ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শিল্প-বান্ধব নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করাই হবে শিল্প পুলিশের মূল দায়িত্ব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১০

ঢাকা: বর্তমান মুক্ত বাজার অর্থনীতি এবং বিশ্বায়নের যুগে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং শিল্প কারখানাকে লাভজনকভাবে পরিচালনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অজর্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শিল্পন্নোয়ন ছাড়া কোনো দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রায় অসম্ভব।

কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানীর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং জাতীয় উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে শিল্প কারখানা।

সম্প্রতি ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান তথা শিল্প এলাকায় ঘটে যাওয়া কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা দেশের উন্নয়নের ধারাকে কিছুটা হলেও ব্যহত করেছে। শিল্প-প্রতিষ্ঠান, মালিক, শ্রমিক এবং উৎপাদিত পণ্যের যথাযথ নিরাপত্তার জন্য বিশেষায়িত একটি বাহিনীর অভাবে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

এতে করে একদিকে যেমন মালিক, শ্রমিক এবং সামগ্রিক অর্থে দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয় আর্থিকভাবে। একইসঙ্গে ুণœ হয় দেশের ভাবমূর্তি। ফলে খুব স্বাভাবিক কারণেই দেশের সব মহলেই দাবী ওঠে বিশেষায়িত ‘শিল্প পুলিশ’ গঠনের।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবীর যৌক্তিকতা এবং গুরুত্ব বিবেচনা করে জাতীয় সংসদে শিল্প পুলিশ গঠনের ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণে সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকেই দেশের শিল্প এলাকা ও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে শিল্প পুলিশ। শিল্পাঞ্চলে সুষ্ঠু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও শিল্প বিকাশে বিশেষায়িত এই বাহিনী গঠনে প্রধানমন্ত্রীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

শিল্প পুলিশ গঠনের লক্ষ্যে পুলিশ হেডকোয়াটার্স থেকে বিশেষ এই বাহিনীর হেডকোয়াটার্স এবং সাতটি জোনের জন্য মোট তিন হাজার ৯৫৩ জনবলের একটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই হাজার ৯৯০ জনবলের শিল্প পুলিশ গঠনের অনুমোদন দেন।

প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের ভিত্তিতে একজন পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে প্রধান করে প্রাথমিকভাবে এক হাজার ৫৮০ জনবলের মঞ্জুরি পাওয়া যায়। এই জনবল নিয়েই শুরু হচ্ছে শিল্প পুলিশের কার্যক্রম।

ডিআইজি’র অধিনে এসপি পদমর্যাদার ডিরেক্টর অ্যাডমিন এবং ডিরেক্টর অপারেশন্স কর্মকর্তা থাকবেন।

শিল্প পুলিশের ঢাকা জোন-১ এর আওতায় আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল ও ঢাকা জোন-২ এর আওতায় রয়েছে সমগ্র গাজীপুর শিল্প এলাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম শিল্পাঞ্চল নিয়ন্ত্রণের জন্য চট্টগ্রাম জোন নামে পৃথক জোন করা হয়েছে।

শিল্প এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে শিল্প-বান্ধব নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করাই হবে এই বাহিনীর মূল কাজ।

এছাড়া সরকার ঘোষিত শিল্প এলাকার সকল প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি শিল্প কারখানার নিরাপত্তার স্বার্থে নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়নপূর্বক তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে এই বাহিনী।

অগ্রিম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে প্রয়োজনীয়   প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনাও এই বাহিনীর অন্যতম দায়িত্ব।

শিল্প এলাকার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারকে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রেরণ করা হবে শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে। সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে এরূপ কোনো আশংকা দেখা দিলে আগেভাগেই সরকারকে সার্বিক বিষয়ে অবহিত করবে এবং প্রতিরোধমূলক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তারা।

শিল্প এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থে মালিক, শ্রমিক কল্যাণ সংগঠনসহ অন্যান্য যে কোনো সংগঠন বা সংস্থা, এমনকি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের ওপর সজাগ দৃষ্টি থাকবে এই বাহিনীর।

