ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

র‌্যাব পরিচয়ে তিনমাসে ৩০ ডাকাতি, ১০ কোটি টাকা ছিনতাই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩
র‌্যাব পরিচয়ে তিনমাসে ৩০ ডাকাতি, ১০ কোটি টাকা ছিনতাই

ঢাকা: গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি ব্যাংকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা জমা দিতে যান শিক্ষার্থী ইসরাফিল। ব্যাংকে প্রবেশের আগেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে চারজন তাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে একটি গাড়িতে তোলেন।

এ সময় ওই শিক্ষার্থীর কাছে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ কেড়ে নেওয়া হয়। পরে আগারগাঁও স্কুলের পাশে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তিদের গায়ে ছিল র‌্যাব লেখা ‘জ্যাকেট’।

এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা তদন্তের ধারাবাহিকতায় সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যারা র‌্যাব পরিচয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির করে আসছিল।

গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন- সুমন মিয়া, মো. মাসুদ রানা, আশরাফুল ইসলাম আপেল, ইকবাল হোসেন ইসলাম এবং সাইদুল হক। এর মধ্যে সুমন চক্রের হোতা এবং তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা রয়েছে।

পুলিশ জানায়, তিনমাস আগে কারাগার থেকে বেরিয়ে পুনরায় র‌্যাব পরিচয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করছিল চক্রটি। গত তিন মাসে চক্রটি ৩০টির বেশি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। এভাবে হাতিয়ে নিয়েছে অন্তত ১০ কোটির বেশি।

মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আজিমুল।

তিনি জানান, সম্প্রতি ইসরাফিল নামে এক ব্যক্তি শ্যামলীর একটি ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার টাকা তুলে রিং রোড পূবালী ব্যাংকে জমা দিতে আসছিলেন। রিং রোডের মারুফ অপটিকস চশমার দোকানের সামনে পৌঁছালে একটি প্রাইভেটকারে থাকা র‌্যাবের জ্যাকেট পরা ৩-৪ জন ব্যক্তি তার গতিরোধ করে। র‌্যাব সদস্য পরিচয়ে তাকে টানা হেঁচড়া করে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে জোরপূর্বক প্রাইভেটকারে তুলে নেয়। পরে ইসরাফিলের চোখ গামছা দিয়ে বেঁধে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

একপর্যায়ে তাকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরিয়ে ব্যাগে থাকা সব টাকা ছিনিয়ে নিয়ে শেরেবাংলা নগর এলাকার একটি স্কুলের পাশে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।

আজিম বলেন, র‌্যাব পরিচয়ে এমন স্পর্শকাতর ঘটনার রহস্য উদঘাটনে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শ্যামলী এলাকা ও আশপাশের প্রায় দুইশত সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে। এ সময় একটি সন্দেহজনক গাড়ির অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা ও বিশ্বস্ত সোর্সের মাধ্যমে ঘটনায় জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হয়।

অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানাতে পারে, রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে সংঘবদ্ধ চক্রটি দীর্ঘদিন প্রাইভেটকার ব্যবহার করে র‌্যাব পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ফেরা ব্যক্তিদের গতিরোধ করতো। পরে তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে সবকিছু লুট করে পালিয়ে যেত। এ ধরনের ঘটনায় তুরাগ, গাজীপুর সদর, কালিয়াকৈরসহ বিভিন্ন থানায় তাদের বিরুদ্ধে অপহরণের ঘটনায় মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

পুলিশ বলছে, ১৭ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরের ঘটনা ঘটানোর পর পুনরায় সোমবার টাউন হলের একটি ব্যাংকের সামনে প্রাইভেটকারে অবস্থান করছিল চক্রটি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এমন তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ তাদের আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ভুয়া নম্বর প্লেট লাগানো একটি প্রাইভেটকার, ভুয়া নম্বর প্লেট, র‌্যাব লেখা কালো রংয়ের দুটি জ্যাকেট, একটি কালো ক্যাপ, একটি খেলনা পিস্তল, একটি হ্যান্ডকাফ, একটি লাঠি ও পুলিশ লেখা দুটি স্টিকার উদ্ধার করা হয়।

ডিসি আজিম জানান, গত তিন মাস আগে কারাগার থেকে বেরিয়ে গ্রেপ্তাররা ৩০টির বেশি ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বের হওয়া ব্যক্তিদের টার্গেট করে র‌্যাব পরিচয়ে সবকিছু লুটে নিতো।

চক্রটি গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানা এলাকায় তিনটি, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা এলাকায় একটি, হবিগঞ্জের মাধবপুর থানা এলাকায় একটিসহ ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় গত তিন মাসে মোট ২৫টি ঘটনার কথা সরাসরি স্বীকার করেছে।

এদের মধ্যে সুমন মিয়ার বিরুদ্ধে ১১টি, মাসুদ রানার নামে ছয়টি, আশরাফুল ইসলাম আপেলের নামে ১১টি, ইকবাল হোসেন ইসলামের নামে তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩
পিএম/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।