ঢাকা, শুক্রবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

স্বামীকে দুলাভাই পরিচয়ে প্রতারণা করতেন যুব মহিলা লীগ নেত্রী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪
স্বামীকে দুলাভাই পরিচয়ে প্রতারণা করতেন যুব মহিলা লীগ নেত্রী

পাবনা: প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পাবনা পৌর যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি মিম খাতুন ওরফে আফসানা মিম (২৬) ও তার স্বামী ওবাইদুল্লাহকে (৩৬) গ্রেপ্তার করেছে রাজধানীর গুলশান থানা পুলিশ।

বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে পাবনা শহরের মাসুম বাজার এলাকার বাসা থেকে সদর থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার মিম পাবনা পৌর সদরের পুরাতন মাসুম বাজার এলাকার মিন্টু মোল্লার মেয়ে এবং তার স্বামী ওবাইদুল্লা একই এলাকার মৃত মাওলানা কেসমত উল্লাহর ছেলে।

গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ শাহানূর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রতারণার মামলায় বুধবার সকালে তাদের পাবনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা দায়ের করেন মনিরুজ্জামান ওরফে বাবু।

মামলার বাদী মনিরুজ্জামান ওরফে বাবু (৩২) পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা হাটপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে। পেশায় তিনি ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী। বর্তমানে রাজধানীর শাহজানপুরে বসবাস করেন। গুলশান-২ এ তার এবিএস নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

মামলার এজাহারে মনিরুজ্জামান ওরফে বাবু জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে মিমের সঙ্গে তার পরিচয়। এর কিছুদিন পর ওবাইদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তিকে দুলাভাই হিসেবে তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন মিম। পরে পাবনা শহরের রবিউল মার্কেটে ব্যবসার কথা বলে ও সেই ব্যবসায়ী অংশীদার রাখার আশ্বাসে বিভিন্ন সময়ে তার কাছ থেকে ১৩ লাখ ১৭ হাজার ৫৯০ টাকা ধার নেন মিম ও ওবাইদুল্লাহ। গেল বছরের ২ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত উল্লেখিত টাকা ধার নেন তারা।

এজাহারে বলা হয়, বিশ্বাসের কারণে দলিল ছাড়া লেনদেন হলেও পরে দলিল করতে চাইলে তারা টালবাহানা শুরু করেন। সর্বশেষ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি টাকা ফেরত চাইলে তারা পাওনা টাকা ফেরত দেবেন না বলে মনিরুজ্জামান ওরফে বাবুকে প্রাণনাশের হুমকি দেন।

এজাহারে মনিরুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জেনেছি দুলাভাই বলে পরিচয় দিলেও ওবাইদুল্লাহ মূলত মিমের ৪র্থ স্বামী। তারা দু'জন পরিকল্পিতভাবে আমাকে প্রতারণার জালে ফেলে। এর আগেও অনেকের সঙ্গে এমনটা করেছে। উপায় না পেয়ে এক পর্যায়ে আমি পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করি। আশা করছি, আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে এ বিষয়ে সুষ্ঠু বিচার পাব।

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতারণার মামলায় আমরা তাদের গ্রেপ্তার করেছি। তিনি কোন দল করেন সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। এজাহারভুক্ত আসামি এটাই বড় পরিচয়। আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এ বিষয়ে পাবনা জেলা যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী অ্যাডভোকেট আরেফা খানম শেফালী বলেন, আফসানা মিম ওরফে মিম খাতুন পাবনা পৌর যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি। তার প্রতারণা ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি জেনেছি। এজন্য দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি রওশন আলী বলেন, ভুক্তভোগী এই প্রতারণার অভিযোগ পাবনা থানাতে নয় গুলশান থানায় করেছেন। সেই আলোকে গুলশান থানা পুলিশ আমাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে অভিযানের বিষয়ে। আমরা যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে মিম ও তার স্বামীকে শহরের রাঘবপুর এলাকা থেকে আটক করেছি। তবে মামলার বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক মানুষ অভিযোগ করে বলেন, মিম ও তার স্বামী ওবাইদুল বহু মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ আয় করে থাকেন। তারা একে অপরকে নতুন গ্রাহকদের কাছে ভাইবোন অথবা দুলাভাই-শালিকা পরিচয় দিয়ে থাকেন। অবিবাহিত বলে কৌশলে অর্থ নিয়ে আর ফেরত দেন না।

সুন্দর চেহারা বলে অনেকেই প্রেমের ফাঁদে ফেলে সম্পর্ক করে মিম দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতারণা করে আসছেন বলে জানান তারা। তাই আইনগতভাবে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন এলাকাবাসী।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।