ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

স্বাধীন বিচার বিভাগ: পূরণ হয়েছে প্রত্যাশার সামান্যই

জাকিয়া আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১০
স্বাধীন বিচার বিভাগ: পূরণ হয়েছে প্রত্যাশার সামান্যই

ঢাকা: মানুষের পর্বতসম প্রত্যাশা নিয়ে যাত্রা শুরুর পর স্বাধীন বিচার বিভাগের বয়স তিন বছর হতে চললেও প্রত্যাশার সামান্যই পূরণ হয়েছে।

২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক হওয়া বিচার বিভাগের তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামীকাল সোমবার।

অথচ এ সময়ের মধ্যে সারা দেশে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করলেও পরিস্থিতি খুব একটা পাল্টায়নি।

প্রতিষ্ঠিত হয় বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয়।

নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি এখনও আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই হচ্ছে।

চলতি মাসের শুরুতে দুশ’ জনকে ডিঙিয়ে ঢাকার জেলা জজ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এসব কিছু নিয়েই স্বাধীন বিচার বিভাগের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। অথচ বহু প্রত্যাশা নিয়ে তিন বছর আগে সারা দেশের আইনজীবীরা ঘটা করে দিসবটি পালন করেছিল।

গত বুধবার নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সে কথা স্মরণও করলেন মাহবুব হোসেন।

তিনি বলেন, ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর একটি ঐতিহাসিক দিন। সেদিন নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদা হয়েছে।

তবে এর পরই বললেন হতাশার কথা, ‘বিচার বিভাগ আলাদা হলেও প্রশাসনের রশি এখনও নিম্ন আদালতের বিচারকদের গলায়। বিচারকদের বদলি পদোন্নতি এখনও আইন মন্ত্রণালয়ের ইচ্ছায়ই হচ্ছে। ’

তিনি বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করতে হবে।
 
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক এম ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজাও স্বাধীন বিচার বিভাগ নিয়ে সন্তুষ্ট নন।

এ ব্যাপারে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা মোটেও সন্তুষ্ট নই। প্রত্যাশার কিছুই পূরণ হয়নি। প্রত্যাশা বেশি থাকলে সেটা পূরণ না হলে মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়। ’

তিনি আরও বলেন, ‘তিন বছরেও বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের একটি বাল্ব কিনতেও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এভাবে তো স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। ’
 
তিনি বলেন, ‘আগে ম্যাজিস্ট্রেটরা জামিন দিতেন। এখন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা জামিন দিচ্ছেন। এছাড়া দৃশ্যপটে আর তেমন কোনও পরিবর্তন আসেনি। ’

বিচারকদের শপথ ব্যবস্থা পরিবর্তনের পক্ষেও মত দেন ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা।

তিনি বলেন, পবিত্র কোরান হাতে শপথ নিতে হবে, যেন বিচারকরা রাজনীতি ও পক্ষপাতমুক্ত থেকে বিচার করতে পারেন। তাদের জন্য ওয়ার্কশপেরও ব্যবস্থা করতে হবে।
 
বাংলাদেশের আদি সংবিধানে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের কথা বলা থাকলেও অতীতে সরকারগুলো এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়নি বলে জানান তিনি।

ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলায় সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায় অনুযায়ী ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদা হয়।

এর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের জন্য বিধি প্রণয়ন করা হলেও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী না হওয়ায় তা বাতিল করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের রায় পালনে গড়িমসি ও রায়ের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়ায় সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল বর্তমানেও আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে।
 
পৃথকীকরণের আগে বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের। বিচার বিভাগ পৃথকের পরও এ অভিযোগ রয়েই গেছে।

বর্তমানে মামলা জট স্বাধীন বিচার বিভাগের অন্যতম একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

গত ১ জানুয়ারি পর্যন্ত পাওয়া হিসেবে দেখা যাচ্ছে, সারা দেশের আদালতগুলোতে ১৯ লাখ ৬৯ হাজার ৫৩ টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে।

দায়রা জজ আদালত ও ট্রাইব্যুনালগুলোতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা নয় লাখ ২৬ হাজার একশ’ ৪৭টি।

অন্যদিকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন আছে সাত লাখ ১২ হাজার ৭৫টি মামলা। হাইকোর্টে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে তিন লাখ ২৪ হাজার ৫৭১টি এবং আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা পাঁচ হাজার ২৬০টি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।