ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি অপরিবর্তিত রেখে কমানো হলো গ্রেড

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২৩
শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি অপরিবর্তিত রেখে কমানো হলো গ্রেড

ঢাকা: পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা অপরিবর্তিত রেখে গ্রেড কমিয়ে ৫টি থেকে ৪টি করেছে সরকার। ৩ ও ৪ গ্রেড মিলে একটি গ্রেড করা হয়েছে।

রোববার (২৬ নভেম্বর) বিকালে সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে শ্রমিক ও কর্মচারীদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ সংক্রান্ত বোর্ড সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানানো হয়।  

এ সময় ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে সভায় শ্রমিকদের পক্ষে প্রতিনিধি ছিলেন শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনি, মালিকদের পক্ষ থেকে বোর্ডের প্রতিনিধি ছিলেন সিদ্দিকুর রহমান।  
এছাড়া মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ এবং শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সদস্য ও জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।

মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী বলেন, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি খসড়া গেজেট হয়েছিল সেটা নিয়ে শ্রমিক ও মালিক পক্ষে যে আপত্তি দিয়েছিলো। ঘোষিত মজুরি নিয়ে মালিক পক্ষ থেকে ১৭৩টি আপত্তি ও সুপারিশ দিয়েছেন। আর শ্রমিকদের ২৫টি সংগঠন থেকেও আপত্তি ও সুপারিশ করেছে। আমরা আলোচনা করে আজকে চূড়ান্ত করা হয়েছে৷ মজুরিতে ৫টি গ্রেড ছিল সেখান থেকে কমিয়ে ৪টি গ্রেড করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ৪র্থ গ্রেডে সর্বনিম্ন মজুরি ১২ হাজার ৫০০ ছিল সেটা ঠিক রাখা হয়েছে। ৩য় গ্রেডে ১৩ হাজার ২৫ টাকা থেকে ১৩ হাজার ৫৫০ টাকা, ২য় গ্রেডে ১৪ হাজার ১৫০ থেকে ১৪ হাজার ২৭৩ টাকা, প্রথম গ্রেডে ১৪ হাজার ৭৫০ টাকা থেকে ১৫ হাজার ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গত ৭ নভেম্বর মজুরি ঘোষণা করা হয়। এরপর গেজেট করার পর ১৪ দিনের মধ্যে মালিক ও শ্রমিকদের আপত্তি থাকলে জানাতে হয়। সে অনুযায়ী মালিক ও শ্রমিক পক্ষের আপত্তি নিয়ে আলোচনা করেছি। শ্রমিকদের যে মূল দাবিটা ছিলো সেটা হলো, গ্রেড কমানো। আমরা সে অনুযায়ী ৫টি গ্রেড থেকে ৪টি গ্রেড করেছি। ফলে ৩-৪ মিলে একটি গ্রেড করেছি। আমি মনে করি মালিক পক্ষ, শ্রমিক পক্ষ ও নিরপেক্ষ যে সদস্য রয়েছে তাদের সবার সম্মতিতে আজকে মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা সর্বসম্মতিক্রমে নির্ধারিত হয়েছে। এখানে কোনো পক্ষের আর কোনো রকমের আপত্তি নেই।

তিনি বলেন, ১৯৯৪ সালে প্রথম মজুরি বোর্ড হয় তখন বেতন নির্ধারণ হয় ৯৩০ টাকা। ১২ বছর পরে ২০০৬ সালে বেতন হয় ১৬৬২ টাকা। ২০০৯ সালে তিন বছর পরে ৩ হাজার টাকা করা হয়। এরপর নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় তিন বছরের মাথায় ২০১৩ সালে বেতন করা হয় ৫ হাজার ৩০০ টাকা। তারপর ২০১৮ সালে বেতন নির্ধারণ করা হয় ৮ হাজার টাকা। এ বছর সর্বোচ্চ মজুরি বাড়ানো হয়েছে ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গ্রেডগুলো নিয়ে শ্রমিকদের যে আপত্তি ছিল সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে আজকে মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। সবার সহযোগিতায় ৪০ লাখ লোকের একটি খাতের মজুরি নির্ধারণ করতে পেরেছি। একইসঙ্গে সরকারের কাছে শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবি জানাচ্ছি। আমি আশা করছি নির্বাচনের পরে অবশ্যই শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা করা যায় সেই চেষ্টা করবো। পাশাপাশি জেলা প্রশাসকদের অনুরোধ জানানো, বেতন বাড়ানোর সঙ্গে যেন হঠাৎ করে অহেতুক বাড়ি ভাড়া না বাড়ে। সে বিষযে বিশেষ নজর রাখবে। কারণ সবার আগে দেশ তারপর সেক্টর। শ্রমিক বাঁচলে মালিক বাঁচবে আর মালিক বাঁচলে শ্রমিক ও দেশ বাঁচবে।

বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে যে বেতন বাড়ানো হলো সেটা কি পর্যাপ্ত কিনা জানতে চাইলে শ্রমিক নেতা রনি বলেন, আমাদের অধিক সংখ্যাক শ্রমিক চাকরি করে এক থেকে ৩ নম্বর গ্রেডে। এজন্য সর্বনিম্ন যে গ্রেড সেখানে নতুন যারা কাজে যোগ দেয় তাদের জন্য সেটা হলো ৪র্থ। সেখানে বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া বাকি ৩টি গ্রেডে বেতন শুরু হলো ১৩ হাজার ৫৫০ টাকা দিয়ে৷ ৪০ লাখ শ্রমিকের মধ্যে সাড়ে ৩৯ লাখ শ্রমিক কাজ করে এখানে। আমাদের ৫টি গ্রেডের মধ্যে ৩-৪ গ্রেডকে এক করা হয়েছে। ফলে গ্রেড সংখ্যা কমে ৪টি হয়েছে।  

তিনি বলেন, এর ফলে শ্রমিকরা কিছুটা হলেও সুবিধা পাবে। যা বর্তমান বাজার দরের সঙ্গে মিলিয়ে চলতে পারবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ মজুরি মন্দের ভালো হয়ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শ্রমিকরা সন্তুষ্ট থাকবে। এটা আমাদের একদিক থেকে সফলতা। তবে আমাদের আবেদন থাকবে রেশনিং কার্ড আসার আগে যেন টিসিবির কার্ড দেওয়া হয়। যত দ্রুত সম্ভব এটা করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২৩
জিসিজি/জেএইচ 


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।