ঢাকা, সোমবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ মে ২০২৪, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আদালত থেকে পালানো এক জঙ্গি ‘অল্পের জন্য হাতছাড়া’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০২৩
আদালত থেকে পালানো এক জঙ্গি ‘অল্পের জন্য হাতছাড়া’

ঢাকা: ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে পলাতক আনসার আল ইসলামের দুই জঙ্গি এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। তাদের ধরতে ধারাবাহিক অভিযান চলছে।

এর মধ্যে একজনকে পাওয়াও গিয়েছিল। কিন্তু ‘অল্পের জন্য হাতছাড়া’ হয় সে।

রোববার (৮ অক্টোবর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

উল্লেখ্য, ‘২২ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশের চোখে-মুখে পিপার স্প্রে করে জঙ্গি সদস্য মইনুল হাসান শামিম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান (২৪) ও আবু সিদ্দিক সোহেলকে (৩৪) ছিনিয়ে নেয় তাদের সহযোগীরা।

এরপর থেকে প্রায় এক বছর ধরে সংগঠনের নেতৃত্বপর্যায়ের সদস্যসহ অনেকেই গ্রেপ্তার হন। কিন্তু ছিনতাই হওয়া দুই জঙ্গি এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সিটিটিসি জানায়, সম্প্রতি একটি বাসায় অভিযান পরিচালনা করেন সদস্যরা। জানা যায়, মাত্র দুদিন আগে আদালত থেকে পলাতক এক জঙ্গি ওই বাসা থেকে চলে গেছে। প্রায় এক মাস ধরে বাসাটিতে অবস্থান করছিল সে।

এদিকে, ধারাবাহিক অভিযানে গতকাল শনিবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন কাজলা এলাকা থেকে আনসার আল ইসলামের নায়েবে আমির ও তার চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। গ্রেপ্তাররা হলেন- নায়েবে আমির সাখাওয়াতুল কবির ওরফে আনিস ওরফে রফিক (৪৫), সংগঠনের আশকারী বিভাগের ঢাকা অঞ্চলের কমান্ডার ইহসানূর রহমান ওরফে মুরাদ ওরফে সাইফ (২৬), বখতিয়ার রহমান ওরফে নাজমুল (৩০), ইউসুফ আলী সরকার (৩১) ও জাহেদুল ইসলাম ওরফে আশরাফ (৩৫)।

এ বিষয়ে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বর্তমান সময়ে জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে আনসার আল ইসলামই সাধারণত সক্রিয়। সংগঠনটি ঘিরে সামনে যে চ্যালেঞ্জ ছিল, সংগঠনের আমিরসহ নেতৃত্বপর্যায়ের ৫ জনকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আমরা তা অনেকটাই নিউট্রল করতে পেরেছি।

গ্রেপ্তারদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।

গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে আদালত থেকে ছিনতাই হওয়া দুই জঙ্গির বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা তাদের নিয়ে কাজ করছি। এরমধ্যে একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে জানতে পেরেছি সেখান থেকে একজন মাত্র দুদিন আগে চলে গেছে। ওই বাসায় সে এক মাসেরও বেশি সময় অবস্থান করছিল।

গ্রেপ্তার পাঁচজনের কাছ থেকেও আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। আরও দুয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে এনে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, কুকিচিনের সহায়তায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রধান শামিন মাহফুজকে আগে আনসার আল ইসলামের সদস্য হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সে জেলখানায় বসে যখন নতুন সংগঠনের পরিকল্পনা করে তখন সমমনা আরও জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ছিল। মতাদর্শ ও পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে তারা একত্রিত হয়ে নতুন নামে কার্যক্রম শুরু করে। এজন্যই পরে আনসার আল ইসলামের পক্ষ থেকে শামিন মাহফুজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

তিনি বলেন, শারক্বিয়ার ৯৫ ভাগেরও বেশি সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছি। নেতৃত্ব পর্যায়ে যারা আছে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা মনে করি শামিন মাহফুজকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে শারক্বিয়ার যবনিকা টানতে পেরেছি। কুকিচিন ও তাদের নেতৃত্বপর্যায়ের সদস্যদের নিয়ে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, আনসার আল ইসলামের বাইরে এখন কোনো সংগঠনের তৎপরতা আছে বলে মনে হয় না। আমাদের কার্যক্রম চলমান। কিছুদিন আগে ইমাম মাহমুদের কাফেলা নামে একটি সংগঠন শারক্বিয়ার মতো পাহাড়ি অঞ্চলে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু সংগঠিত হওয়ার আগেই আমরা তাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। আমরা এমন সংগঠন অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিতে সক্ষম হচ্ছি।

