ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ আষাঢ় ১৪৩১, ১৮ জুন ২০২৪, ১০ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

ঘূর্ণিঝড় রিমাল: ১০ জনের মৃত্যু, দেড় লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২৪
ঘূর্ণিঝড় রিমাল: ১০ জনের মৃত্যু, দেড় লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত

ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে এ পর্যন্ত ১০ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান।  

ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার (২৭ মে) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তিনি এ কথা জানান।

 

তিনি জানান, ১৯ জেলায় ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর এক লাখ ৫০ হাজার ৪৭৫ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রত্যেক মন্ত্রণালয় থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে অতিদ্রুত তাদের সহায়তা দেওয়া হবে।  

প্রতিমন্ত্রী জানান, এ পর্যন্ত মোট ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে খুলনায় একজন, সাতক্ষীরায় একজন, বরিশালে তিনজন, পটুয়াখালীতে একজন, ভোলায় তিনজন, চট্টগ্রামে একজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ঘর, গাছ ও দেয়াল চাপা এবং পানিতে ডুবে এদের মৃত্যু হয়েছে। আর মোট ১৯টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলাগুলো হচ্ছে- খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর।  

ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭ এবং ইউনিয়ন ও পৌরসভার সংখ্যা ৯১৪। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি এবং আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি। ঘূর্ণিঝড় সতর্কবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে উপকূলীয় এলাকাসমূহে নয় হাজার ৪২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র ও স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আট লাখের বেশি লোক আশ্রয় নিয়েছে। গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়াসহ আশ্রিত পশুর সংখ্যা ৫২ হাজার ১৪৬টি। দুর্গত লোকজনকে চিকিৎসা সেবা দিতে মোট এক হাজার ৪৭১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে চালু আছে এক হাজার ৪০০ টিম।

প্রতিমন্ত্রী জানান, দুর্যোগকবলিত মানুষের সাহায্যে আমরা ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের অনুকূলে ছয় কোটি ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ১৫টি জেলায় জিআর (ক্যাশ) তিন কোটি ৮৫ লাখ নগদ টাকা, পাঁচ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল, পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য এক কোটি ৫০ লাখ, গো খাদ্য ক্রয়ের জন্য এক কোটি ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।  

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় গত কয়েকদিন ধরে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এর ফলে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ দয়ায় আমরা সফলভাবে ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি।  

প্রতিমন্ত্রী জানান, রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যা থেকে ঘূর্ণিঝড় রিমাল বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় আঘাত হানে যার প্রভাব দেশের বিস্তৃর্ণ এলাকায় আজও অব্যাহত রয়েছে। রিমালের কারণে উপকূলীয় এলাকাসমূহে পানি ঢুকে মানুষের স্বাভাবিক জনজীবনকে ব্যাহত করেছে। বেশ কিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশব্যাপী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সরকারের সব বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দুর্যোগপূর্ব কার্যক্রম পরিচালনা করেছি এখন দুর্যোগ পরবর্তী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি।  

তিনি জানান, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে পূর্বাভাস দিয়েছে এবং আগাম কার্যাবলী (অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন) ও সাড়াপ্রদানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছে। আমরা আঞ্চলিক বিশেষায়িত আবহাওয়া কেন্দ্রের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছি। এর পাশাপাশি বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক পূর্বাভাস মডেল নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সময়োপযোগী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ ঘূর্ণিঝড়টি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক তথ্য বিনিময়ের লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এনডিআরসিসি ২৪ ঘণ্টা খোলা রয়েছে। সকাল থেকেই আমারা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করে যাচ্ছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে উপকূলীয় জেলাসমূহের সংসদ সদস্যদের সঙ্গে ফোন কলে কথা বলে স্থানীয় মানুষের খোঁজ-খবর নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন।  

দুর্যোগ মোকাবিলা একটি সমন্বিত কার্যক্রম জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ দিক নির্দেশনা, এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী সব সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন, বিভিন্নস্তরের জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, সিপিপিসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন এবং ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় আমরা এ দুর্যোগ কার্যক্রম মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি বলে আমি মনে করি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২৪
এমআইএইচ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।