ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ: ১১ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ৪৪ শিক্ষক

ফজলে ইলাহী স্বপন, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১২
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ: ১১ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ৪৪ শিক্ষক

কুড়িগ্রাম: দারিদ্রপীড়িত পশ্চাদপদ ১৬টি নদ-নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত কুড়িগ্রাম জেলার উচ্চ শিক্ষায় অবদান রাখছে প্রাচীন বিদ্যাপীঠ কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ।

১৯৬১ সালে স্থাপিত এ কলেজে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু হলেও নানামুখী সংকট ও সমস্যায় সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।



প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৬১ সালে স্থাপিত কলেজটি ১৯৮০ সালের ১ মার্চ জাতীয়করণ করা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষে অনার্স কোর্স এবং ১৯০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্স কোর্স চালু হয়।

কলেজটির জন্ম ইতিহাসের সঙ্গে যারা জড়িয়ে রয়েছেন তারা হলেন-প্রাক্তন মন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ভোলা মিয়া, তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক সলিম উদ্দিন আহমেদ, আহমদ আলী বকসী, অ্যাডভোকেট আমানউল্যাহ, শিক্ষাবিদ বাবু প্রাণ বল্লভ করঞ্জাই, ক্ষিতিন্দ্রনাথ রায় প্রমুখ।

শিক্ষার্থী সংখ্যা: কলেজটিতে বর্তমানে মোট ছাত্রী-ছাত্রী সংখ্যা ১১ হাজার ৩৯৭ জন। এর মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ৬০০ জন, স্নাতক পর্যায়ে ২০০০ জন, স্নাতক সম্মান পর্যায়ে (অনার্স) ৮ হাজার ৫২৭ জন এবং মাস্টার্স পর্যায়ে ২৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।

শিক্ষক সংখ্যা: অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষক ও প্রদর্শকের জন্য মোট ৮৫টি পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৪৪ জন। ৪১টি পদই শূন্য। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

ভৌত অবকাঠামো: ২২ একর ২০ শতাংশ জমির উপর স্থাপিত কলেজটি মাস্টার্স ও অনার্স কোর্সে উন্নীত হলেও নানামুখী সংকটে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন সংকটসহ সীমানা প্রাচীর নেই এ কলেজে। রয়েছে শ্রেণী কক্ষ, ছাত্রী-ছাত্রী হোস্টেল, শিক্ষকদের জন্য ডর্মেটরি ও আবাসন সংকট।

ছাত্রদের কোনো কমনরুম নেই। ছাত্রীদের জন্য অনেক পুরনো ছোট একটি কমনরুম থাকলেও এতে নেই আসবাবপত্র বা বিনোদনের ব্যবস্থা। ছাত্রদের জন্য ৫০ বেডের ১টি ও ছাত্রীদের জন্য ১০০ বেডের ১টি হোস্টেল থাকলেও সেখানে অনেকটা গাদাগাদি করেই থাকছেন শিক্ষার্থীরা।

পাঠাগার: বিভিন্ন বিভাগের নিজস্ব পাঠাগার ছাড়াও একটি কেন্দ্রীয় পাঠাগার রয়েছে এই কলেজে। কিন্তু এসব পাঠাগারের বেশিরভাগ বই পুরনো। নতুন বই তেমন একটা কেনা হয় না। লাইব্রেরিয়ানের পদ থকালেও তা শূন্য। সহকারী লাব্রেরিয়ান দিয়ে চলছে পাঠাগার।

অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের বিষয় সমুহ: অনার্স কোর্সে মোট বিষয় রয়েছে ১৪টি। বিষয়গুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, অর্থনীতি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, রসায়ন, প্রাণিবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত।

মাস্টার্স কোর্সে বাংলা, ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, উদ্ভিদবিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞান এ ৭টি বিষয় রয়েছে।

ইংরেজি অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্রী মাহমুদা খাতুন তুলি জানান, বিপুল সংখ্যক ছাত্রীর জন্য মাত্র ১টি কমনরুম রয়েছে। এর অবস্থাও শোচনীয়, এতে নেই আসবাবপত্র বা বিনোদনের ব্যবস্থা।
ইসলামের ইতিহাস অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র মমিনুল ইসলাম জানান, কলেজটিতে পরিবহনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের সবসময় পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়। প্রায়ই বাস শ্রমিকদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটিসহ সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
 
এইচএসসি বিজ্ঞান প্রথম বর্ষের ছাত্র আব্দুল আউয়াল জানান, এই কলেজে ক্যান্টিন ও সাইকেল গ্যারেজ নেই।

কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আনিছুর রহমান চাঁন্দ জানান, সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ২০০৩ সালে। সে সময় ভিপি ও জিএস ছিলেন সিরাজুল ইসলাম ও রুকুনুজ্জামান। কলেজ কর্তৃপক্ষের তেমন একটা আগ্রহ না থাকায় কলেজটিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, শিক্ষকরা সময় মতো কলেজে আসেন না। ক্লাসও হয়না ঠিকমতো। এসব সমস্যা সমাধানে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আবাসিক ছাত্র ও ছাত্রী হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা জানান, স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেকটা গাদাগাদি করেই থাকতে হয় তাদের। ১০০ আসনের ছাত্রী হোস্টেলে ২৫০ থেকে ৩০০ জন এবং ৫০ জনের ছাত্র হোস্টেলে ১০০ জনকে থাকতে হচ্ছে। এছাড়া এখানে আসবাবপত্রেরও সংকট রয়েছে।

উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মীর্জা নাসির উদ্দিন জানান, বিভিন্ন বিভাগে থাকা লাইব্রেরিগুলো বইপত্রে সম্মৃদ্ধ হলেও মূল লাইব্রেরিতে পুরনো বইয়ের সংখ্যাই বেশি। শিক্ষকদের কলেজ ক্যাম্পাসে থাকার জন্য প্রয়োজন আবাসন ব্যবস্থা ও ডর্মেটরি। বিভিন্ন সময় বাইরে থেকে শিক্ষক বা ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা এলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় কলেজ কর্তৃপক্ষকে।

ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রধান সহযোগী অধ্যাপক কাজী সফিকুর রহমান জানান, এই কলেজে শিক্ষক সংকট তো রয়েছেই। পাশাপাশি শ্রেণী কক্ষ সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে নানা জটিলতায় পড়তে হয়।

তিনি আরও জানান, কলেজটিতে তফশিলি ব্যাংকের একটি শাখা স্থাপন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে একাধিকবার আবেদন নিবেদন করেও কোনো সুফল পাচ্ছেনা।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. তোফায়েল হোসেন জানান, কলেজটির বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য কুড়িগ্রাম-২ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. জাফর আলী প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৪ বিষয়ে অনার্স ও ৭টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু করা সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও জানান, কলেজটির শিক্ষার পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে শিক্ষক ও শ্রেণী কক্ষ বাড়ানোসহ প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন, কলেজের সীমানা প্রাচীর, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ একান্ত প্রয়োজন।

কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাফর আলী জানান, ক্লাসরুম ও অবকাঠামো সংকট নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে তা নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে। একটি নতুন ভবনের কাজ চলছে এবং আরও ২টি ভবনের নির্মাণ কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরও জানান, শিক্ষক সল্পতা দূর করার জন্য কলেজের নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হচ্ছে।

খুব শিগগিরই এসব সমস্যার অনকেটাই সমাধান সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১২
সম্পাদনা: শিমুল সুলতানা, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।