ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মজুরি আন্দোলনে নিহতদের ন্যায়বিচার-ক্ষতিপূরণ দাবিতে ৩৭ নাগরিকের বিবৃতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২৩
মজুরি আন্দোলনে নিহতদের ন্যায়বিচার-ক্ষতিপূরণ দাবিতে ৩৭ নাগরিকের বিবৃতি

ঢাকা: পোশাকশ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের অন্যতম নেতা, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেনসহ গ্রেপ্তারকৃত সকল নেতৃবৃন্দ এবং শতাধিক শ্রমিকরে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৩৭ জন বিশিষ্ট নাগরকি।

বিবৃতিদানকারীরা মজুরি আন্দোলনে চলাকালে ‘পুলিশের গুলিতে’ ৩ জন এবং আগুনে পুড়ে ১ জনসহ মোট ৪ জন নিহতসহ এযাবৎকালে মজুরি আন্দোলনে সকল হত্যার ঘটনার তদন্ত এবং নিহতদরে জন্য ন্যায়বিচার এবং এক জীবনের সমান ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

শনিবার (৯ ডিসেম্বর) এই যৌথ বিবৃতি দেন—আনু মুহাম্মদ, শিক্ষক, লেখক ও অর্থনীতিবীদ; হামিদা হোসেন, মানবাধিকার সংগঠক ও আহ্বায়ক শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম; খুশি কবির, প্রধান নিজেরা করি এবং সমাজ সংগঠক; রেহনুমা আহমেদ, লেখক, নৃবিজ্ঞানী; জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ব্যারিস্টার; শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী; তানজিম ওয়াহাব, আলোকিচিত্রী ও কিউরেটর; মাহীন সুলতান, সদস্য নারী পক্ষ; ফরীদা আখতার, নারী আন্দোলন সংগঠক, প্রতিষ্ঠাতা নারী গ্রন্থ প্রবর্তনা; ডা হারুনুর রশীদ, চিকিৎসক ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদ; লায়লা পারভীন, শিক্ষক ও সভানেত্রী, নোয়াখালী নারী অধিকার; দীনা সিদ্দিকী,শিক্ষক নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র; সেউতি সাবুর, শিক্ষক ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়; নাফিসা নিপুণ তানজীম, সহযোগী অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অফ ইন্টারডিসিপ্লিনারি স্টাডিজ, উস্টার স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র; রোজিনা বেগম, মানবাধিকার কর্মী ও উচ্চ শিক্ষার্থী, মাহিডল বিশ্ববিদ্যালয়, থাইল্যান্ড; ড. মির্জা তাসলিমা সুলতানা, শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; ড. সাঈদ ফেরদৌস, শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; মানস চৌধুরী, শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; অমল আকাশ, সাংস্কৃতিক কর্মী; অরুপ রাহী, সংগীত শিল্পী; বিথী ঘোষ, সাংস্কৃতিক কর্মী; ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, শিল্পী; বন্যা মির্জা, নাট্য শিল্পী; ড. নাসরিন খন্দকার, নৃবিজ্ঞানী ও গবেষক; ড. নাসরিন সিরাজ, নৃবিজ্ঞানী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা; সায়েমা খাতুন, লেখক ও গবেষক; ড. সাদাফ নূর, গবেষক, ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য; হানা শামস আহমেদ, পিএইচডি গবেষক, ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা; মাইদুল ইসলাম, পিএইচডি গবেষক, পিট্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র; শ্যামলী শীল, সভাপতি নারী সংহতি, শিক্ষক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়; অপরাজিতা দেব সভাপতি নারী সংহতি, শিক্ষক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়; ঋতু সাত্তার, পারফর্মিং আটিংস্ট; মোশাহিদা সুলতানা, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সাদিয়া চৌধুরী, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী; মাহা মির্জা, শিক্ষক হাজাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়; খন্দকার তানভীর মুরাদ তপু, আলোকচিত্রী; জান্নাতুল মাওয়া, আলোকচিত্রী; তাসলিমা আখতার, সভাপ্রধান , গার্মেন্ট  শ্রমিক সংহতি ও আলোকচিত্রী।

