ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নাইট কলেজ থেকে সরকারি বরিশাল কলেজ

কাওছার হোসেন, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১২
নাইট কলেজ থেকে সরকারি বরিশাল কলেজ

বরিশাল: এক সময়ের ‘বরিশাল নাইট কলেজ’ কালের পরিবর্তনে বর্তমানে ‘সরকারি বরিশাল কলেজে’ পরিণত হয়েছে।

অনেক আগে থেকেই এ অঞ্চলের মানুষের বিদ্যালাভের প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ তৈরি হয়।

তবে, আগ্রহ থাকলেও অবহেলিত এ অঞ্চলের মানুষদের কিশোর বয়সেই কাধে নিতে হতো সংসারের বোঝা। ফলে, অর্থনৈতিক সংকট আর সংসারের দায়িত্ব নেওয়ার পরে অনেকেরই উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ অসমাপ্ত থেকে যায়।

তাই এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে ১৯৬৩ সালে “বরিশাল নাইট” কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

এর পর পর্যায়ক্রমে নৈশ শাখা বন্ধ হয়ে চালু হয় দিবা শাখা। বিদ্যার্থীদের জন্য খোলা হয় মাস্টার্স ও অনার্স কোর্স।

তবে, কলেজ প্রতিষ্ঠার অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেলেও তেমন কোনো উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নিজ বসত ভিটায় মাথা উচু করে দাড়িয়ে থাকা সরকারি বরিশাল কলেজে।

শিক্ষক সংকট, শ্রেণীকক্ষ সংকট, শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা, একাডেমিক ভবনসহ রয়েছে নানান সমস্যা।

তবে, সরকারের সহযোগিতা পেলে ধীরে ধীরে এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার আশাবাদ প্রকাশ করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ একেএম মজিবুর রহমান।

এদিকে, বরিশাল কলেজকে অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে নামকরণের জন্য জাতীয় সংসদে দাবি তুলেছেন বরিশাল-১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুস।

কলেজ প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: ১৯৬৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর কালিবাড়ি রোডে অবস্থিত ব্রজমোহন (বিএম) স্কুলের একটি ভবনে বরিশাল নাইট কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু থেকেই এ কলেজে ডিগ্রি কোর্স চালু ছিলো।

পরে ১৯৬৬ সালে অশ্বিনী কুমার দত্তের বাস ভবনে কলেজটি স্থানান্তরিত করা হয়।

এর পর থেকে ধীরে ধীরে কলেজে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ফলে দেখা দেয় শ্রেণীকক্ষের সংকট।

শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষ এবং একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। এ ভবনটি নির্মাণের জন্য আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেন বরিশালের তৎকালীন জেলা প্রশাসক এটিএম শামসুল হক।

দিন দিন এ কলেজের শিক্ষাদান ব্যবস্থা প্রসার লাভ করায় ১৯৭০ সালে এখানে দিবা শাখার কার্যক্রম শুরু করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
 
স্বাধীনতার পরবর্তি সময়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কলেজে মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে চালু হয় অনার্স কোর্স।

১৯৮৬ সালের ১৪ নভেম্বর কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। বরিশাল নাইট কলেজের পরিবর্তে এর নামকরণ হয় সরকারি বরিশাল কলেজ। একই সময় এর নৈশ শাখাও বন্ধ হয়ে যায়।

অবকাঠামো: প্রায় ৫ একর জমির ওপর রয়েছে সরকারি বরিশাল কলেজের সব স্থাপনা। এখানে ১টি একাডেমিক ভবন, ১টি প্রশাসনিক ভবন, ১টি মাস্টার্স ভবন, ১টি মসজিদ, ডাকঘর ১টি, ছাত্র সংসদ ভবন, সাইকেল গ্যারেজ, লাইব্রেরি (একাডেমিক ভবনের ভিতরে), বিশাল মাঠ ও তমাল গাছ রয়েছে।

তবে, এসব স্থাপনা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

কলেজের শিক্ষক শাহিনুল হক বাংলানিউজকে জানান, এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো আবাসন ব্যবস্থা নেই। নেই পরিবহনের ব্যবস্থাও। ক্লাসরুমের সংকট রয়েছে। নেই প্রয়োজনীয় শিক্ষকও। অতিথি শিক্ষক দিয়ে চলছে এ কলেজের পাঠদান। তারা আবার অভিজ্ঞতার দিক থেকে জুনিয়র হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বুঝতে বেগ পেতে হয়।

