ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

যান্ত্রিক পাসপোর্টের অযান্ত্রিক ভোগান্তি

গাজী জহিরুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১০
যান্ত্রিক পাসপোর্টের অযান্ত্রিক ভোগান্তি

ঢাকা: যন্ত্রে পাঠযোগ্য বা মেশিন রিডেবল (আরএমপি) পাসপোর্ট তৈরিতে নানামুখি ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে পাসপোর্ট প্রার্থীদের।

ঢাকার আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন পাসপোর্ট পেতে কিংবা পুরনো পাসপোর্ট নবায়নে দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয় আবেদনকারীদের।



প্রথমেই পাসপোর্ট কার্যালয়ে গিয়ে ফরম পূরণের ঝক্কি। ব্যাংক ড্রাফট জমা। এরপর কার্যালয়ের দুই নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে টোকেন নেওয়া। তারপর লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ অপেক্ষা। ছবি, ফিঙ্গার প্রিন্ট আর স্বাক্ষরের জন্য। এখানেই কেটে যায় বেশ কয়েক ঘণ্টা।

এসব বাধা ডিঙিয়ে পাসপোর্ট পাওয়ার তারিখ জেনে নেয়া। নির্দিষ্ট তারিখে পাসপোর্ট নেওয়ার জন্য আবারো সশরীরে উপস্থিত হয়ে টোকেন সংগ্রহ করে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়।

ভোগান্তির এখানেই শেষ নয়। পাসপোর্ট কার্যালয়ে প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে আসা হাজার হাজার মানুষের বসার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ছোট্ট একটি ছাউনি, তাতে পঞ্চাশ জনের বেশি মানুষের দাঁড়ানোর জায়গাও  নেই। তাই প্রচণ্ড রোদ, ঝড়বৃষ্টি কিংবা খারাপ আবহাওয়ায় পাসপোর্ট প্রার্থীদের ভোগান্তি বেড়ে যায় বহু গুণ। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় মহিলাদের। সেখানে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার ন্যূনতম ব্যবস্থাটুকুও নেই।

ভোগান্তির শিকার মিরপুরের ব্যবসায়ী এমদাদুল হক বলেন, “রোদ-বৃষ্টি যাই হোক, পাসপোর্টের জন্য খোলা আকাশের নিচে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ঠাঁই নেওয়ার কোনো জায়গা নেই। ”

কেরানীগঞ্জ থেকে আসা রেহানা আক্তার পড়েন আরো বড় সমস্যায়। পাসপোর্ট নবায়নের জন্য দীর্ঘ চারটি ঘন্টা বাচ্চা কোলে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু  নির্ধারিত সময়ে তিনশ’ টোকেনের নির্ধারিত কোটা শেষ হয়ে যাওয়ায় ব্যর্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয় তাকে। কারণ তার টোকেন নম্বর ছিল ৩২০।  

প্রতিদিন মাত্র তিনশ’ প্রার্থীর আবেদন গ্রহণ ও পাসপোর্ট সরবরাহ করা হলেও টোকেন দেওয়া হয় অনেক বেশি। ফলে যাদের টোকেন নম্বর তিনশ’র বেশি তাদের খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হয়। তবে দালালদের হাত করতে পারে অন্য ব্যবস্থা। টাকা দিলে যেমন বাঘের চোখ মেলে তেম্নি দালালের মন ভজাতে পারলে সব মুশকিল আসান।

প্রথম দিন ব্যর্থ হওয়াদের পরের দিন আবারও নতুন করে টোকেন নিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হয়। এবারও যদি টোকেন নম্বর তিনশ’র ভেতর  না থাকে তবে একই ভোগান্তি তাকে বার বারই পোহাতে হতে পারে।

অসুস্থ ব্যক্তিদের পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী পাঠিয়ে বাড়ি থেকে ছবি, ফিঙ্গার প্রিন্ট ও স্বার নেয়ার কথা । কিন্তু বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না বলে বিস্তর অভিযোগ আছে।  

এসবের পাশাপাশি রয়েছে দীর্ঘসূত্রতা ও অযথা সময়ক্ষেপণ। পাসপোর্ট প্রদানের জন্য প্রায়ই আবেদনের এক দেড় মাস পর পাসপোর্ট নেয়ার তারিখ দেওয়া হয়। অনেক সময় পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রতিবেদন আসতেও দেরি হয়। অর্থাৎ অনেক ক্ষেত্রেই যখন পাসপোর্ট হাতে আসে তখন তার প্রয়োজনীয়তা আর থাকে ন্ া। রোগীদের ক্ষেত্রে যখন এমনটি হয় তখন তা হয় বেদনাময়।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন পাসপোর্ট ও বহির্গমন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুল মাবুদ।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে তিনি বলেন, “মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে ভোগান্তি যাতে না হয় সে ব্যাপারে আমরা নজর রাখছি। ”

তিনি আরো বলেন, “এমআরপি প্রর্বতনের ফলে এখন আর কেউ একাধিক পাসপোর্ট রাখতে পারবে না এবং তথ্য গোপন করা সম্ভব হবে না। পাসপোর্ট জাল করে নিরীহ মানুষকে ঠকানোর সুযোগও বন্ধ হয়ে যাবে। ”

হাতে লেখা পাসপোর্ট নিয়ে দেশের বাইরে যেতে কিংবা দেশে ফিরতে বিমানবন্দরে নানা ভোগান্তিতে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন সংস্থা ২০১৪ সাল থেকে ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট চালুর বাধ্যবাধকতা আরোপ করে।

সংস্থার ১৮১টি সদস্য দেশে ভ্রমণ করতে হলে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট ব্যবহার করতে হবে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ মে রাজধানী ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু করেন। গত মার্চ মাসে ৫২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এমআরপি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়।

বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশে এক কোটি ৩০ লাখ পাসপোর্ট রয়েছে। প্রতিবছর ২২ লাখ যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট(এমআরপি) তৈরি হবে।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় : ১৬০৫ ঘন্টা, জুলাই ১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।