শিল্প প্রতিষ্ঠানে শ্রম অধিকার, শ্রম আইনের অনুসরণ, কাজের উপযুক্ত পরিবেশ, নারীর প্রতি আচরণ, শিশু শ্রম, বেতন-ভাতা-বোনাস, ওভারটাইম, শ্রমিক কল্যাণ, শ্রমিকদের দাবী ইত্যাদি নানা বিষয় পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন দেবে শিল্প পুলিশ।

শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয় যেমন অগ্নি নির্বাপন, জরুরি বহির্গমন, জরুরি অ্যালার্ম ব্যবস্থা, ইলেকট্রিক গ্যাস লাইনের অবস্থান, প্রাইভেট সিকিউরিটির কার্যক্রম ইত্যাদি নিয়মিত পরিদর্শন, পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনে পরামর্শ দেওয়া এবং সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে নবগঠিত এই বাহিনী।

শিল্প পুলিশ শুধুমাত্র শিল্প এলাকার প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিধান এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে। ফলে তারা সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে।

এই বাহিনী গঠনের ক্ষেত্রে অপারেশন্স এবং প্রশাসন শাখার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ, গোয়েন্দা ও তদন্ত কার্যক্রমের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের সমস্যা নিরসনে বাহিনীর সকল সদস্য যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হবেন। এজন্য এর একটি স্থায়ী প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সেলও থাকবে।

শিল্প নিরাপত্তা কৌশল. শ্রম আইন, সমাজ বিজ্ঞান, শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক, শিল্প নিরাপত্তা সংক্রান্ত মনস্তত্ত্ব, জেন্ডার সংবেদনশীলতা, আন্ত:ব্যক্তিক জনসংযোগ বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ বাহিনীকে কর্ম উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।

যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় শিল্প পুলিশ প্রয়োজনীয় আধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জামে সুসজ্জিত থাকবে। নাশকতারোধে প্রতিটি ফিল্ড ইউনিটে শক্তিশালী গোয়েন্দা শাখা সংযুক্তির মাধ্যমে গোয়েন্দা বিভাগ অগ্রিম তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি নিয়মিত শ্রমিক, মালিকপক্ষসহ অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করবে।

স্বয়ংসম্পূর্ণ অপারেশন্স ইউনিট থাকায় সংকটময় মুহূর্তে এবং দ্রুততম সময়ে প্রশিক্ষিত পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে প্রেরণ করা সম্ভব হবে।
 
শিল্প পুলিশ এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং শ্রমিক সংগঠনসহ শিল্প সংগঠন সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবে যেন প্রয়োজনে তাদের সহায়তায় এবং সমন্বয়ে সমস্যার সমাধান সহজতর হয়।

রুগ্ন শিল্প কারখানা সচল রাখতে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের মধ্যে সমন্বয় সাধনসহ সরকারের নিকট প্রতিবেদন দাখিল করবে।

বিশেষায়িত বাহিনী হওয়ার কারণে যে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করতে সক্ষম হবে এই বাহিনী। প্রয়োজনে তারা শ্রমিক এবং মালিক পক্ষকে নিরাপত্তা বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

যে কোনো প্রয়োজনে শিল্প পুলিশের সঙ্গে নীচের ফোন নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করা যাবে।

ডিরেক্টর জেনারেল: ০১৭৩০৭৩৯৬৭০, ডিরেক্টর (প্রশাসন): ০১৭৩০৭৩৯৬৭১, ডিরেক্টর (অপারেশন্স): ০১৭৩০৭৩৯৬৭২, ডিরেক্টর (ঢাকা জোন-১): ০১৭৩০৭৩৯৬৭৬, ডিরেক্টর (ঢাকা জোন-২): ০১৭৩০৭৩৯৬৯০, ডিরেক্টর (চট্টগ্রাম জোন): ০১৭৩০৭৩৯৭০৪।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।