ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

৩ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা : বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকাবাসীর কর্মসূচি স্থগিত

সানি সরকার, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১০
৩ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা : বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকাবাসীর কর্মসূচি স্থগিত

দিনাজপুর: পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ৩ দফা দাবিতে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকার তিগ্রস্ত ৫ গ্রামের বাসিন্দাসহ আশপাশের ১১টি গ্রামের বাসিন্দারা মঙ্গলবার আন্দোলনে যাচ্ছেন না।

বিকেলে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের প্রস্তাবিত বৈঠককে সামনে রেখে পূর্ব-ঘোষিত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।



পূর্ব-ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার থেকে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার কথা ছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে ৩ টায় শুরু হতে যাওয়া ওই বৈঠকে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশ্ববর্তী দুধিপুর, ইছবপুর, রামভদ্রপুর, শেরপুর ও চককবির ৫ গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর পক্ষে বড়পুকুরিয়া পানি-বিদ্যুৎ সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম, সদস্য সচিব মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল হকসহ কয়েকজন প্রতিনিধিত্ব করবেন।

তবে আলোচনা ফলপ্রসু না হলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী আবারও আন্দোলনে যাবে বলে জানিয়েছেন। সেক্ষেত্রে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরবর্তী কার্যক্রম ঘোষণা করবে আন্দোলন কমিটি।
 
বড়পুকুরিয়া পানি-বিদ্যুৎ সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল হক বাংলানিউজকে জানান, জেলা প্রশসক আমাদের সাথে বৈঠকের প্রস্তাব দেয়ায় আমরা আন্দোলনের কর্মসূচি পরিবর্তন করেছি। বৈঠক ফলপ্রসু না হলে আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে আবারও আন্দোলনে নামবে গ্রামবাসী।  

এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্ত ৫ গ্রামের বাসিন্দাসহ পাশ্ববর্তী ১১টি গ্রামের বাসিন্দারা বিদ্যুৎ সংযোগ, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ ও জমিতে সেচের পানি সরবরাহের ৩ দফা দাবিতে লাঠি মিছিল নিয়ে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ঘেরাও করে।

ঘেরাও শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে ২৫ অক্টোবরের মধ্যে সমস্যা সমাধান না হলে ২৬ অক্টোবর বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি সরবরাহের সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন নেতৃবৃন্দ।

এরই ধারাবাহিকতায় ২১ অক্টোবর দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের প থেকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর পানি-বিদ্যুৎ সংগ্রাম কমিটি কর্মসূচি পরিবর্তন করে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেয়।

এদিকে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী বিশ্বনাথ হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়কে অবগত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে এলাকাবাসীর বৈঠকে সমস্যা সমাধান হোক এটা আমরা চাই। ’

উল্লেখ্য, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের টেকনোলোজিক্যাল সাপোর্টের জন্য ১৪টি উচ্চ ক্ষমতার পানির পাম্প বসানো হয়েছে। পাম্প দিয়ে  ভূ-গর্ভ থেকে সার্বক্ষণিক পানি উত্তোলন করায় পাশের ৫টি গ্রামের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।

ফলে ওইসব গ্রামের পাম্প, টিউবয়েল অকেজো হয়ে গেছে।   ৫ গ্রামের হাজার হাজার মানুষের মাঝে পানির জন্য চলছে হাহাকার। জীবন বাঁচাতে গ্রামবাসীরা মাটির কূপ খনন করেছে। ৫/৬ ঘন্টা পর পর চুয়া পানির পুঞ্জিভুত অংশ বালতি দিয়ে তুলে তারা পান করছে এবং হাঁস মুরগি ও গরু-ছাগলকে রক্ষা করছে।

অপরদিকে ওইসব কূপের অস্বাস্থ্যকর পানি খেয়ে শিশুসহ অসংখ্য মানুষ নানারকম ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। গ্রামের মানুষ গোসল করার পানি পাচ্ছে না। গোসল, কাপড়-চোপড় ধোয়া, বাসন মাজাসহ বিভিন্ন কাজ করছেন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বজ্র মিশ্রিত ড্রেনের পানিতে। ফলে গ্রামবাসী আক্রান্ত হচ্ছেন চর্মরোগেও।

তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী ৫ গ্রামের কৃষকের অধিগ্রহণ করা আবাদি জমির উপর গড়ে উঠেছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। অথচ এসব গ্রামবাসীই বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে রয়েছে। এসব কারণে প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে জমি দানকারী কৃষকরা।
 
এরই পরিপ্রেক্ষিত ৫ গ্রামের বাসিন্দারা বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ, সেচের পানি সরবরাহ ও বিদ্যুৎ সংযোগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।


বাংলাদেশ সময়: ১০৩১ ঘণ্টা,  অক্টোবর ২৬, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।