ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অর্থ বরাদ্দ নেই,৬৭৩ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙতে পারছে না ডিসিসি

আহমেদ রাজু, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১০
অর্থ বরাদ্দ নেই,৬৭৩ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙতে পারছে না ডিসিসি

ঢাকা: অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় ডিসিসি পুরোনো ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভাঙতে পারছে না।   ভবনগুলো ভেঙে বহুতল টাওয়ার নির্মান করে সেখানকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসন করার কথা ছিলো।

প্রকল্পটি বস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়ে ছিলো ১০০ কোটি টাকা। কিন্তু সরকার অর্থ বরাদ্দ না দেওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
 
প্রকল্পটি সম্পর্কে মেয়র সাদেক হোসেন খোকা বাংলানিউজকে বলেছেন, প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য আমরা মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়ে ছিলাম। কিন্তু মন্ত্রনালয় থেকে আমরা কোনো সাড়া পাইনি। তাই আমরা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারছি না। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দাদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন খুবই জরুরি। সরকার কি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায় না? এ প্রশ্নের জবাবে মেয়র খোকা বলেন, ‘সরকারের মনোভাব তো আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। ’ তবে সরকারের কাছে আমরা খুব শিগগিরই আবারো প্রস্তাব পাঠাবো।
 
ডিসিসি জানায়, ২০০৪ সালের ৯ জুন গভীর রাতে ৮১, শাঁখারি বাজারের একটি ছয়তলা বাড়ি ধ্বসে পড়ে। এতে মর্মান্তিক ভাবে প্রাণ হারায় ১৯ জন মানুষ। এ ঘটনার পর সরকার গঠন করে একটি তদন্ত কমিটি। একই সঙ্গে সরকার রাজউককে পুরোনো ঢাকাসহ রাজধানীর সব জরাজীর্ণ ও ঝঁকিপূর্ণ বাড়ির তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়।
 
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর তালিকা রাজউকের তৈরি করার কথা থাকলেও রাজউক তা করেনি। রাজউক নিজে তালিকা তৈরি না করে দায়িত্ব দেয় ডিসিসিকে। ডিসিসিও সেই তালিকা নিজে তৈরি করেনি। জিওডেসেক কনসালট্যান্টস এন্ড সার্ভিসেস লিমিটেড নামে এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে তালিকা করায় ডিসিসি।
 
বেসরকারি ওই প্রতিষ্ঠানটি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৬৭৩টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করে। একই সঙ্গে একটি জরিপ রিপোর্ট দেয় ডিসিসির কাছে। জরিপ রিপোর্টে বলা হয়, ভবনগুলোর মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে ১৪৫টি। শুধু শাঁখারিবাজারেই রয়েছে ৯১টি ভবন। ভবনগুলোর তালিকা হাতে পাওয়ার পর ডিসিসি সরকারের কাছে রিপোর্ট দেয় এসব ভবন ভেঙে না ফেললে এগুলো যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে বড় রকমের বিপর্যয় ঘটাতে পারে। তাই জরুরি ভিত্তিতে ভবনগুলো ভেঙে ফেলা প্রয়োজন।
 
ডিসিসির রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর একই বছর ১০ জুলাই এলজিআরডি মন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রনালয় বৈঠকে স্থানীয় সরকার সচিবকে আহবায়ক এবং ডিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে ৬ সদস্য বিশিষ্ট  একটি সচিব কমিটি গঠন করে সরকার।
কমিটি ২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট এবং ২০০৫ সালের ৩ জানুয়ারি ও ৫ অক্টোবর ৩ দফায় মিটিং করে বিষয়টি নিয়ে। তিনটি সভা শেষে ডিসিসির প্রধান প্রকৌশলীকে আহবায়ক করে উচ্চ পর্যায়ের ৫ সদস্যের একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিও সরকারকে ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবন ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেয়।
 
উপরন্তু, টেকনিক্যাল কমিটি রিপোর্টে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন গুলো ভেঙে সেখানে যারা বসবাস করছেন তাদের পুর্নবাসনের জন্য নতুন করে বহুতল টাওয়ার নির্মাণের সুপারিশ করে।

কমিটির রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর সরকার একটি আর্থ-সামাজিক জরিপ চালানোর নির্দেশ দেয় ডিসিসিকে।

সরকারের নির্দেশে ডিসিসি আর্থ-সামাজিক রিপোর্ট  তৈরি  করতে ডিসিসির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলামকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি জরিপ চালিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করে। জরিপ রিপোর্টে শাখারি বাজারের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৯১টি ভবন ভেঙে সেখানে ২০টি বহুতল টাওয়ার নির্মাণ করার সুপারিশ করে।   টাওয়ার গুলোর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১০০ কোটি টাকা।
 
পরবর্তীতে ডিসিসি আর্থ-সামাজিক রিপোর্ট সরকারের কাছে পেশ করলে মন্ত্রণালয় টাওয়ারের নির্মাণ ব্যয় কমিয়ে নতুন করে প্রস্তাব দিতে বলে। ডিসিসি নতুন করে প্রস্তাব দিলেও সরকারের প থেকে এক চিঠিতে ডিসিসিকে বলা হয় এত বিপুল খরচ যোগান দেয়া সরকারে পে সম্ভব নয়। পরবর্তীতে ডিসিসি নতুন করে প্রস্তাব দিলেও সরকার কোনো সাড়া দেয়নি।

এদিকে শাঁখারি বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো এখন আগের চেয়ে আরো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবনগুলো ধ্বসে যে কোনো মুহূর্তে বড় রকমের বিপদ ডেকে আনতে পারে।
 
তারপরও মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েই সেখানকার বাসিন্দাদের কাটে দিনরাত।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮, অক্টোবর ২৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।