ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কাফরুলের চিকিৎসক এ্যানির মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ে ভিসেরার জন্য অপেক্ষা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১০

ঢাকা : কাফরুলের নিজ ফ্যাটে চিকিৎসক নিগার সুলতানা এ্যানির (৩২) অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শনিবার ভোরে তার মৃতদেহ উদ্ধারকারী কাফরুল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন ধারণা করছেন, এ্যানি শরীরে ইনজেকশন পুশ করে আত্মহত্যা করেছেন।

কিন্তু ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকদের সূত্র জানায়, মৃতের গলায় কালো দাগ ছিল, সারা শরীর ছিল ফোলা অবস্থায়।
 
এসব ব্যাপারে তার স্বজন-পরিজনরা কেউ কোনো কথা না বলায় স্পষ্টভাবে কিছু জানা যাচ্ছে না। নিগার সুলতানা এ্যানির মৃত্যুর কারণ আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ থেকে শরীরের প্রয়োজনীয় অংশ মহাখালী ভিসেরা পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

নিগার সুলতানা এ্যানি এমবিবিএস পাশ করার পর চার বছর আগে সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রের ডাক্তার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। ২৭তম বিসিএস ক্যাডারভূক্ত হওয়ার পর তিনি যোগ দেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে গাইনী বিভাগের ইউনিট-১ এর সিএ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। দাপ্তরিক নির্দেশনায় নিগার সুলতানা এ্যানি ঢাকায় ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণে যোগ দেন।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সহকর্মী চিকিৎসকদের সূত্রে জানা যায়, এ্যানি আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই তার স্বামীর কাছে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রশিক্ষণের কারণে মাঝে-মধ্যেই তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাতায়াত ও অবস্থান করতেন। সেখানে সহকর্মীদের সঙ্গে তার চমৎকার সম্পর্ক ছিল বলেও জানা গেছে।

দু’বছর আগে আশরাফুল ইসলাম নামে এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। আশরাফুল বর্তমানে উচ্চ শিক্ষার্থে অষ্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন। সর্বশেষ তিনি মাত্র আড়াই মাস আগে অস্ট্রেলিয়ায় যান।

নিগার সুলতানার পিতার নাম মৃত এস্তার হোসেন। মায়ের নাম সিতারা বেগম। তাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ি থানার প্রেমতলী সীমান্ত এলাকায়। এক ভাই এক বোনের মধ্যে নিগার সুলতানা এ্যানি ছোট। বড় ভাই মোহাম্মদ ইফতেখার হোসাইন সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইমিগ্রেশন-১ এর দায়িত্বে আছেন। গত বুধবার তিনি মায়ের সঙ্গে হজ করতে সৌদি আরব গেছেন।

কাফরুল থানার ২৭০ সেনপাড়া পর্বতার ৬ তলা ভবনটি নিগার সুলতানা এ্যানিদের পৈতৃক বাড়ি। এ ভবনের এ-৪ নম্বর ফ্যাটে তার মা সিতারা বেগম বাস করেন। ঢাকায় প্রশিক্ষণ সূত্রে এ্যানি মায়ের সঙ্গেই থাকতেন। ওই ফ্যাট থেকেই তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

শনিবার বিকেলে সেনপাড়া পর্বতার ওই বাসায় গিয়ে ফ্যাটের প্রধান দরজা তালাবদ্ধ দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিবেশীরা তার মৃত্যুর ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারেননি।

প্রতিবেশি মোতালেব হোসেন (৫৫) বাংলানিউজকে জানান, এ্যানি গত বুধবার হজ করতে যাওয়া মা ও ভাইকে বিমানবন্দরে বিদায় জানিয়ে বাসায় ফেরেন। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলেও তাকে ফ্যাটের সামনে দেখা গেছে। কেমন আছো মা- জিজ্ঞাসা করেও এ্যানির কাছ থেকে কোনোরকম জবাব পাননি মোতালেব হোসেন।

এ্যানিদের বাড়ির অপর ফ্যাটের এক বাসিন্দা নিজের নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত এ্যানির ফ্যাটে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। তাদেরই এক আত্মীয় কয়েকবার বাসায় এসে কলিংবেল টিপেও কোনো সাড়া না পেয়ে মধ্যরাতে কাফরুল থানায় বিষয়টি জানান। পরে পুলিশ সেখানে পৌঁছে ফ্যাটের দরজার তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে এবং মিস্ত্রির সাহায্যে বেডরুমের দরজা ভেঙে এ্যানির মৃতদেহ দেখতে পায়।

এ ব্যাপারে কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, যে কোনো মানসিক অশান্তি থেকেই অভিজাত পরিবারের সন্তান এ্যানি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।

এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘মৃত্যুর পর বেশকিছু সময় অতিবাহিত হওয়ায় লাশটি ফুলে উঠতে পারে। উচ্চমাত্রার ওষুধ ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে নেওয়ার আগে শ্বাসরোধ করার চেষ্টায় কালো দাগ হয়ে থাকতে পারে। ’

আত্মহত্যা নিশ্চিত করছেন কীভাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘ময়না তদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়া ছাড়া নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না। ’

বাংলাদেশ সময় : ১৯৩৮ ঘণ্টা, ৩০ অক্টোবর, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।