ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ আশ্বিন ১৪৩২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৭

জাতীয়

মিয়ানমারের ‘পালিয়ে আসা’ সৈন্যদের নিয়ে কী ভাবছে বাংলাদেশ?

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:০৫, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪
মিয়ানমারের ‘পালিয়ে আসা’ সৈন্যদের নিয়ে কী ভাবছে বাংলাদেশ? ফাইল ছবি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কিছু দিন ধরে দেশটির সামরিক জান্তার বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির তীব্র লড়াই চলছে। এ লড়াইয়ে জান্তার বাহিনীর পরাজয়ের খবর যেমন আসছে, বিপরীতে এলাকার পর এলাকা আরাকান আর্মির দখলে চলে যাওয়ার খবর মিলছে।

রাজ্যটিতে তাদের অভ্যন্তরীণ সংঘাত-সংঘর্ষে বারবার বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এবারের সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে জান্তার বাহিনীর সদস্যরা। অস্ত্রসহ বাংলাদেশে ঢুকে পড়া এই সামরিক সদস্যদের নিয়ে বাংলাদেশ সরকার কী ভাবছে, সেটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে চলছে আলোচনা।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘদিনেও মিয়ানমার যখন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়নি, তখন আবার সাম্প্রতিক সহিংসতা নতুনভাবে ভাবিয়ে তুলেছে বাংলাদেশকে। বিশেষ করে অস্ত্রধারী সৈন্যদের পালিয়ে আসার ঘটনা বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যেসব প্রশ্ন উঠেছে তার মধ্যে রয়েছে- ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা নিধন ও বাংলাদেশে জোরপূর্বক পাঠানোর ঘটনায় ওইসব সৈন্যের ভূমিকা আছে কি না? এছাড়া তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্থিরতা সৃষ্টি কিংবা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গুপ্তচরবৃত্তি করছে কি না। এসব প্রশ্ন সামনে নিয়ে আশ্রিত সৈন্যদের পরিচয় খতিয়ে দেখে এরপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশকে।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত জানুয়ারির মধ্যভাগ থেকে রাখাইনে আরাকান আর্মি ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে চলে আসা সংঘর্ষে জান্তার অনুগত প্রায় ৩৫০ জন সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে এসে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে মূলত সেদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিজিপির সদস্যই সর্বাধিক। এই বিজিপি সামরিক জান্তার পরিচালিত ও অনুগত। তাই তাদের পুরোনো কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

গত ২০১৭ সালের ২৪ ও ২৫ আগস্ট সামরিক জান্তা বাহিনী এবং এই বিজিপি বাহিনীর সদ্যস্যরা একত্রে অংশ নেয় রোহিঙ্গা নিধনে, যার ফলে এখনো বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসে আছে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। যেসব সৈন্য ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা নিধনে অংশ নিয়েছিল, পালিয়ে আসা এই সামরিক সদ্যসদের মধ্যে তাদের থাকার সম্ভাবনা প্রবল বলে অনেকে মনে করছেন।

এছাড়া পালিয়ে আসা সৈন্যরা জানেন যে, কারা ওই রোহিঙ্গা গণহত্যায় অংশ নিয়েছিল বা তাদের নাম-পরিচয় কী, যে কারণে আরাকান আর্মি তাদের ওপর ক্ষিপ্ত। কেউ কেউ মনে করছেন, দুরভিসন্ধি আছে বলেই মিয়ানমারের এসব সৈন্য দেশ না বাঁচিয়ে নিজেরা প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন।

আরও একটি প্রশ্ন ভাবিয়ে তুলছে বিশ্লেষকদের। তাদের ধারণা, পালিয়ে আসা সৈন্যদের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে সামরিক জান্তা সরকারের গুপ্তচর। এরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন কাজ করে আসছে এবং রোহিঙ্গাদের না ফেরানোর এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া সীমান্তে তারা অস্থিরতা তৈরির কূটকৌশলও করতে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৈন্যদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার তাড়াহুড়ো করলেও ঢাকার তাড়াহুড়ো করা যাবে না। তারা আদৌ বর্ডার গার্ড পুলিশের সদস্য কি না, এটা নিশ্চিত হতে হবে। এদের মধ্যে কেউ গুপ্তচর আছে কি না, তা যাচাই করতে হবে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই।  

বিশেষজ্ঞদের মতে, এদের মধ্যে এমন কেউ ঢুকে পড়তে পারে, যারা বাংলাদেশে ঢুকে নানা ধরনের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য নিয়ে বিদেশে অপপ্রচার করতে পারে। কেউ কোনো সন্ত্রাসী দলের সদস্য হলে সেটা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের প্রশ্ন হতে পারে।  

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, আশ্রিতদের মধ্যে কেউ মানবাধিকার লঙ্ঘন বা যুদ্ধাপরাধের মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত কি না, সেটাও নিশ্চিত হতে হবে। তা না হলে তিনি ফিরে গিয়ে একই ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারেন।

এই পরিস্থিতিতে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সামরিক সদস্যদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কী সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এমন আলোচনায় নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের একটি অংশ বলছেন, সরকারে উচিত হবে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় এসে এই দলটিকে সমূলে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া। কিন্তু এতে বিপদ কমবে না। তাই ফেরত পাঠানোর আগে তাদের নিয়ে তদন্ত করা দরকার।

যদিও অধিকাংশ বিশ্লেষক মনে করেন, বাংলাদেশের উচিত হবে না এত সহজে ব্যাপারটার মীমাংসা করে ফেলার। তারা মনে করেন, সরকারের উচিত হবে পালিয়ে আসা এই বার্মিজ সেনা-সদ্যস্যদের পরিচয় নিশ্চিত করা, ২০১৭ এর ২৪ ও ২৫ আগস্টে তাদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা। যদি রোহিঙ্গা গণহত্যা এবং জাতিগত উচ্ছেদে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বিচারের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনে জাতিসংঘ অথবা আইসিজে বা আইসিসির সহায়তাও চাইতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।