ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কাঁটাতার আর পাসপোর্ট দুই বাংলার মানুষকে ভাগ করতে পারেনি: আসলাম সানী

টিপু সুলতান, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৪
কাঁটাতার আর পাসপোর্ট দুই বাংলার মানুষকে ভাগ করতে পারেনি: আসলাম সানী

পাবনা (ঈশ্বরদী): বাংলা একাডেমীর পুরস্কারপ্রাপ্ত বহুমাত্রিক কবি ও বিশিষ্ট ছড়াকার আসলাম সানী বলেছেন, কাঁটাতার আর পাসপোর্ট দুই বাংলার মানুষকে ভাগ করতে পারেনি। ভালোবাসা ঠিক টেনে নিয়ে এসেছে।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে ঈশ্বরদী শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে প্রকৃতি আর শ্যামল ছায়াঘেরা চর গড়গড়ি গ্রামে দুই বাংলার প্রথিতযশা কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে আলোচনা সভায় কবি ও বিশিষ্ট ছড়াকার আসলাম সানী একথা বলেন।

কবি আসলাম সানী বলেন, আমি যখন পশ্চিমবঙ্গে আমার বন্ধুদের কাছে যায়, তাদের কী যে যন্ত্রণা! আমাকে হয় এপার বাংলা না হয় ওপার বাংলা বলা হয়, যা আমার কাছে বেদনার। শ্যামল বাংলা আর আমাকে ভাগ করেছে কাঁটাতার আর পাসপোর্ট। কাঁটাতার আর পাসপোর্ট কী আমাদের আলাদা রাখতে পেরেছে? পারেনি।

বিশিষ্ট  ছড়াকার আসলাম সানী আরও বলেন, একজন লেখক, একজন কবি মজিদ মাহমুদ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাকে গ্রহণ করে। আমাদের বাংলাদেশে সেতুবন্ধন তৈরি করেছেন গবেষক ও কবি মজিদ মাহমুদ। চরনিকেতনের সাহিত্য সম্মেলন কবি সাহিত্যিকদের টেনে নিয়ে এসে প্রমাণ করে দিয়েছে, দুই বাংলা ভাগ হলেও ভাগ হয়নি ভাষা।

একজন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা, কবি ও গবেষক মজিদ মাহমুদ। সাহিত্যের মধ্য দিয়ে যিনি মাটির গন্ধ খোঁজেন, পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে চান সেই মানবতার বাণী রবীন্দ্রনাথের মতো। তিনি আমাদের দুই বাংলার মানুষকে ভালোবেসে ঠিকই টেনে নিয়ে আসেন।

কবি আরও বলেন, চরনিকেতনে যে স্বপ্ন নিয়ে ভারত বাংলাদেশের কবিরা একত্রিত হয়েছে। এরকমই যদি বাংলাদেশের প্রতি জেলায়, প্রতিটি গ্রামে স্বপ্নগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়া যেত, তবে আমি বিশ্বাস করি, সংস্কৃতি উজ্জীবিত হতো। সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে বাঙালির গৌরবের ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উজ্জীবিত হতো।

আমাদের মধ্যে হানাহানি থাকত না। আমাদের মধ্যে রেষারেষি থাকতো না। ঐক্যের বাংলাদেশ স্বপ্নের বাংলাদেশ হতো। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর যে বাংলাদেশ। সে বাংলাদেশ দিতে পারত, আমরাও সেদিকে এগিয়ে যেতে চাই। সেই স্বপ্নও আমাদের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রার মধ্যে আছে। আমরা একটি সুন্দর সংস্কৃতির বাংলাদেশ, জাতীয় কবি নজরুল, শামসুর রহমান, নির্মলেন্দু গুণের স্বপ্নের বাংলাদেশ, জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। ৩০ লাখ শহীদ যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই সোনার বাংলা চাই।

ভারত-বাংলাদেশের অংশগ্রহণে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের নিভৃত পল্লি 'চর গড়গড়ি' গ্রামে তিন দিনব্যাপী চলছে ‘চরনিকেতন সাহিত্য উৎসব'। এপার-ওপার বাংলার প্রথিতযশা কবি-সাহিত্যিকদের অংশগ্রহণে যেন এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে চরনিকেতন কাব্যমঞ্চ।

১৬ এপ্রিল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে দুই বাংলার কবি সাহিত্যিকদের মিলনমেলা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঈশ্বরদীর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওসাকার নির্বাহী পরিচালক, বাংলা একাডেমীর পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি ও উৎসব কমিটির আহ্বায়ক গবেষক মজিদ মাহমুদ সভাপতিত্ব করেন।

