চেয়ারম্যান ফজলে আলাউল্লাহর দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলেন, ‘ডা. আলাউল্লাহ শুধু একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকেই বছরে কোটি টাকা কমিশন পান। আওয়ামীপন্থী প্রভাবশালী চিকিৎসক হওয়ায় তার দুর্নীতির বিচার করা বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব নয়। ’  

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘কো-চেয়ারম্যান ফজলে আলাউল্লাহ নিজেই রোগীদের স্বাস্থ্যের বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য রাজধানীর একটি নামকরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠাতেন এবং জুনিয়রদের ওপরও এ ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করতেন। এ বিষয় প্রতিবাদ করলে আমাকে নিউরো সার্জারি বিভাগে বদলি করা হয়। একপর্যায়ে নিউরো মেডিসিন বিভাগে অনুপস্থিত দেখিয়ে আমাকে চাকরিচ্যুত করা হলো। ’

অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের একের পর এক চাকরিচ্যুত করে অনভিজ্ঞ ও নতুন চিকিৎসক নিয়োগের কারণে হঠাৎ করেই হাসপাতালে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা বেশি ঘটছে বলে অভিযোগ করেন ডা: জুবায়ের।

এভাবে চলতে থাকলে শিগগিরই এই হাসপাতালের অর্জিত সুনাম হারিয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে চাকুরিচ্যুতদের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হলেও ৭ দিনের মধ্যেই কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত সাময়িক বরখাস্তের কথা স্বীকার করে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে প্রথমে নজরুল কমিটি, পরে শাহজাহান কমিটি ও সর্বশেষ সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ সময় তিনি প্রশাসনের বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুতদের অভিযোগ অস্বীকার করেন।

চাকরিচ্যুত হলেন যারা: অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন, সার্জারির অধ্যাপক ডা. সহিদুর রহমান, ডা. নিয়াজ আহমেদ চৌধুরী, ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শহীদুল আলম খান, রেডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. ইকবাল হোসেন, ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলো-ফেসিয়াল সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমান মোল্লা, কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাসান ইমাম আল হাদী, ইএনটি বিভাগের হোসেন ইমাম আল হাদী, চক্ষু বিভাগের ডা. আবদুল কুদ্দুস, অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের ডা. জেরজিনা রহমান, ডা. ইকবাল হোসেন চৌধুরী, ডা. আসিয়া আলী, নেফ্রোলজি বিভাগের ডা. নজরুল ইসলাম, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের ডা. মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া, সার্জারি বিভাগের ডা. কামরুজ্জামান, ডা. আতিয়ার রহমান, ডা. মহিবুল আজিজ, ডা. আবদুল ওহাব খান, মেডিসিন বিভাগের ডা. শাহীদুল ইসলাম, ইউরোলজি বিভাগের ডা. সাইফুল ইসলাম, চর্ম ও যৌন বিভাগের লে. কর্নেল ডা. আবদুল ওয়াহাব, গাইনি অ্যান্ড অবস্টেট্রিক বিভাগের ডা. নুরুন নাহার খানম, ডেন্টিস্ট্রি বিভাগের ডা. মজিবুর রহমান, প্রস্থোডন্টিকস বিভাগের ডা. আলীয়া সুলতানা ও সহকারী অধ্যাপক পদে চক্ষু বিভাগের ডা. খন্দকার জিয়াউল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক গাইনি বিভাগের ডা. সাঈদা সুলতানা, ডা. হামিদা বেগম, ইএনটির এএফএম একরামুদৌলা, মেডিসিন বিভাগের ডা. আবদুল কাদের, নিউনেটোলজি বিভাগের ডা. খালেদ নূর, পেডিয়াট্রিক বিভাগের ডা. হেলেনা বেগম, পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি বিভাগের ডা. সালমা জাহান, গাইনি বিভাগের ডা. হুমায়রা আলম, ডা. রীয়া হুমায়রা।

এ ছাড়া কর্মকর্তাদের মধ্যে সাময়িক বরখাস্তরা হলেন উপ-রেজিস্ট্রার ডা. এসএম রফিকুল ইসলাম, ডা. সাইফ-উদ্দিন-নিসার, সহকারী গ্রন্থাগারিক মার্জিয়া বেগম, সহকারী লাইব্রেরিয়ান সুফিয়া বেগম, উপ-পরিচালক মাসুদ আলম, সহকারী পরিচালক খন্দকার শফিকুল হাসান, সহকারী পরিচালক নাছিরউদ্দিন ভূঁইয়া, সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আখতারুজ্জামান, সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা, সহকারী রেজিস্ট্রার ফেরদৌসী বেগম ও আশরাফ-উস-সালেহীন।

বাংলাদেশ সময় : ০৯৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১০।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।