ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘আমার পোলায় বাঁইচা আছে নাকি মইরা গেছে জানি না’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩
‘আমার পোলায় বাঁইচা আছে নাকি মইরা গেছে জানি না’ ছবিগুলো তুলেছেন স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মিরাজ মাহবুব ইফতি।

ঢাকা: তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের তিনটি বগিতে আগুনের ঘটনায় মা–শিশুসহ চারজন নিহত হয়েছেন। আহতও হয়েছেন বেশ কয়েকজন।

ভুক্তভোগীদের কয়েকজন ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন। তাদের খুঁজে ফিরছেন স্বজনরা।

এমন একজন মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী বকুল আক্তার খাতুন (৬০)। ছেলেকে খুঁজছেন তিনি। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।

কান্না করতে করতে বকুল বলছিলেন, ‘আমি আমার পোলারে পাইতাসি না। আল্লাহই জানে আমার পোলায় বাঁইচা আছে নাকি মইরা গেছে। আমি জানি না। ট্রেনের থোন নামার পর আর তারে দেখতাছি না। ধোঁয়ায় চোখে কিছু দেখতেছিলাম না। নাতিনরে কোলে নিয়া ট্রেন থেকে নাইমা আইসি। ’

জানা গেছে, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে ট্রেনে ওঠেন বকুল আক্তার। সঙ্গে ছিলেন তার ছেলে খোকন মিয়া (২২) ও নাতনি। গ্রামের বাড়ি মধ্যনগর থেকে যাচ্ছিলেন নারায়ণগঞ্জ। পথেই ট্রেনে আগুনের ঘটনা ঘটে।

অগ্নিকাণ্ডের বর্ণনা নিয়ে বকুল আক্তার জানান, ভোরে তারা ট্রেনের আগুন টের পান। চারদিক ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল। যে কারণে তারা কিছু দেখতে পাচ্ছিলেন না। খোকন তাকে বলেছিলেন নাতনিকে কোলে নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে পড়তে। এসময় তিনি তাদের ব্যাগ খুঁজছিলেন । খোকন ও তার স্ত্রী নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্টসে চাকরি করেন।

বকুল বলেন, ট্রেনের থোন নামার পর আমি আমার পোলারে আর খুইজা পাইতাসি না। আমার পোলায় বাঁইচা আছে নাকি মইরা গেছে জানি না। আমারে একটা সাহায্য করেন, আমি বাড়ি যাইমু।

ছবি তুলেছেন স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মিরাজ মাহবুব ইফতিএ ঘটনায় গণমাধ্যম কর্মীরা রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. দিদার আহমদের সঙ্গে কথা বলেছেন। দিদার বলেছেন, নির্বাচন কেন্দ্রিক নাশকতা বড় কথা নয়, এই নৃশংস ঘটনা যারা ঘটায় তারা মনুষ্যত্বহীন। বাংলাদেশের নিরীহ মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করে। দেশের সম্পদের বিরুদ্ধে এ ধরনের কর্মকাণ্ড যারা করে, তারা মানুষ না। তারা বাংলাদেশের মানুষ কিনা, তারা বাংলাদেশকে পছন্দ করো কিনা এ বিষয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। এই ঘটনার রহস্য উদঘাটনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। অতীতে এরকম যে সব ঘটনা ঘটেছে, তার মতোই এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে ক্রিমিনালদের উপস্থাপন করা হবে।

মঙ্গলবার ভোর ৫টা ৪ মিনিটে তেজগাঁও রেলস্টেশনে ট্রেনে আগুনের সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। পরে সংস্থার তিনটি ইউনিট গিয়ে আগুন নির্বাপণ করে। এ সময় এক মা ও শিশুসহ চারজনের মরদেহ উদ্ধার হয়। নিহতরা হলেন- নাদিরা আক্তার পপি (৩৫) ও তার ছেলে ইয়াসিন (৩)। দুজনের পরিচয় জানা যায়নি। তাদের বয়স আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ বছর। তাদের মরদেহ সকাল ৭টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত হবে।

এর আগে, গত ১৩ ডিসেম্বর ভোরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রহল্লাদপুর ইউনিয়নের বনখড়িয়ার চিলাই ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। দুর্বৃত্তরা রেললাইন কেটে ফেলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ওই দুর্ঘটনায় এক যাত্রী নিহত এবং ট্রেনের লোকোমাস্টার ও সহকারী লোকোমাস্টারসহ বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩
এমএমআই/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।