পাঠদান: সরকারি বরিশাল কলেজে ৩টি বিষয়ে মাস্টার্স এবং ৬ বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে। এখানে বর্তমানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ৪২৩ জন। এর মধ্যে অনার্সে ১৪৯৭, মাস্টার্সে ৪৬, ডিগ্রিতে ৯৮০ এবং  উচ্চ মাধ্যমিকে ৯শ শিক্ষার্থী রয়েছে।

১৯৭২ সালে ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বরিশাল কলেজের মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। এখনও ওই তিন বিষয়েই মাস্টার্স চালু রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০০৬ সালে সরকারি বরিশাল কলেজে মার্কেটিং, ব্যবস্থাপনা ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ে সর্ব প্রথম অনার্স কোর্স চালু হয়।

এর পর ২০০৭ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মৃত্তিকা বিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয়ে অনার্সের আরও ৩টি বিষয় চালু হয়। তবে, অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স নিয়ে শিক্ষার্থীদের রয়েছে অনেক অভিযোগ।

মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র কলেজের তারিকুল ইসলাম অপু বাংলানিউজকে জানান, এখানে মার্কিটিং বিষয়ে মাস্টার্স না থাকায় তাকে ঢাকায় যেতে হচ্ছে।

ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী শান্তি প্রিয়া জানান, এ কলেজে অনার্স বিষয় থাকলেও তা পড়ানোর জন্য তেমন কোনো শিক্ষক নেই।

এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ একেএম মজিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, সমাজ কল্যাণ, মার্কেটিং ও ইংরেজি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স খোলার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া অনার্সে বাংলা, ইতিহাস, ইসলামিক ইতিহাস ও অর্থনীতি বিষয় চালুর জন্য আবেদন করা হয়েছে।

শিক্ষক ও জনবল: অনার্সের প্রতি বিষয়ে ৭ জন করে এবং মাস্টার্সে ৯ জন করে শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও এখানে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ সৃষ্ট মোট পদের সংখ্যা ৪২টি। এর মধ্যে ৫টি পদ শূন্য রয়েছে।

৪ জন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ২ জন। এছাড়া ৪র্থ শ্রেণীতে ১৫ জন এবং মাস্টাররুলে ৯জন কর্মচারী এ কলেজের জন্য শ্রম দিচ্ছেন।

ছাত্র সংসদ: ২০০২ সালে সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় সরকারি বরিশাল কলেজে। ওই সময় ভিপি নির্বাচিত হন ছাত্রদল নেতা পারভেজ আকন বিপ্লব। এছাড়া জিএস সমির ও এজিএস হাফিজ আহম্মেদ বাবলু। এরাও ছাত্রদলের রাজনীতি করেন।

বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকেই ছাত্র সংসদে তালা ঝুলছে। তালাটিতে মরিচাও পরে গেছে।

কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রয়োজন বলে মনে করেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোর্শেদ আলম মিরাজ।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, একজন ছাত্রনেতা যখন একটি ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি হন তখন তিনি পরিপূর্ণ ছাত্র নেতার যোগ্যতা লাভ করেন। শিক্ষা ছাত্রদের দাবি নয়, এটা অধিকার। তাই এ অধিকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিতে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব বরিশাল কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দাবি জানান তিনি।

অধ্যক্ষের বক্তব্য: অধ্যক্ষ একেএম মজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, “কলেজে অনেক সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে অবকাঠামোগত সমস্যা বেশি। এসব সমস্যা এক দিনে সমাধান করা সম্ভব নয়। ”

তিনি আরও বলেন, “এত সমস্যার মধ্যে কলেজের প্রতিটি শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে শতভাগ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে এ কলেজের শিক্ষার মান দিন দিন ভাল হচ্ছে। ”

শিক্ষার্থীদের আবাসিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ব্যাপারে অধ্যক্ষ বলেন, “কলেজে যে সব সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে আবাসিক সমস্যা বড় হয়ে দাড়িয়েছে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো জমি না থাকায় ছাত্রাবাস বা ছাত্রীনিবাস নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এর জন্য জেলা প্রসাশক ও সিটি মেয়রের কাছে আবেদন করা হয়েছে। ”

পাঠক আগামী শনিবার পড়ুন ভোলা সরকারি কলেজের প্রতিবেদন।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১২
সম্পাদনা: মাহাবুর আলম সোহাগ, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।