ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পাহাড়ে বাঙালিদের ‘বঞ্চনা’র ফিরিস্তি তুলে ধরল নাগরিক পরিষদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪
পাহাড়ে বাঙালিদের ‘বঞ্চনা’র ফিরিস্তি তুলে ধরল  নাগরিক পরিষদ বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: পার্বত্য চট্টগ্রামকে খ্রিস্টান অধ্যুষিত রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের নেতারা।

তারা বলছেন, বর্তমান সময়ে কিছু উপজাতি নেতার নেতৃত্বে পার্বত্য শাসনবিধি-১৯০০ আইন বহাল রাখার আন্দোলন চলছে, যা পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ উপজাতি জনগণকে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

আর সেখানে উপজাতি পরিবারগুলো রাষ্ট্রীয় যেসব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, বাঙালি পরিবারগুলো ঠিক তার বিপরীতে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না।

তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সব সম্প্রদায়ের ও জাতিগোষ্ঠীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের অবিভক্তি রক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি-১৯০০ বাতিল করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ  আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মো. মজিবর রহমান এ দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কাজী মো. মজিবর রহমান বলেন, নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলের বাঙালি পরিবারগুলো। সেখানে উপজাতি পরিবারগুলো রাষ্ট্রীয় যেসব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, তার বিপরীতে বাঙালি পরিবারগুলো তা পাচ্ছে না। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামকে খ্রিস্টান অধ্যুষিত রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। তার অন্যতম অনুসঙ্গ হলো বর্তমান সময়ে কিছু উপজাতি নেতার নেতৃত্বে পার্বত্য শাসনবিধি-১৯০০ আইন বহাল রাখার আন্দোলন। অথচ এই শাসনবিধি হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ উপজাতি জনগণকে শোষণের হাতিয়ার। পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি মূলত তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের প্রণীত শাসন ও শোষণের প্রহসনের আইন। এই আইনে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত নেতাদের কিছু সুযোগ সুবিধা দিয়ে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসনক্ষমতা নিজেদের কুক্ষিগত করেছিলো ব্রিটিশরা। এই আইনে রীতি, প্রথা ও পদ্ধতির আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিচালিত হওয়ার কথা রয়েছে। ১২৪ বছর পর এসে সেই উপনিবেশিক আইন বলবৎ রেখে উপজাতিরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র করছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে আমাদের জাতীয় পবিত্র সংবিধানের মাধ্যমে। যেখানে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বসবাসরত সব জনগণের মৌলিক অধিকার ও মান-মর্যাদাসহ সব ধরনের অধিকার সংরক্ষণ করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯০০ সালের শাসনবিধির মতো উপনিবেশিক আইন বলবৎ রেখে এ অঞ্চলে বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের শাসন খর্ব করা হয়েছে। এর ফলে এ অঞ্চলে বসবাসরত গর্বিত বাঙালি জনগোষ্ঠীর অধিকার বঞ্চিত করা হয়েছে।

বক্তব্যে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সর্বস্তরের গণমানুষের উন্নয়নে ও সময়ের প্রয়োজনে দেশের সংবিধান ১৬ বার সংশোধনী করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামে ১২৪ বছরের পুরনো উপনিবেশিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি-১৯০০ বলবৎ রাখা মোটেও যুক্তিসংগত হতে পারে না বলে আমরা মনে করি। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সব সম্প্রদায়ের ও জাতিগোষ্ঠীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের অখণ্ডতা রক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি-১৯০০ বাতিল করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান আরও কিছু দাবি জানিয়ে বলেন, রাজনৈতিকভাবে তিন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আঞ্চলিক চেয়ারম্যান উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। সেখানে একজন চেয়ারম্যানের সমপরিমাণ ক্ষমতা দিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান বাঙালিদের থেকে মনোনয়ন দিতে হবে; পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী/উপদেষ্টা পদটিও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। এক্ষেত্রেও বাঙালিদের থেকে একজন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রতিনিধি থাকা উচিত; তিন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজাতি, তিন সার্কেল চিফ উপজাতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান উপজাতি। এই ক্ষেত্রে জনসংখ্যানুপাতে ভূমি কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে কালো আইন করা হয়েছে, যেমন- রীতি, নীতি, প্রথা, পদ্ধতি। হেডম্যান, কারবারি ও রাজা/ সার্কেল চিফ যা বলবেন তা-ই আইনে পরিণত হবে। এক্ষেত্রে ভূমিহারা কোনো বাঙালি কোথাও কোনো আপিল করতে পারবেন না। এই কালো আইন বাতিল করতে হবে; উপজাতিদের জন্য ইনকাম ট্যাক্স ফ্রি, কিন্তু বাঙালিদের ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয়। তাই অর্থনৈতিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিরা গরিব থেকে গরিব হচ্ছে আর উপজাতিরা দিন দিন ধনী থেকে ধনী হচ্ছে। ইনকাম ট্যাক্স পার্বত্য অঞ্চলের সব সম্প্রদায়ের জন্য একই নিয়ম চালু করা উচিত; ব্যাংক লোন নিলে উপজাতিদের কোনো সুদ দিতে হয় না, কিন্তু বাঙালিদের চড়াও সুদ দিতে হয়। উপজাতিরা ব্যাংক লোন পরিশোধ করতে না পারলে তাদের অনেক ক্ষেত্রেই মওকুফ করা হয়, কিন্তু বাঙালিরা পরিশোধ করতে না পারলে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হয় এবং জেলখানায় যেতে হয়। লোনের ক্ষেত্রে সব সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য একই নীতি অবলম্বন করতে হবে।

এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও তার মেয়ে আইনজীবী সারা হোসেন এবং মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামালের কারণে ‘পাহাড় বেসামাল’ বলে অভিযোগ করেন কাজী মো. মজিবর রহমান।

তিনি বলেন, এই চার কামালে পাহাড় বেসামাল। এনারা কখনো পাহাড়ে যাননি। ঢাকায় বসে কথা বলেন। এনাদের কারণে পাহাড়ের অবস্থা বেসামাল হয়ে যাচ্ছ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমার বিচারের দাবি করে মজিবর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দেশের অনেককে সাংবিধানিক পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। সেখানে সন্তু লারমা তার পদে বহাল আছে। তিনি ৩৬ হাজার মানুষকে হত্যা করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪
ইএসএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।