ঢাকা, রবিবার, ২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ জুন ২০২৪, ০৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

বিদ্যালয়ের কর্মচারী নিয়োগে সভাপতি-প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৬ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২৪
বিদ্যালয়ের কর্মচারী নিয়োগে সভাপতি-প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার আসাদুজ্জামান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের কর্মচারী নিয়োগের আগেই বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির অভিভাবক সদস্য, স্থানীয় পৌর কাউন্সিলরসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জেলা প্রশাসকের বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। এমনকি নতুন কমিটির জন্য তফসীলও ইতিমধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে। তড়িঘড়ি করে নিয়োগ সম্পন্ন করার পাঁয়তারা চলছে বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।  

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আলফাডাঙ্গা আসাদুজ্জামান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, পরিচ্ছন্নকর্মী ও আয়া পদে নিয়োগের লক্ষ্যে আগামী শুক্রবার (২৪ মে) সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে পরীক্ষার দিন ধার্য্য করা হয়েছে। নিয়োগের জন্য ২০২৩ সাল থেকে পরপর তিনবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চ মাসে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বর্তমান কমিটির মেয়াদ চলতি বছরের ১২ জুলাই। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নতুন কমিটির নির্বাচনের সময় আগামী ১০ জুন। বিভিন্ন পদে নিয়োগ প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই প্রবেশপত্র পেয়েছেন। তবে এর মধ্যে কয়েকজন প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রবেশপত্র না পাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।  

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক যোগসাজসে প্রার্থীদের নিকট থেকে মোটা অংকের ঘুষ গ্রহণ করেছেন। আবার চাহিদানুযায়ী অর্থ না পাওয়ায় কয়েকজন প্রার্থীর থেকে নেওয়া অর্থও ফেরত দিয়েছেন। বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ পর্যায়ে এসে আরো কয়েক ব্যক্তির কাছ থেকে নিয়োগের কথা বলে প্রধান শিক্ষক লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন।  

ম্যানেজিং কমিটির একজন অভিভাবক সদস্য আরব আলী অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক আমাদের নিয়োগ বোর্ড ও নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ সম্পর্কে কোনো কিছুই অবগত করেননি। মিটিং ছাড়াই গোপনে আগে থেকে প্রধান শিক্ষক তিন পদে তেইশ লক্ষ টাকা নিয়ে নিয়োগের পাঁয়তারা করছেন।

অভিযোগকারী ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পরে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক গত নিয়োগে বড় টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছে। বর্তমান নিয়োগের বিষয়টি কেউ যেন না জানে সেজন্য রাতের আঁধারে নিয়োগের কার্যক্রম সম্পন্ন করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। তড়িঘড়ি করে টাকার বিনিময় নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর হারুন অর রশিদ বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে এখন নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা উচিত। অভিযুক্ত দুইজন গোপনে নিয়োগ দিচ্ছে। আমার জানা মতে প্রধান শিক্ষক তার আপনজন দিয়ে একজনের কাছ থেকে ৮ লক্ষ টাকা চেকের মাধ্যমে নিয়ে ছিল। অন্য জায়গায় বেশি পেয়ে তার টাকা ফেতর দিয়েছে। সভাপতি-প্রধান শিক্ষক মিলেমিশে স্কুলটি ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে।  

রবিউল আলম, মাসরেকুল হাসান ও ইউপি সদস্য মহাসিন নামে কয়েকজন অভিযোগকারীরা জানান, সম্প্রতি কর্মচারী নিয়োগের বিষয়ে কোনো আলোচনা বা মিটিং না করে গোপনে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করছেন প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি। স্কুলে আগে ৭০০-৮০০ ছাত্র-ছাত্রী ছিল। এখন ১৫০-২০০ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। পাশের হার নিম্নমুখী, স্কুলটা ধ্বংসের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছে।  

এ ব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, যে কেউ অভিযোগ করতেই পারে। নিয়োগ বিধি মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পাদন করা হচ্ছে। তাছাড়া ল্যাব অপারেটর ৪ জন, আয়া ১৩ জন ও পরিচ্ছন্ন কর্মী পদে ৪ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, কি বিষয়ে কারা অভিযোগ করেছেন; সেটা আমি এখনো জানিনা।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নাজিমুদ্দিন আহমেদ রন্জু জানান, একটি মহল স্কুল এবং কমিটির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য এগুলো করছে। নিয়োগ কার্যক্রমের জন্য কোনো অর্থের লেনদেন হয়নি। যদি লেনদেন হয়ে থাকে তাহলে অভিযোগকারীরা সেটার প্রমাণ দিক।  

আলফাডাঙ্গা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষদের অবগত করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমানিত হলে নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করা হবে।  

এই অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার(২২ মে) বিকেলে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে শুনানি হয়।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমীন ইয়াসমীন বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে গতকাল বুধবার শুনানি হয়। সেখানে আগামীকাল শুক্রবার একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে নিয়োগের পরীক্ষা হবে। এছাড়া নিয়োগে অর্থসংক্রান্ত অনিয়মের কোনো অভিযোগ সেখানে কোনো পক্ষই করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৬ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২৪
এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।