নির্বচন সামনে রেখে আনসার আল ইসলামের পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। তবে এটা ঠিক জঙ্গি সংগঠনগুলো এ পরিস্থিতি কাজে লাগাতে চায়। যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্যান্য কাজে মনোযোগ দেয় তখন তারা সদস্য সংগ্রহসহ সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু এখন আগের মতো পরিস্থিতি নেই, আগে সিটিটিসির মতো ইউনিট ছিল না যারা শুধু জঙ্গিদের নিয়েই কাজ করবে। তবে আমরা তৎপর আছি, গ্রেপ্তারদেরকে তাদের পরিকল্পনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

আনসার আল ইসলামের গ্রেপ্তারদের পরিচয়-
সাখাওয়াতুল কবির: তিনি ২০০২ সালে আনসার আল ইসলামের মাতৃ সংগঠন জামিয়াতুল মুসলিমিনে যোগদানের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ান। আনসার আল ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা এজাজ কারগিলের মাধ্যমে রেডিক্যালাইজড হয়ে সংগঠনে যোগ দেন। এরপর থেকে আমির এজাজ কারগিলের সঙ্গেই থাকতেন। এজাজ কারগিল পাকিস্তানে ড্রোন হামলায় মারা যান। এজাজ কারগিল পাকিস্তানে থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালে কারগিলের মাকে নিয়ে পাকিস্তান গিয়েছিলেন কবির। ২০১৫ সালে ডিবি তাকে গ্রেপ্তার করে। ‘১৮ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার সংগঠনে যুক্ত হয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। অল্পদিনের মধ্যে সংগঠনের সূরা সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। শারক্বিয়ার উত্থানের সময় সাখাওয়াতুলকে আনসার আল ইসলাম থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয় তাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য। এরপর শারক্বিয়ার প্রধান শামিন মাহফুজ ও সাখাওয়াতুলের মধ্যে একাধিকবার মিটিং হয়েছে। আনসার আল ইসলামের পক্ষ থেকে মিটিংয়ের নেতৃত্ব দিতেন সাখায়াতুল কবির। আনসার আল ইসলাম যে শারক্বিয়াকে টাকা দিয়েছিল সেই টাকা এবং মাসিক একটা খরচের টাকাও শামিন মাহফুজকে দিতেন সাখাওয়াতুল।

ইছাননূর রহমান সাইফ: সংগঠনের আশকারী বিভাগের ঢাকা অঞ্চলের কমান্ডার। ’২০ সালে ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেক্সটাইলে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ’১৭ সাল থেকে সংগঠনে সক্রিয় হন তিনি। ২২ সালে তাকে এ অঞ্চলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সাইফ সংগঠনের ফুলটাইম মেম্বার। আত্মগোপনে থেকে আশকারী শাখার অন্য সদস্যদের প্রশিক্ষণ, নতুন সদস্য রিক্রুট কাজগুলো তার নেতৃত্বে হতো।

বখতিয়ার রহমান: সাভারে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন ও হোমিও প্র্যাকটিস করতেন। কিছুদিন আগে সিটিটিসি একজনকে রোগী সাজিয়ে তার বাড়িতে পাঠায়। কিন্তু বিষয়টি বুঝতে পেরে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে সে সবকিছু ফেলে আত্মগোপনে চলে যায়। রোববার অন্যদের গ্রেপ্তারের সময় বখতিয়ারকেও পাওয়া গেছে।

আশরাফ: জয়দেবপুর অঞ্চলের দাওয়াহ বিভাগের প্রধান। ঢাকার আশপাশে আনসার ইসলামের বেশ কয়েকটি সেল রয়েছে। এরমধ্যে সাভার অঞ্চলের একটি সেলের দায়িত্ব ছিল আশরাফের। ’১৫ সালে ঢাকা কলেজে অনার্স পড়াকালীন সংগঠনে জড়িয়ে পড়েন। সম্প্রতি ঢাকার একটি স্কুলে তার নিয়োগ হয়েছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০২৩
পিএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।