ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

গাজীপুরে ৬ হাজার মানুষের জন্য ১ জন পুলিশ

আবুল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১০
গাজীপুরে ৬ হাজার মানুষের জন্য ১ জন পুলিশ

গাজীপুর: মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্য হিসেবে প্রাথমিক ও মূল দায়িত্ব পালন করে থাকে পুলিশ। কিন্তু দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে এ বাহিনীর সদস্যসংখ্যা খুবই সীমিত।

স্থান বিশেষে প্রায় ৬ হাজার মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য রয়েছেন মাত্র একজন পুলিশ। ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা গাজীপুরে জনগণ ও পুলিশের অনুপাত এমনটাই।

গাজীপুরে মোট জনসংখ্যা প্রায় ৫২ লাখ। এ জেলায়  পুলিশের সংখ্যা ৯৯৮ জন হলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৮৮২ জন। এ হিসাব অনুযায়ী জেলার ৫ হাজার ৮৯৬ জন নাগরিকের জন্য পুলিশ রয়েছে মাত্র একজন।

শুধু তাই নয়, গাজীপুরে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়, ১৩টি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, ৬শ’ কিলোমিটার মহাসড়ক, ১ হাজার ২০০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ২২ লাখ শ্রমিক এবং দৈনিক গড়ে ১৭ জন ভিআইপি’র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয় স্বল্পসংখ্যক পুলিশ দিয়ে।

দেশে নাগরিক ও পুলিশের অনুপাত ১৪০০: ১। ক্ষমতাসীন সরকার প্রতিশ্র“ত ৩২ হাজার পুলিশ নিয়োগ করলে ওই অনুপাত দাঁড়াবে ১২১০:১।

এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান জেলায় আরও ১ হাজার জনবল (পুলিশ) মঞ্জুরের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর, কালিয়াকৈর, শ্রীপুর এবং কাপাসিয়া থানার বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে বন থাকায় অপরাধীরা মানুষ খুন করে বনের মধ্যে ফেলে রেখে যায়। এসব প্রতিরোধের জন্য সার্বক্ষণিক চেকপোস্ট বাড়ানো দরকার। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যসংখ্যা কম হওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি জানান, গাজীপুরের গুরুত্বপূর্ণ থানা জয়দেবপুর। ৪১৩.৬৪ বর্গ কিলোমিটারের এ থানায় লোকসংখ্যা প্রায় ২২ লাখ এবং শিল্পকারখানা রয়েছে প্রায় ৭শ’। এসব শিল্পকারখানার প্রায় ১২ লাখ শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণীর ভাসমান মানুষ বাস করছে এখানে। এদের অনেকেই বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত থাকায় জয়দেবপুর থানা ও এর অধীন ৪টি ক্যাম্প/ফাঁড়ির স্বল্পসংখ্যক পুলিশকে ওইসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয়।

এসপি, ২৪২ বর্গ কিলোমিটারের কাপাসিয়া থানায় রয়েছে ১১টি ইউনিয়ন। এখানে পুলিশের জনবল রয়েছে মাত্র ৩০জন। কাপাসিয়া থানা ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার সীমান্তে অবস্থিত। ওইসব জেলা থেকেও রাতের বেলায় পেশাদার ডাকাতরা এসে কাপাসিয়া থানা এলাকায় হানা দেয়। ওই থানার সীমান্ত এলাকায় ক’টি ক্যাম্প স্থাপন করেও ডাকাতি বন্ধ করা যাচ্ছে না। তাই ক্যাম্পগুলোকে তদন্ত কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার আবেদন জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

এদিকে, গাজীপুরে প্রতিদিন গড়ে ১৭টি এবং সর্বোচ্চ ২৮ জন ভিআইপিকে প্রোটেকশন দিতে হয়। ভিআইপি প্রোটেকশন ডিউটির জন্য কমপে ১৭টি পিক-আপ গাড়ি ও ১০২ জন পুলিশ জনবল প্রস্তুত রাখতে হয়। কিন্তু জেলায় ভিআইপি প্রোটেকশন ডিউটির জন্য পিক-আপ গাড়ি রয়েছে মাত্র ২টি। তাই প্রতিদিনই গাড়ি রিকুইজেশন করে পুলিশের টহল ডিউটিসহ অন্যান্য ডিউটি করতে হয়। এতে জনমনেও সৃষ্টি হচ্ছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

এছাড়া জেলার ৬০০ কিলোমিটার মহাসড়কে ৪৮ জন মহাসড়ক পুলিশ ও ১৬ জন জেলা পুলিশ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছে। এতো অল্পসংখ্যক পুলিশ দিয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে জেলার পুলিশ প্রশাসন।

অপরদিকে, মহাসড়ক পুলিশ আলাদা কমান্ডে কাজ করার কারণে জেলা পুলিশের সঙ্গে কাজের সমন্বয় থাকে না।

আবেদনে পুলিশ সুপার জানান, জেলার মহাসড়কের ২৮টি ইন্টারসেপ্ট (গতিরোধক) ও জনাকীর্ণ স্থানে ন্যূনতম ১৮৪ জন পুলিশ সদস্য প্রয়োজন।
 
জেলা প্রশাসক মো. কামাল উদ্দিন তালুকদার স্বাক্ষরিত আগস্ট মাসের জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভার কার্যবিবণী থেকে দেখা যায়, চলতি বছরের জুন-জুলাই মাসে শতকরা ৮ দশমিক ৭৫ ভাগ অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য জেলা প্রশাসক পুলিশের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ পরিস্থিতিতে জেলায় পুলিশি টহল বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।