ঢাকা: ‘মরণফাঁদ’ হয়ে উঠেছে আমিনবাজারের সালেহপুর সেতুসহ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আট সেতু। মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী থানাগুলোর নথি ঘেঁটে জানা গেছে, গত ২০ বছরে এসব সেতুতে বড় ধরনের অর্ধ শতাধিক দুর্ঘটনায় পৌনে তিনশ’ মানুষ অকালে প্রাণ হারিয়েছেন।
অন্য সেতুগুলো হলো- সাভারের জোড়পুল, কোহিনুর মিল গেট, কালামপুর, সুতিপাড়া, নয়াডিঙ্গি, তরা ক্রসব্রিজ ও উথলী সেতু।
এসব মরণফাঁদের মধ্যে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৮৯ সালে সুতিপাড়া সেতুতে। যাত্রীবোঝাই এক লোকাল বাস ব্রিজের রেলিং ভেঙ্গে পানিশূণ্য খাদে পড়লে ৬৮ জন নিহত হন। আহত হন আরও ২৪ জন। এদের ১৭ জনকেই বরণ করতে হয় স্থায়ী পঙ্গুত্ব।
১৯৯২ সালে মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার উথলী সেতুর রেলিং ভেঙ্গে ইছামতির বুকে আছড়ে পড়ে জয়পুরহাট থেকে ছেড়ে আসা নওশাদ পরিবহনের একটি বাস। ঘটনাস্থলেই সলিল সমাধী ঘটে ২৩ জনের। ওই দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা শেষ পর্যন্ত ২৭ জনে পৌঁছায়।
কেবল সাভারের আমিনবাজার সংলগ্ন সালেহপুর সেতুতেই গত ২০ বছরে ছোট বড় অন্তত ৪২টি দুর্ঘটনা ঘটে। তুরাগ নদীর উপর নির্মিত এই সেতুতে গত ২০ বছরে ৫টি বড় দুর্ঘটনায় মারা যান ৪১ জন। ওই ৫ দুর্ঘটনায় তিনটি মিনিবাস, একটি ট্রাক ও একটি লোকাল বাস ব্রিজ থেকে পড়ে পানিতে নিমজ্জিত হয়।
১৯৯৫ সালের সেপ্টেম্বরে ধামরাইগামী একটি মিনিবাস সালেহপুর সেতু থেকে উল্টে নিচে পড়ে ২৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০০৮ সালেও সালেহপুর সেতুর পাশেই এক দুর্ঘটনায় মারা যান ১৩ জন হতভাগ্য যাত্রী।
পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সালেহপুর সেতুর উপর ও সেতু সংলগ্ন উভয়পাশে সংঘটিত ২৬টি দুর্ঘটনায় ৮০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন।
সালেহপুর সেতুতে ঘন ঘন বাস দুর্ঘটনার ব্যাপারে পরিবহন চালকরা বাংলানিউজকে জানান, আমিনবাজার পেরিয়ে সাভারের দিকে এগোতেই সালেহপুর সেতু মুখে সড়কটি বিপজ্জনক একটি বাঁক নিয়েছে। ঢাকার দিক থেকে আরিচার দিকে যাওয়ার সময় অনেক চালক এই বিপজ্জনক বাঁক নিতে গিয়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। সালেহপুর সেতুটি পুরনো আমলের ধনুক আকারে বাঁকা। আরিচার দিক থেকে ঢাকামুখে আসা গাড়িগুলো সেতুর উপরে ওঠার পরক্ষণেই ধনুক আকারের বাঁকা স্থানটুকু দ্রুত পার হওয়ার সময়ে বড় রকমের ধাক্কা খায়। সেখানে চালকের সামান্য অসতর্কতায় গাড়ি ছিটকে সেতুর নিচে পড়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০০-২০০৩ সালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সড়কটি দ্বিগুণেরও বেশি প্রশস্ত করা হয়। এ সময় সবগুলো সেতু সংস্কার ও পুর্নর্নিমাণের মাধ্যমে সড়কের উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা হয়। কিন্তু ওই সময়ও সালেহপুর সেতুটি সড়কের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা যায়নি। এখনও সেতুর মাঝামাঝি স্থানে কিছুটা ধনুকের মতো বাঁকা রয়েছে। তাছাড়া সেতুটির উভয় পাশে ওঠানামার স্থান বেশ ঢালু হওয়ায় চালকদের জন্য তা ফাঁদ হয়ে দাঁড়ায়।
অন্য সেতুগুলোর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে কালামপুর সেতুতে বড় আকারের ৩টি দুর্ঘটনায় ২৯ জন, মানিকগঞ্জের নয়াডিঙ্গি সেতুতে দুটি দুর্ঘটনায় ১৩ জন, তরা ক্রসব্রিজের উপরে দুটি বাসের মুখোমুখি দুর্ঘটনায় ১৭ জনের করুণ মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১০