সাংস্কৃতিক সংগঠক শামসুজ্জামান প্রিন্সের সঞ্চালনায় তিন দিনব্যাপী সাহিত্য উৎসবের দ্বিতীয় দিন সোমবার (১৫ এপ্রিল) উদ্বোধন করেন- বাংলা একাডেমীর পুরস্কারপ্রাপ্ত বহুমাত্রিক কবি ও বিশিষ্ট  ছড়াকার আসলাম সানী।

এসময় বক্তব্য দেন- কথা সাহিত্যিক পারভেজ হোসেন, কবি অনিকেত শামিম, ভারতের কবি ড. বরেন্দ্র মণ্ডল, শেলী সেনগুপ্ত, ফান্সের কবি আমিরুল আরহাম, ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ কিরণ।

এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে দুই বাংলার কবি-সাহিত্যিকদের বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বৈশাখী উত্তরীয় পরিয়ে ও উপহার সামগ্রীর সঙ্গে রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।

রোববার (১৪ এপ্রিল) সকাল ১০টায় বর্ষবরণ, মঙ্গল-উৎসব, বর্ণাঢ্য র‌্যালি, বৌটুবানীর পাঠশালার শিশু কিশোরদের অংশগ্রহণে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসব হয়েছে।

চরনিকেতনের তিন দিনব্যাপী সাহিত্য উৎসবে সুদূর ভারত থেকে অংশ নিয়েছেন- কবি শ্যামল জানা, অধ্যাপক বরেন্দ্র মণ্ডল, আবৃত্তিকার স্বপ্না দে, বাচিক শিল্পী রত্না বিশ্বাস, নৃত্যশিল্পী দেবারতী ঘোষ, এমিলা কুমার, আদ্রিজা বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি আবু রাইহান, কবি ড. সুরঞ্জন মিদ্দ, সুশীল সাহা প্রমুখ।

সাহিত্য উৎসবে বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন- কবি শামিমুল হক শামীম, জাহিদ হায়দার, ড. এ জি এম মনিরুজ্জামান, সমির আহমেদ, আসাদ কামাল, খোন্দকার খসরু পারভেজ, কবি গবেষক তারেক রেজা, শাহিন চৌধুরী, ফারহান ইশরাক, ইউসুফ রেজা, লিয়াকত বখতিয়ার, মামুন রশীদ, শামসুদ্দীন হীরা, তাহমিনা শিল্পী, অচিন্ত্যচয়ন, বাচিক শিল্পী আজিজুল বাশার, কবি আহমেদ শিবলু, আবৃত্তিকার রুবিনা আজাদ, ইমরান মাহফুজ, বোরহান মাসুদ, আনিসুল হক হীরা, ফরিদ ছিপাতুল্লাহ, কবি লেলিন, সৌহার্দ সিরাজ, বায়েজিদ চাষা, মাসুম খান আবৃত্তিকার মধুসূদন মিহির চক্রবর্তী, ইমাম জিহাদী, রিয়াজ উদ্দিন, হোসেন দেলোয়ার এবং অনিরুদ্ধ দেলোয়ারসহ শতাধিক দেশের ও স্থানীয় কবি-সাহিত্যিক।

ঈশ্বরদীর সাহাপুর ইউনিয়নের চর গড়গড়িতে তিন দিনব্যাপী বাংলা সাহিত্য উৎসবে নানা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ, শিল্প- সাহিত্যে কবিদের অবদান কবি-সাহিত্যিকদের মনের ভাব প্রকাশ ও সেমিনারসহ নানা ধরনের ব্যতিক্রমী আয়োজন রয়েছে।

অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও এই অনুষ্ঠানে ভারত থেকে ১০জন কবি-সাহিত্যিকসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দেড় শতাধিক কবি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি, ঔপন্যাসিক, সমাজকর্মীদের প্রাণবন্ত আড্ডায় এবং মতবিনিময়ে সম্মেলনে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এছাড়াও সমাপনী দিনে সম্মাননা পুরস্কার, দেশ-বিদেশের কবি-লেখক আলোচক সংগীত শিল্পীরা নানা আয়োজনে অংশগ্রহণ করছেন।

এদিকে সাহিত্য সম্মেলনকে ঘিরে চরনিকেতনের চারিদিকে কবি ও সাহিত্যিকদের বই আর বিভিন্ন প্রদর্শনীর বিভিন্ন স্টল বসেছে। এছাড়াও বাহারি সব গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার রয়েছে।

এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে পুরো গ্রামজুড়ে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। চলবে এপার-ওপার বাংলার কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর, ফাঁকে ফাঁকে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৪

আরএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।