ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শীত এলেই বাড়ে আতঙ্ক, রাতে বসাতে হয় পাহারা

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২৩
শীত এলেই বাড়ে আতঙ্ক, রাতে বসাতে হয় পাহারা

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার পদ্মানদী বেষ্টিত চরজানাজাত ইউনিয়ন। পদ্মার ভাঙনে ইউনিয়নটির ভূ-খণ্ডের বেশির ভাগই বিলীন হয়ে গেছে।

সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এই চরে কমপক্ষে তিন শতাধিক লোকের বসবাস।

শুকনো মৌসুমে গবাদিপশু পালনের জন্য এই চর এলাকা বেশ উপযুক্ত। তাই এই এলাকার প্রায় অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিটি পরিবারই একাধিক গবাদিপশু লালনপালন করে থাকেন।  

কোরবানিকে সামনে রেখে অধিকাংশ পরিবার ষাঁড় গরুর পাশাপাশি গাভিও পালন করেন। তবে শীত মৌসুম এলেই আতঙ্ক শুরু হয় চর এলাকায়। কারণ প্রায় রাতে ডাকাতদল হানা দেয় গরু নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য।

চরবাসীর অভিযোগ, পদ্মা নদীতে ট্রলার যোগে ডাকাতদল এসে গোয়ালঘর থেকে গরু নিয়ে ট্রলারে করে পালিয়ে যায়। মুন্সীগঞ্জের লৌহজংসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ডাকাত এসে হানা দেয় এ চর এলাকায়। এ কারণে প্রতি বছরই পাহারা বসাতে হয় চরের বাসিন্দাদের। বিগত বছরগুলোতে গরু চুরির একাধিক ঘটনাও ঘটেছে। তাই শীত এলেই বাড়ে আতঙ্ক!।

জানা গেছে, গত রোববার (১৯ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে চরজানাজাত ইউনিয়নের কান্দি গ্রামে টিটু সরকারের বাড়িতে গরু ছিনতাইয়ের জন্য হানা দেয় দুর্বৃত্তরা। বিষয়টি টের পেয়ে প্রতিবেশী এক যুবক এগিয়ে গেলে ১৫/২০ জনের মধ্যে চারজনকে চিনতে পারে। এসময় রায়হান নামের ওই যুবককে কুপিয়ে জখম করে ডাকাত দলের সদস্যরা। লৌহজং থেকে ট্রলার নিয়ে এসে গরু ছিনতাই করে বলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় শিবচর থানায় মামলাও হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, চর এলাকার বাড়িঘর বেশ ফাঁকা ফাঁকা স্থানে। ঘনবসতি নেই। প্রতিটি বাড়িতেই গরু-ছাগল রয়েছে। বসতঘরগুলো বিচ্ছিন্নভাবে থাকায় ডাকাতদল সহজেই ডাকাতি করতে পারে। নদীতে ট্রলার রেখে গ্রাম থেকে গরু-ছাগল নিয়ে যায়। প্রতি বছরই এমন ঘটনা ঘটে থাকে। এই এলাকার কৃষকদের সম্বল এই গবাদি পশু। লাখ টাকার গরু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় অনেকেই। এ কারণে গত শীত মৌসুমে ১০/১৫ জনের একেক দল করে পাহাড়ায় থাকতে হয় ডাকাতি রোধে।

স্থানীয় কৃষক টিটু সরকার বলেন, গত ১৯ নভেম্বর রাতে আমার গরু নিয়ে যাচ্ছিল ডাকাতদল। চরের মানুষ রাত ৮টার মধ্যেই ঘুমিয়ে যায়। রাত ১১টার দিকে আমার ভাতিজা রায়হান বাইরে এসে দেখে গরুর বাঁধন ছাড়া। বাড়ির বাইরে হাঁটছে। এসময় ঘরের পেছনে লোকজনের শব্দ পেয়ে লাইট দিয়ে দেখি ১০/১৫ জন। আমার ভাতিজা তাদের চিনে ফেলার কারণে তাকে কুপিয়ে আহত করে ডাকাতদল।

সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চরে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের দাবি জানান চরের মানুষেরা। চরজানাজাত নৌ পুলিশ ফাঁড়িটি এই চরে হলেও চুরি-ডাকাতি রোধ হতো বলে তারা মনে করেন।

চরজানাজাত ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. নাসির সরকার বলেন, ইউনিয়নটির ১ নম্বর ওয়ার্ড বাদে সবগুলো ওয়ার্ড নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ইতঃপূর্বে। চরের মধ্যে এখনও কিছু বসতি রয়েছে। বিভিন্ন সময় গরু চুরি, ডাকাতি হয়ে থাকে এ এলাকায়।  

শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত গোলদার জানান, অতীতের চেয়ে এখন চর এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। পদ্মার চর এলাকায় আমাদের বিট পুলিশিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পুলিশের একাধিক সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। যেহেতু পদ্মানদীর মাঝে বিচ্ছিন্ন একটি জনপদ। তাই ওখানে ইউপি চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড সদস্যসহ সবার সমন্বয়ে পুলিশ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এর আগে গরু চুরি-ডাকাতি হয়েছে। বর্তমানে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।