ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৬ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

ন্যাশনাল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১২ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১০

ঢাকা : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অবিরাম বর্ষনে কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ।

বন্যা কবলিত মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে।

কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে বিভিন্ন নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পাশাপাশি সিরাজগঞ্জে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে কয়েকটি জেলা থেকে নগদ টাকাসহ জরুরি সাহায্য চাওয়া হয়েছে।

এদিকে, কুমিল্লায় গত দুই দিনের অবিরাম বর্ষণে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কান্দিরপাড় টাউন হল, শিক্ষা বোর্ডের সামনে, ভিক্টোরিয়া কলেজ রোড, নিমতলী, স্টেডিয়াম মার্কেট, বাগিচাগাঁওসহ বিভিন্নস্থানে পানি জমে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। জেলা আবহাওয়া অফিস জানায়, দুপুরে ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ : জেলার সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলা বন্যা আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘন্টায় ৪৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার মাত্র ৬২ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এরইমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের গুনেরগাতী গ্রামে পলিটেকনিক স্কুলের পূর্বদিকে পানি উন্নয়ন  বোর্ডের রিং বাঁধ সংলগ্ন প্রায় ৫০ ফুট রাস্তা বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে।
 
এদিকে, বন্যার আগেই চৌহালী উপজেলা সদরে যমুনা নদীর ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ১০/১২ দিনে খাস-কাউলিয়া বাজারের এক-তৃত্বীয়াংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে উপজেলা পরিষদ যমুনা নদীর ১০ মিটার দূরে অবস্থান করছে। সিরাজগঞ্জ সদর ও কাজিপুর উপজেলার পাউবো’র বাঁধে বন্যা কবলিত মানুষ আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।

জেলা ত্রাণ ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা অজিত কুমার বিশ্বাস জানান, চৌহালী উপজেলার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। উপজেলা পরিষদ রা করা কঠিন। চৌহালী ও সদর উপজেলায় গত ২ দিনে প্রায় ৩০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

গাইবান্ধা : গত ৫ দিনের অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে গাইবান্ধার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা করতোয়া, আখিরা ও ঘাঘট নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে গাইবান্ধা শহররা বাঁধের পশ্চিম কোমরনই এলাকা।

গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মীর মোশারফ হোসেন জানান, মঙ্গলবার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, গাইবান্ধা শহররা বাঁধসহ বিভিন্ন বাঁধ রায় দ্রুত পদপে নেয়া হবে।

কুড়িগ্রাম: ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। কুড়িগ্রাম সদর, রৌমারী, রাজিবপুর, চিলমারী ও উলিপুর উপজেলায় নতুন করে প্লাবিত হয়েছে ৭৬টি গ্রাম। গত দু’দিনে এসব উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের দু’শতাধিক গ্রাম পাবিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের ২ লাধিক মানুষ। মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে গবাদি পশু-পাখি নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে শুরু করেছে।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ৩০ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্র নদে ৫৫ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ধরলায় গত ২৪ ঘন্টায় ২৪ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে।   দুধকুমারের পানি ৩৫ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপসীমার সামান্য নীচে রয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, বন্যাদুর্গত মানুষের সহায়তায় ৫০০ মে. টন চাল, ২০ লাখ টাকা, ১০ লাখ টাকা গৃহ নির্মাণ মঞ্জুরি ও ১০ হাজার পিস শাড়ী-লুঙ্গি চাওয়া হয়েছে।

সুনামগঞ্জ : তিন দিনের টানা বর্ষণের পর আজ মঙ্গলবার বৃষ্টি না হওয়ায় সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ৪ সেন্টিমিটার কমেছে। তার পরেও বিপদসীমার ৬২ সেন্টিমিটার ওপর রয়েছে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা শহরের মাছবাজার ও সাহেববাড়ির ঘাটসহ বিভিন্ন রাস্তা এরইমধ্যে প্লাবিত হয়েছে।

হবিগঞ্জ : কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারী  বৃষ্টিপাতের কারনে হবিগঞ্জসহ জেলার বিভিন্নস্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। হবিগঞ্জের বিভিন্ন  স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।  

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় হবিগঞ্জে ২১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার  সকাল ৯টায় নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে কোথাও ভাঙ্গনের খবর পাওয়া যায়নি।

জামালপুর : যমুনার অব্যাহত পানির তোড়ে ইসলামপুর উপজেলার পাথর্শী-কুলকান্দি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় প্রায় ৪০০ মিটার অংশ ভেঙ্গে দুটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার আখ, পাটসহ মৌসুমী ফসলি জমি।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৭ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১০
প্রতিনিধি/এনএস/এএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।