ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মানিকগঞ্জে কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাস তথ্য বোর্ডগুলো অকেজো! 

সাজিদুর রহমান রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩
মানিকগঞ্জে কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাস তথ্য বোর্ডগুলো অকেজো! 

মানিকগঞ্জ: প্রান্তিক চাষিদের আবহাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত হয় কৃষি আবহাওয়া বোর্ড প্রকল্প। তবে বর্তমানে সেসব কোনো কাজেই আসছে না।

রেইন গজ মিটার, কিয়স্ক, সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল এখন সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাবে অকেজো হয়ে পড়ে আছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও আবহাওয়া অধিদপ্তর সারাদেশে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে এই প্রকল্পটি হাতে নেয় এবং প্রকল্পের প্রথম ধাপ শেষ হয় ২০২১ সালের জুন মাসে। এ প্রকল্পটির অধীনে সারাদেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়নে কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাস তথ্য বোর্ড স্থাপন করা হয়। এই বোর্ড স্থাপনে বরাদ্দ ছিল ১১৯ কোটি টাকা।   


অপরদিকে এই প্রকল্পের অধীনে আধুনিক আবহাওয়া বিষয়ক তথ্যসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ইন্টারনেট সংযোগ, ৬ হাজার ৬৬৪টি ট্যাব সরবরাহ করা হয়। সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল, স্বয়ংক্রিয় রেইন গজ মিটার দিলেও তা এখন অকেজো। ফলশ্রুতিতে প্রকল্পটি সচল হওয়ার পরও মাঠ ও জেলা পর্যায় মনিটরিং না করায় এখন সেই আধুনিক সেবা থেকে বঞ্চিত কৃষকরা।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের প্রান্তিক চাষিদের আধুনিক তথ্য নির্ভর কৃষি আবাদের লক্ষ্যে কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও আবহাওয়া অধিদপ্তর এক যোগে কাজ করেছে। এই প্রকল্পটি স্থাপন করার একটি মাত্র লক্ষ্য ছিল, কোন সময় বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, আর্দ্রতাসহ আরও বেশ কয়েকটি আবহাওয়ার পূর্বাভাসের আগাম বার্তা জানার জন্য। তবে যথাযথভাবে প্রকল্পটি সঠিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হলে দেশের অধিকাংশ কৃষক চাষাবাদের জন্য আশানুরূপ সুফল পেত। ওই কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্পটির বোর্ডে নেই কোনো হালনাগাদ তথ্য। রেইন গজ মিটার, কিয়স্ক ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেলের মাধ্যমে স্থাপিত এ বোর্ডগুলো অধিকাংশই অচল হয়ে পড়ে আছে। সরকার এমন একটি প্রকল্প কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে যা-কিনা কৃষকের কোনো কাজেই আসছে না। ব্যবহার না করায় আবহাওয়া বোর্ড এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে রয়েছে, দেখার জনবল থাকলেও তারা (কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প) তা দেখছে না। এত বড় একটি আধুনিক প্রকল্প করেছে সরকার কৃষকের সুবিধার্থে, কিন্তু আদৌ তা কোনো সময়ই কাজে আসেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ে অধিকাংশ কৃষকই জানে না আবহাওয়া জানার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে কোনো বোর্ড আছে।

মানিকগঞ্জের প্রায় সব কয়েকটি উপজেলায় এই কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাস তথ্য বোর্ড স্থাপন করার কথা থাকলেও ভবন না থাকায় চরাঞ্চলগুলোতে স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

সেই বোর্ডগুলো সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি অফিসে পড়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম। কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্পটি কোনো কাজেই আসেনি এমনটাই দাবি স্থানীয় কৃষকদের। অন্যদিকে উপজেলা কৃষি অফিসারদের দাবি কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প অকেজো হয়ে আছে মর্মে চিঠি দিয়েছেন তারা।

সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি ইউনিয়নের সুরুজ মিয়া বলেন, আমরা যখন কোনো কাজে ইউনিয়ন পরিষদে যাই তখন দেখি কৃষি আবহাওয়া বোর্ড। কোনোদিন দেখিনি ওই বোর্ডটি আপডেট করা, সব সময় দেখি একই পরিস্থিতি। ব্যবহার না করতে করতে এখন বোর্ডটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।  

দৌলতপুর উপজেলার চকমিরপুর এলাকার কৃষক আব্দুল রহিম বলেন, পরিষদের বারান্দায় একটি বোর্ড দেখতে পাই কিন্তু ওই বোর্ডের কাজ কি তাতো আমি জানি না। কৃষি অফিসের অফিসাররা আমাদের কোনো সময় ওই বোর্ডের বিষয়ে কিছু বলেননি।  

সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রথম দিকে কোনো কিছুতেই সুফল পাওয়াটা কষ্টকর, এই বোর্ডের মাধ্যমে কৃষক জানতে পারতো যে কখন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিংবা কোন সময় ফসলে পোকা আক্রমণ করবে। কৃষক যদি আরেকটু সচেতন হতো তবে এই কৃষি আবহাওয়া বোর্ডের মাধ্যমে উপকৃত হতো। বেশ কয়েকটি বোর্ডের ম্যানুয়াল চাকাগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি দ্রুত সময়ের ভেতরেই এটার সমাধান হবে।

দৌলতপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ রেজাউল হক বলেন, পরিষদের স্থাপনা না থাকায় সব কয়েকটি উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে বোর্ড স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।  

নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে আরও এক কর্মকর্তা বলেন, এই প্রকল্পটি স্থাপনের সময় আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সমন্বয় না করেই বোর্ডগুলো সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়। আমাদের কাছে শুধু জানতে চেয়েছিল কয়টি ইউনিয়ন আছে। সঠিক স্থানে স্থাপন এবং এনালগ পদ্ধতি হওয়াতে দ্রুতই তা নষ্ট হয়ে গেছে।  

মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাস তথ্য, বোর্ড নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে ওই সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাস তথ্য বোর্ড স্থাপনের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শাহ কামাল খানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, শুধু কি আবহাওয়া বোর্ড দিয়েছে নাকি আরও অন্য কাজ করেছে ? শুধু নেগেটিভ নিউজ করার জন্য ঘোরেন। প্রকল্পের শুরুতে ওয়েদার ডিসপ্লে বোর্ড ছিল, সেটা নিয়েই পড়ে আছেন। আপনি মানিকগঞ্জের ডিডি সাহেবের সঙ্গে কথা বলেন, বলেই ফোনটি কেটে দেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।