ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক একেএম সামসুজ্জোহার মৃত্যুবার্ষিকী আজ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪
ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক একেএম সামসুজ্জোহার মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নারায়ণগঞ্জ: বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, ভাষাসৈনিক, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও স্বাধীনতা পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত জননেতা একেএম সামসুজ্জোহার ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি)। ১৯৮৭ সালের এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেন।

একেএম সামসুজ্জোহা ছিলেন একাধারে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, গণপরিষদের সদস্য ও স্বাধীনতা পরবর্তী জাতীয় সংসদ সদস্য। তিনি নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম জননেতা খান সাহেব ওসমান আলীও ছিলেন একজন ভাষাসৈনিক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাবেক এমএনএ।  

ঐতিহ্যবাহী এই পরিবারের আদিনিবাস নারায়ণগঞ্জের ‘বায়তুল আমান ভবন’ আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার বীজবপন করা হয়েছিল। মহান ভাষা আন্দোলনের সময় এই বায়তুল আমান ভবনে পুলিশ ঢুকে ওসমান পরিবারের সদস্যদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছিল।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীতেও উঠে এসেছে ভাষা আন্দোলনে এই বায়তুল আমান ভবন ও ওসমান পরিবারের ত্যাগের কথা।  

বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম তথা স্বাধীনতাযুদ্ধের সনদ ‘৬ দফা আন্দোলন’র গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সঙ্গে সামসুজ্জোহার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু নারায়ণগঞ্জ বালুর মাঠে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় ছয় দফার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই জনসভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন একেএম সামসুজ্জোহা। ওই দিন ছয় দফার প্রতীক হিসেবে ছয়টি কবুতর উড়িয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। পাশাপাশি মশাল জ্বেলে মুক্তির শপথ নেন নেতা-কর্মীরা।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের শরণার্থী শিবিরে সামসুজ্জোহা ‘ত্রাণবন্ধু’ নামে পরিচিত ছিলেন। এই জননেতা সর্বপ্রথম ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং বাংলাদেশ বেতারের মাধ্যমে বিজয়ের বার্তা প্রচার করে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। সেদিন অপরাহ্নে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে আটক বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে মুক্ত করতে গিয়ে তিনি হাতে গুলিবিদ্ধ হন।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জের একটি সুধী সমাবেশে ঘটনাটি নিজে বর্ণনা করেছিলেন এবং মহান জাতীয় সংসদেও তিনি এই ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের ত্যাগ-তিতীক্ষার কথা স্মরণ করে বক্তব্য দিয়েছিলেন।

সামসুজ্জোহার বড় ছেলে সাবেক এমপি প্রয়াত নাসিম ওসমান বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ নিতে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট নববধূকে রেখেই প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর সামসুজ্জোহাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি ও শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী একই সেলে বন্দি ছিলেন। সামসুজ্জোহা ছিলেন ওই নৃশংস ইতিহাসের অন্যতম সাক্ষী।  

প্রয়াত সামসুজ্জোহার মেঝ ছেলে বিকেএমইএর সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান ও ছোট ছেলে একেএম শামীম ওসমান একাধিকবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় সামসুজ্জোহাকে ২০১২ সালে স্বাধীনতা পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করা হয়।  

সামসুজ্জোহার সহধর্মিণী ও রত্নগর্ভা প্রয়াত নাগিনা জোহাও ছিলেন ভাষাসৈনিক। তিনি ২০১৬ সালের ৭ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।  

একেএম সামসুজ্জোহার ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মরহুমের পরিবার এবং নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন মঙ্গলবার দিনভর কর্মসূচি পালন করবে।

দিনব্যাপী পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, শোক র‌্যালি, কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও জিয়ারতের পাশাপাশি প্রয়াত একেএম সামসুজ্জোহা ও প্রয়াত বেগম নাগিনা জোহার রুহের মাগফেরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪
এমআরপি/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।