বিবৃতিতে তারা বলেন, পোশাকশ্রমিকদের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবি উঠলেও মজুরি বোর্ড প্রথমে ১০ হাজার ৪০০ এবং সর্বশেষ গত ৭ নভেম্বর মজুরি ১২৫০০ টাকা চূড়ান্ত ঘোষণা দেয় সরকার। যেটি শ্রমিকদের আকাঙ্খাকে ধারণ করে না। একইসাথে এই বাজারে এই মজুরিতে চলা দুরূহ। এ অস্থায় শ্রমিকরা টিকে থাকা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পরে মজুরি পুনর্বিবেচনা ২৫ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ ও স্বতস্ফুর্ত আন্দোলন করে।  অথচ তাদের গণতান্ত্রিক দাবি বিবেচনায় না এনে  উল্টো তাদের উপর যে হত্যা—নির্যাতন,  ১৩ (১) ধারা প্রয়োগে কারখানা বন্ধ রাখা ও শ্রমিকের বেতন না দেওয়া, ছাঁটাইসহ দমন পীড়ন নেমে আসে—যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক বলে অভিমত প্রকাশ করেন বিবৃতিদানকারীরা।

তারা বলেন, মানবাধিকার নিয়ে রাষ্ট্র-সরকার ও মালিক-বায়ার নানা কথা বললেও আদতে পোশাকশ্রমিকদের মানুষ বা নাগরিক মর্যাদাতে তারা গণ্যই করে না। বাংলাদেশের মালিকদের এই খাতে উন্নয়ন এবং বিদেশি বায়াররাও পোশাকখাতের থেকে সিংহভাগ লাভ নিলেও সেসব লাভের অংশীদার শ্রমিকরা হয়নি। মালিক-সরকার ও বায়ারদের দায়িত্বহীনতার কারণে বর্তমান পোশাকশ্রমিকের বেহাল অবস্থা।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাবুল হোসেন দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে পোশাক শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করে আসছেন। তিনি নিজে প্রায় ১৫ বছর পোশাক কারখানায় দক্ষ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তিনি গার্মেন্ট শ্রমিক স্ত্রীকে নিয়ে আশুলিয়া বসবাস করেন। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব হিসাবে কেন্দ্রীয় কাজের মূল সমন্বয় এবং বিভিন্ন শাখা তদারকির কাজ করতেন। তার দুই সন্তান (মধু ৮, ইব্রাহীম ১১) দাদা-দাদির সাথে গ্রামে মাগুরা জেলাতে থাকে। বাবুল শ্রমিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কাজের পাশে টেইলারিং দোকানে উপার্জনের লক্ষ্যে কাজ করতেন। তাদের দুজনার আয়ে পরিবারের ৬ সদস্যর জীবন নির্বাহ হতো। অথচ বর্তমানে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে হয়রানীসহ তার সামাজিক-রাজনৈতিক এবং পারিবারিক জীবনের ক্ষতি সাধন করা হচ্ছে। উল্লেখিত মামলার ঘটনার সাথে কোনো রকম যুক্ততা না থাকা সত্ত্বেও তাকে বিগত ২৬ দিন ধরে গাজীপুর জেলা সদর কারাগারে কারা নির্যাতন ভোগ করতে হচ্ছে। আন্দোলন থেকে বিরত রাখাসহ পারিবারিক-আর্থিকভাবে ক্ষতি সাধন করে মনোবল ভেঙ্গে দেওয়াও এই গ্রেপ্তারের অন্যতম উদ্দেশ্য। ’

বিবৃতিদানকারীরা বলেন, প্রতিবার  মজুরি আন্দোলন গ্রেপ্তার-ছাঁটাই-নির্যাতনে শ্রমিকদের বিপদ বাড়তে থাকে। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানোর মতো নির্মম ঘটনাও ঘটে। এবারও ঘটেছে।

তারা বলেন, যে কোনো অপমৃত্যু বা হত্যার ঘটনায় কোন পরিবারের সদস্য মামলা করতে সমর্থ্য না হলে রাষ্ট্র পক্ষ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করার এখতিয়ার রাখে। এবার মজুরি আন্দোলনে নিহত রাসেলের বাবার মামলা চালানোর সামর্থ্য না থাকায় তিনি মামলা দায়ের করেননি। অন্যদিকে রাষ্ট্র পক্ষও নিহত রাসেলের জন্য বাদী হয়ে  মামলা দায়ের না করলেও আন্দোলনকারীদের দমনে ঠিকিই নানা মিথ্যা মামলার আয়োজন করেছে। বাবুল হোসেনের গ্রেপ্তারের মামলার তারিখ এবং রাসেল হত্যার ঘটনা একই তারিখে সংঘটিত হয়। বাবুলের মামলার এজহার পুলিশের করা।

বিবৃতিদানকারীরা এবারের মজুরি আন্দোলনে ৩ জন শ্রমিককে গুলি করে হত্যার তীব্র নিন্দা জানান। অবিলম্বে এ যাবতকালের নিহত সকল শ্রমিকের জন্য তদন্ত করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের ও মজুরি আন্দোলনে নিহতদের এক জীবনের সমান ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য দাবি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২৩
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।