ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সালাহউদ্দিন জাকীর মরদেহে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

স্টাফ করেসপনডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩
সালাহউদ্দিন জাকীর মরদেহে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

ঢাকা: ‘বয়স শুধু একটা অজুহাত। এ অজুহাত দেখিয়ে বসে থাকার মানুষ আমি নই।

যত দিন বেঁচে থাকব, সিনেমা করে যাব। ’ তাই করে গেছেন সালাহউদ্দিন জাকী। মৃত্যুর কিছুদিন আগেই তিনি শেষ করেছেন অপরাজেয় একা ও ক্রান্তিকাল ছবি দুটির কাজ।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে যখন সালাহউদ্দিন জাকীর মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হলো, তখন এমন সব কথায় বলছিলেন তার স্বজনেরা।

কিংবদন্তী নির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকীকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন চলচ্চিত্রের শিল্পী, কলাকুশলী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ।  

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঘুড্ডি খ্যাত নির্মাতার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়। সেখানেই তাকে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে এ বিদায় অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি অঙ্গনের বিভিন্ন সংগঠন পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।

এ সময় মরহুমের মরদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প যখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে তখন সালাহউদ্দীন জাকীর চলে যাওয়া আমাদের চলচ্চিত্র অঙ্গন ও সংস্কৃত অঙ্গনের জন্য অনেক বড় ক্ষতি।

সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী ও বিশিষ্ট সংস্কৃতিজন আসাদুজ্জামান নূর বলেন, জাকির সঙ্গে কখন কোথায় পরিচয় সেটি মনে নেই, তবে আমরা স্বাধীনতার পর যারা একটু সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করতাম, তখন প্রায়ই আমাদের দেখা হতো, আড্ডা হতো। চলচ্চিত্র নিয়ে, সৃজনশীলতা নিয়ে তার এক ধরনের পাগলামি ছিল। সেই পাগলামিটা আমাদেরও স্পর্শ করতো, উৎসাহিত করত। তিনি যেভাবে সবাইকে শক্তি জোগাতেন এবং সৃজনশীলতা দিয়ে উদ্বুদ্ধ করতেন, সেই জায়গাটিতে আর কাউকে পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয় না। তার অনেক স্বপ্নই অপূর্ণ থেকে গেছে, তবে নতুন প্রজন্ম তার সেই স্বপ্নগুলো পূরণ করবে বলেই আমার প্রত্যাশা।

কবি কামাল চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে যারা অনেকদিন পর একটি শক্ত সৃজনশীল জায়গায় প্রতিষ্ঠা করেছেন, জাকির ভাই তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি সৃজনশীলতাকে সব সময় আলাদা ভাবে মহিমা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তার গদ্যগুলো অসাধারণ সুন্দর। বাংলাদেশের সংস্কৃতি জগৎ, চলচ্চিত্র, সাহিত্য জগতে তিনি যে অবদান রেখেছেন তা কখনো মলিন হবে না।

নাট্যব্যক্তিত্ব কেরামত মওলা বলেন, সালাহউদ্দিন জাকি তার জীবনের চিহ্ন রেখে গেছেন। তিনি হুইল চেয়ারে বসেও তার চলচ্চিত্রের কাজ করেছেন। বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে তিনি তার পদচিহ্ন বেশি বড় আকারে রেখে গেছেন এবং সেটি দীর্ঘদিন থাকবে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আখতারী মমতাজ বলেন, নতুন চিন্তা চেতনায় তিনি ছিলেন সব সময়ই তরুণ। স্বপ্ন দেখায় তার কোনো বিরতি ছিল না। তিনি নিজে যেমন স্বপ্ন দেখেছেন তরুণদেরও তেমনি স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তার যে স্বপ্ন এবং ধারণা তিনি দিয়ে গেছেন, আমি আশা করি আমাদের তরুণরা সে পথেই চলবে।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বলেন, সে যে কত বড় দেশপ্রেমিক ছিল তা বলে বোঝানো যাবে না। তিনি অসাধারণ কবিতা আবৃত্তিও করতেন। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মুক্তিযুদ্ধের পরেও আমরা যে যুদ্ধটা করেছি তাতে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, রাইসুল ইসলাম আসাদসহ সংস্কৃতি অঙ্গনের অন্যান্য ব্যক্তি এবং তার পরিবারে সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সালাহউদ্দীন জাকীর মরদেহ ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদ এবং দুপুর ৩টা ১৫ মিনিটে তেজগাঁও চ্যানেল আই ভবনে নিয়ে যাওয়া হবে। চ্যানেল আইয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরে দাফন করা হবে গুণী এ পরিচালককে।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বরেণ্য চলচ্চিত্রকার সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকী। তার মৃত্যুতে শুধু চলচ্চিত্র জগতই নয়, পুরো সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া। পরিবারের সদস্যরা দেশের বাইরে থাকায় বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সৈয়দ জাকীর জানাজা ও দাফনের সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার।

নির্মাতা পরিচয়ের বাইরেও সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী কাহিনিকার, সংলাপ রচয়িতা, চিত্রনাট্যকার ও লেখক হিসেবে পরিচিত। ১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত নিজের প্রথম চলচ্চিত্র ‘ঘুড্ডি’ দিয়ে দর্শকদের পাশাপাশি চলচ্চিত্র সমালোচকদেরও মন জয় করেন তিনি। এ সিনেমার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এরপর ‘লাল বেনারসি’, ‘আয়না বিবির পালা’সহ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। গত শতকের নব্বই দশকের শেষ দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩
এইচএমএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।