ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভাইয়ের প্রতারণায় নিঃস্ব প্রবাসফেরত নেপাল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪
ভাইয়ের প্রতারণায় নিঃস্ব প্রবাসফেরত নেপাল

ফরিদপুর: ১৭ বছর মালয়েশিয়ায় প্রবাস জীবন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে ফিরে আপন ভাইদের প্রতারণার শিকার নেপাল চন্দ্র কাপাশিয়া (৪৬)।

প্রবাসে থাকা অবস্থায় উপার্জন করা ৩৬ লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন দেশে তার আপন বড় ভাই দুলাল কাপাশিয়ার কাছে।

পরে দেশে ফিরে সেই টাকার হিসেব চাইলে উল্টো তাকে ও তার স্ত্রীকে মারপিট করে বাড়ি থেকে বের করে দেন তারা। এ ঘটনায় থানায় মামলা করলেও প্রতিকার মিলছে না কোনো। একমাত্র শিশু সন্তানকে নিয়ে বিচারের আশায় তিনি এখন পথে পথে ঘুরছেন। ফিরতে পারছেন না বসতভিটায়।

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জীবনের এই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে এর বিচার দাবি করেন নেপাল। এসময় তার স্ত্রী ইতি লতা মণ্ডল ও চার বছরের ছেলে চিত্র কাপাশিয়া সঙ্গে ছিলেন।  

নেপাল চন্দ্র ফরিদপুরের আলিয়াবাদ ইউনিয়নের পাটপাশা গ্রামের বাসিন্দা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নেপাল চন্দ্র কাপাশিয়া জানান, মৃত পবন চন্দ্র কাপাশিয়ার চার সন্তান তারা। ভাগ্য ফেরানোর আশায় তিনি ১৯৯৪ সালে মালয়েশিয়া যান। সেখানে টেক্সটাইল মিলে শ্রমিকের কাজ করতেন। তখনো বিয়ে করেননি। বিদেশ থেকে উপার্জনের টাকা তিনি দেশে থাকা বড় ভাই দুলাল কাপাশিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠাতেন। পরে ২০১৪ সালে তিনি বিয়ে করেন। মাঝখানে ছয় বছর দেশে থেকে আবার বিদেশে যান। আবার ২০১৭ সালে দেশে ফিরেন। এরপর বিদেশ থেকে পাঠানো টাকার হিসাব চাইলে শুরু হয় বিবাদ। এলাকার চেয়ারম্যান ও স্থানীয়রা এ নিয়ে সালিশ মীমাংসাও করেন। সেখানে সর্বশেষ দুলালকে অনুরোধ জানানো হয় কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা ফেরত দিতে। তিনদিন পরে সেই টাকা দেওয়ার কথা হলেও সেই টাকাও আর দেননি। এরপর ওই টাকা চাইতে গেলে ভাই-ভাতিজাদের নিয়ে দুই দফায় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দুলাল কাপাশিয়া হামলা করে জখম করে নেপালকে। তার স্ত্রীর ৭৫ হাজার টাকা দামের গহনা ছিনিয়ে নেয় তারা। এ নিয়ে নেপাল কাপাশিয়া ও তার চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী বিউটি বিশ্বাস থানায় দুটি মামলা করেন। ওই মামলায় এ পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। অন্যদিকে, প্রবাস জীবনের সব উপার্জন হারিয়ে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে বাড়িতে থাকতে হচ্ছে তাদের।  

নেপালের স্ত্রী ইতি লতা মণ্ডল জানান, বিয়ের পরেও দুই বছর বড় ভাইয়ের কাছে টাকা পাঠাতো আমার স্বামী। এখন শিশু ছেলেকে নিয়ে যাযাবরের মতো দিন কাটাতে হচ্ছে। আমার আর সংসার গোছানো হলো না। তিনি আরও জানান, বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা দিয়ে বড় ভাই দুলাল কাপাশিয়া কিছু জমি কিনে। তাদের বাবার ভিটের একপাশে ঘর তুলে থাকতে বলেছিল। এখন সেই ভিটাতেও যেতে দিচ্ছে না। তিন ভাই একজোট হয়ে এখন তার স্বামীকে বাড়িতে যেতে দিচ্ছে না।  

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, নেপাল কাপাশিয়ার টাকা আত্মসাৎ করে তার ভাই জমিজমা কিনেছেন। বাজারে রড-সিমেস্ট ও শেয়ারের ব্যবসা করছেন দুলাল কাপাশিয়া।

এ ব্যাপারে জানতে দুলাল কাপাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে কথা হয় তার স্ত্রী পূর্ণিমা কাপাশিয়ার সঙ্গে। পূর্ণিমা বলেন, নেপাল কাপাশিয়া যে কয়বার বিদেশ গেছে আমার স্বামীও তাকে টাকাপয়সা দিয়েছিল। উনি এখন হিসাব দিতে পারছেন না। হামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, জমি মাপার সময় উল্টো লোকজন নিয়ে নেপাল কাপাশিয়া হামলা করেন।  

এ বিষয়ে আলিয়াবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওমর ফারুক বলেন, সালিশের মাধ্যমে নেপাল কাপাসিয়াকে পাঁচ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু একান্নবর্তী পরিবার হওয়ায় তাদের মা টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি করে। এজন্য ওই টাকা আর ফেরত পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে নেপালের পরিবার ভোগান্তিতে রয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এসএম রিয়াদুজ্জামান বলেন, ভাইয়ে ভাইয়ে টাকা পয়সা ও জায়গা জমি নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে দুই পক্ষ থেকেই পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।