ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

পঞ্চগড়ে সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের মিছিল-মানববন্ধন

জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১২

পঞ্চগড়: শিক্ষকের নতুন পদ সৃষ্টি, শূন্য পদ পূরণ ও অনার্স কোর্স চালুর দাবিতে বৃহস্পতিবার সকালে মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

সকাল ১০টায় শহরে মিছিল বের করেন তারা।

মিছিল শেষে তারা শহরের শেরে বাংলা পার্ক সংলগ্ন পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মানববন্ধন করেন।

মিছিল ও মানববন্ধনে কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও অভিভাবক অংশ নেন।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ ১৯৮৫ সালের ১ জুলাই ২.৫৪ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ এ কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। এরপর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এ কলেজে সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি। প্রায় ২ বছর আগে কলেজে ২২টি করে সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক এবং ২টি করে প্রভাষক ও প্রদর্শকের পদ সৃষ্টির আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ১৬ বছরেও সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি। প্রভাষক পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে শিক্ষকরা অন্য কলেজে বদলি হয়ে যাচ্ছেন।

কলেজটিতে ৫৪টি প্রভাষকের পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৩৫ জন। এর মধ্যে ১৯ জন বদলি হয়ে চলে গেছেন। সম্প্রতি আরও ১৭ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। ফলে কলেজে চরম শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে।

পদোন্নতিপ্রাপ্ত শিক্ষকরা বর্তমানে সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক হয়েও প্রভাষক হিসেবেই উচ্চপদে থেকে নিম্নপদের (ইনসিটো) দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে কোনো শিক্ষকই নেই।

এ অবস্থায় পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজে পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পদোন্নতি পাওয়া এই ১৭ জন শিক্ষকের অন্য কলেজে বদলি করা হলে মাত্র ১৮ জন শিক্ষক দিয়ে কোনভাবেই পাঠদান স্বাভাবিক থাকবে না।

কলেজের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী আফসানা বলেন, ‘‘এ কলেজে অর্নাস কোর্স নেই। বাধ্য হয়ে পাস কোর্সে পড়ছি। কলেজ ক্যাম্পাসে কোনো ক্যান্টিনও নেই। ’’

কলেজে অর্নাস কোর্স চালুর দাবি জানিয়ে একই বর্ষের শিক্ষার্থী লিজা ও আঞ্জুয়ারা বলেন, শ্রেণি কক্ষগুলোতে পর্যাপ্ত বেঞ্চ নেই, আলাদা বিজ্ঞান ভবন নেই। একই রুমে ক্লাস ও প্রাকটিকেল ক্লাস করতে হয়। শিক্ষক সংকটের কারণে অনেক ক্লাস নিয়মিত হচ্ছে না।

এ কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক মো. দেলোয়ার হোসেন দিলু এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, সরকার অবিলম্বে তাদের দাবি মেনে না নিলে অভিভাবকদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবেন তারা।

পঞ্চগড় নাগরিক কমিটি সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে কলেজের বিভিন্ন সমস্যার দ্রুত সমাধান করার দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এরশাদ হোসেন সরকার। এতে উল্লেখ করা হয়, কলেজটিতে বিজ্ঞান ভবন, ল্যাবরেটরি, যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র নেই। একই কক্ষে ক্লাস ও প্রাকটিক্যাল করানো হচ্ছে। অডিটোরিয়াম, একাডেমিক ভবন, বিজ্ঞান ভবন, প্রশাসনিক ভবন, শিক্ষকদের বাসভবন, লাইব্রেরি ভবন, কম্পিউটার ভবন, ছাত্রী কমনরুম, নারী শিক্ষকদের আলাদা কমনরুম, চিত্তবিনোদন, ক্যান্টিন ও খেলাধুলার উপকরণের সংকট রয়েছে।

কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. হাসনুর রশিদ বাবু জানান, সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপকের পদ না থাকায় কলেজে উচ্চপদে থেকে নিম্নপদের (ইনসিটো) চাকরি করছেন তিনি। পদোন্নতিপ্রাপ্ত অনেক শিক্ষক বদলি হয়ে অন্য কলেজে চলে যাচ্ছেন। শিক্ষক সংকটের কারণে পাঠদান মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম জানান, বিদ্যমান ৫৪টি প্রভাষক পদের বাইরেও নতুন করে ৪৪টি সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপকের ও ২টি প্রভাষক পদ সৃষ্টির জন্য ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলেও পদ সৃষ্টি করা হয়নি।

তিনি জানান, কলেজে ২১টি বিষয়ে অর্নাস কোর্স চালুর অনুমোদন দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু এনিয়ে অনেক চেষ্টা তদবির করেও দীর্ঘ ২ বছরেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

অর্নাস কোর্স চালুর আবেদন এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবেচনাধীন রয়েছে।

তাই তিনি সরকারের কাছে সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপকের পদ সৃষ্টিসহ দ্রুত প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের দাবি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১২

সম্পাদনা: শিমুল সুলতানা, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।