ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শ্রদ্ধায় সিক্ত হতে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ 

অতিথি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৪
শ্রদ্ধায় সিক্ত হতে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ  শ্রদ্ধায় সিক্ত হতে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ 

সাভার: বাংলা মায়ের দামাল ছেলেদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা পেয়েছে বাঙালি জাতি, সেই স্বাধীনতা দিবস আগামীকাল ২৬ মার্চ।  

যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলার আকাশে পতপত করে উড়ছে লাল সবুজের পতাকা, তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে বাঙালি জাতি।

 

তাই তো প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে প্রস্তুত করা হয়েছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ।  

গণপূর্ত বিভাগের কর্মীরা গর্বের সঙ্গে জাতির গৌরব আর অহংকারের প্রতীক স্মৃতিসৌধের প্রতিটি স্থান পরিষ্কার করে লাল-সবুজ আর বাহারি ফুলে সাজিয়ে তুলেছেন পরম যত্নে। এছাড়া রং-তুলির আঁচড়ে রঙিন করে তোলা হয়েছে সৌধ প্রাঙ্গণ।  

রোববার (২৪ মার্চ) বিকেলে সাভারের নবীনগরে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে দেখা যায়, ১০৮ একর জায়গাজুড়ে জোরদার করা হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে স্মৃতিসৌধের বিভিন্ন স্থান। জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটকের দুই পাশে শোভা পাচ্ছে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিশালাকার ছবি।  

লাল সবুজ ফুলে সুশোভিত করে তোলা হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এছাড়া রং তুলির আঁচড়ে যেন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে স্বাধীনতার প্রতিচ্ছবি। শেষ মুহূর্তে চলছে আলোকসজ্জার কাজ।

গণপূর্ত বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, দিবসটির প্রথম প্রহরে বীর শহীদদের স্মরণে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ।  

সৌধ প্রাঙ্গণ প্রস্তুত করতে গত ১২ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত জাতীয় স্মৃতিসৌধে সব ধরনের দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।  

গত ১২ মার্চ থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পুরো সৌধ এলাকা ধুয়েমুছে চকচকে করে তুলেছেন।  

প্রায় ১৮ বছর ধরে জাতীয় স্মৃতিসৌধের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করছেন রঙমালা।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর শ্রদ্ধা জানাবেন দেশের আপামর জনতা। এজন্য আমরা পুরো স্মৃতিসৌধ ধুয়ে মুছে চকচকে করেছি। শহীদদের কবর ও তাদের জন্য নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের পরিচর্যা করতে পেরে আমি খুব গর্বিত।  

রং-তুলির আঁচড়ে সৌধের বিভিন্ন স্থাপনা সাজিয়ে তুলেছেন আল-আমিন ও তার সহকর্মীরা।  

আল-আমিন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় স্মৃতিসৌধে কাজ করছি। আমরা হয়ত মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারিনি। কিন্তু যাদের আত্মত্যাগে আমরা পরাধীনতার শিকল ছিড়ে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছি, স্মৃতিস্তম্ভসহ তাদের কবরের পরিচর্যা আমরা করতে পেরে অত্যন্ত গর্বিত। যেমন আমাদের পূর্বপুরুষরা আমাদের স্বাধীনতার কথা শুনিয়েছেন, তেমনি আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে গর্বের সাথে শোনাতে পারবো যে আমরা বীর শহীদদের কবরের পরিচর্যা ও শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দিন রাত একাকার করে প্রস্তুত করেছি।

ইতোমধ্যেই শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধের সব ধরনের কাজ প্রায় শেষ করেছে গণপূর্ত বিভাগ। শেষ মুহূর্তে সম্পন্ন করা হয়েছে আলোকসজ্জার কাজ।  

লাগানো হয়েছে লাল-সবুজ কয়েক লাখ বাতি। এছাড়া কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার চাদরে মোড়ানো হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকা।

গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও জাতীয় স্মৃতিসৌধের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন দেশি বিদেশি কূটনৈতিকসহ লাখো জনতা। এ উপলক্ষে গত ১২ মার্চ থেকে আমরা জাতীয় স্মৃতিসৌধ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রস্তুত করছি। ইতোমধ্যে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।  

নিরাপত্তার ব্যাপারে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান পিপিএম বলেন, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি জোরদার করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ওয়াচ-টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত জাতীয় স্মৃতিসৌধে নিরাপত্তার কোনো কমতি নেই।

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নে ১০৮ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত এই স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস উদ্‌যাপন শুরু হয়। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সারা দিন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাঙালি জাতি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৪
এমআইএইচ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।