ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গফরগাঁওয়ে বন্ধ ইটভাটা চলছে নাম পরিবর্তন করে, এলাকাবাসীর ক্ষোভ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪
গফরগাঁওয়ে বন্ধ ইটভাটা চলছে নাম পরিবর্তন করে, এলাকাবাসীর ক্ষোভ

ময়মনসিংহ: সরকারি নীতিমালা বা প্রশাসনের আদেশ-নিষেধ মানছে না ময়মনসিংহের অবৈধ ইটভাটা মালিকরা। হাইকোর্টসহ স্থানীয় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই প্রকাশ্যে অবৈধ ভাটায় চলছে পরিবেশ দূষণ।

   

এমনই ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ১০ নম্বর উস্থি ইউনিয়নের সানজিব গ্রামে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।    

সূত্র জানায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই উপজেলার সানজিব গ্রামে সততা ব্রিকস ফিল্ডটি অবৈধভাবে পরিচালনা করায় আশপাশের ফসলি জমি নষ্ট ও পরিবেশ দূষণের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনে অভিযোগ করে প্রতিকার না পাওয়ায় হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা। এরপর হাইকোর্ট অভিযোগটি আমলে নিয়ে ২০২৩ সালের ৬ জুলাই স্থানীয় প্রশাসনকে ওই অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেন।  

ওই নির্দেশ পেয়ে গফরগাঁও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) গত বছরের ৬ জুলাই সততা ব্রিকস ফিল্ডের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ইটভাটাটি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মনির হোসেনের কাছে জিম্মা রেখে আসেন।  

এতে সংক্ষুব্ধ ইটভাটা মালিক মো. আলী আশরাফ ইটভাটা বন্ধের দুইদিন পর গত বছরের ৯ জুলাই পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল আবেদন করেন। কিন্তু আবেদনকারীর মালিকানাধীন সততা ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকায় ওই বছরের ২ আগস্ট সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সিদ্ধার্থ শংকর কুণ্ডুর আপিলটি গ্রহণ না করে ফেরত পাঠিয়ে দেন।    

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আশরাফুল আলম জানান, এ ঘটনায় সততা ব্রিকস ফিল্ডের মালিক মো. আলী আশরাফ তার ইটভাটাটি তিন থেকে চার মাস বন্ধ রেখে শুধুমাত্র নাম পরিবর্তন করে ফের ইটভাটার কার্যক্রম শুরু করেন। এ ঘটনায় ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে অবৈধ ইটভাটাটি পুনরায় বন্ধের দাবি জানিয়ে লিখিত আবেদন করা হয়। কিন্তু ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো ইটভাটাটি প্রকাশ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করে পরিবেশ দূষণ করে চলেছে।      

জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাতেমা জান্নাত বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাটি নিয়ে জেলা প্রশাসন থেকে তদন্ত চলমান আছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন তারা।    

তবে ঘটনাটি জানেন না বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মেজ বাবুল আলম। তিনি বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই, তবুও খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

এদিকে অভিযোগ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করেও সততা ব্রিকস ফিল্ডের মালিক মো. আলী আশরাফের বক্তব্য জানা যায়নি।  

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক দিলরুবা আহমেদ বলেন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৯৩টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৪১৩টি ইটভাটা অবৈধ এবং বৈধ ইটভাটার সংখ্যা মাত্র ৮০টি। তবে অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এবং মামলা দায়ের করে ইতোমধ্যে বিভাগের ৬২টি ইটভাটা বন্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় বন্ধ করা হয়েছে ১০টি অবৈধ ইটভাটা।  

তবে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার পর নাম পরিবর্তন করে আবারও কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।