ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মাদারীপুরে ব্যাংক থেকে বেশি টাকা তুললেই পড়তে হয় ছিনতাইকারীর কবলে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৩
মাদারীপুরে ব্যাংক থেকে বেশি টাকা তুললেই পড়তে হয় ছিনতাইকারীর কবলে

মাদারীপুর: মাদারীপুরে ব্যাংক থেকে বেশি টাকা তুলে বাড়ি ফিরতেই পথে পড়তে হয় ছিনতাইকারীর কবলে। র‍্যাব বা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে থামিয়ে তুলে নেওয়া হয় প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাসে।

 

হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে টাকা নিয়ে গ্রাহককে নামিয়ে দেওয়া হয় মহাসড়কের কোনো এক স্থানে।  

এভাবেই মাদারীপুর জেলার রাজৈরে বার বার গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা ছিনতাই করে চলেছে একটি চক্র। কিন্তু  ধরাছোঁয়ার বাইরে এসব অপরাধীরা। এতে আতঙ্কে রয়েছেন টেকেরহাট বন্দরের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে আসা গ্রাহকরা।  

জানা গেছে, গত ১৩ আগস্ট আল মুমিন মোল্লা নামের এক ব্যক্তি টেকেরহাটের মেঘনা ব্যাংক থেকে ১২ লাখ টাকা নিয়ে গন্তব্যে রওনা দেন। তিনি রাজৈর উপজেলার ইশিবপুরে আরাফাত হোসেন নবীনের এজেন্ট ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজার। প্রতিষ্ঠানের টাকা নিয়ে যাওয়া পথে ডিবি পরিচয়ে তাকে প্রাইভেটকারে তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। পরে ২৫ কিলোমিটার দূরে মহাসড়কে চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে যায় তারা।  

একইভাবে এই চক্রের শিকার হয়েছেন রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুরের কেরামত আলী শিকদার, নারায়ণপুরের গিয়াস শেখ।

অভিযোগ রয়েছে, বার বার একই কায়দায় গ্রাহকদের লাখ লাখ টাকা খোয়া গেলেও উদ্ধারে তৎপরতা নেই পুলিশের।  

ব্যাংক কর্মকর্তাদের দাবি, এই চক্রটি শক্তিশালী হওয়ায় মুহূর্তেই বেশি টাকা উত্তোলনের খবর বাইরে চলে যায়। আর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক ব্যবহার করে সটকে পড়েন দুর্বৃত্তরা।

ভুক্তভোগী আরাফাত হোসেন নবীন বলেন, ‘চলতি মাসের ১৩ আগস্ট ১২ লাখ টাকা খোয়া গেলেও পুলিশের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। বেশ কয়েকবার থানায় গিয়েছি, অপরাধী ধরার ব্যাপারে তৎপরতা নেই, আর টাকা উদ্ধারেও দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই পুলিশের। ’

আরেক ভুক্তভোগী কেরামত আলী শেখ বলেন, আমার কবিরাজপুর ও কালামৃধা এই দুই জায়গায় আলাদা দুটি এজেন্ট ব্যাংক রয়েছে। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা বহন করতে হয়। আমার প্রতিষ্ঠানের ক্যাশিয়ার আবু মো. সাইম গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর ‘আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড’ টেকেরহাট শাখা থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে আসার সময় র‍্যাব পরিচয়ে প্রাইভেটকারে তোলে একটি চক্র। পরে টাকা নিয়ে সড়কের মধ্যেই ফেলে পালিয়ে যায়। এখনো উদ্ধার হয়নি ছিনতাই হওয়া টাকা।

স্থানীয়রা জানান, ব্যাংক থেকে টাকা তুললেই ছিনতাইয়ের কবলে পড়তে হচ্ছে। এমন ঘটনা দীর্ঘদিনের। প্রতিনিয়ত ভয় হয়, আমরা নিরাপত্তা চাই। যাতে কোনো ধরনের বিপদ না হয়। সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রতিনিয়ত পুলিশি টহল জোরদার করতে হবে। যাতে অপরাধীরা আতঙ্কে থাকে, ধরা পড়ে। এছাড়া তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা উচিত। তা না হলে এমন কর্মকাণ্ড চলতেই থাকবে।

‘আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড’ টেকেরহাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. ছামাদ বিশ্বাস বলেন, টেকেরহাট বন্দরে ১৫টি ব্যাংকে প্রতিদিন ৫০-৬০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। গত দুই বছরে ছোট-বড় মিলিয়ে বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে টেকেরহাট বন্দর ও আশপাশে। এই চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ এমন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত বড় ধরনের টাকা উত্তোলনের খবর ব্যাংক থেকে বাইরে চলে যাচ্ছে। গ্রাহক বেশে ব্যাংকে প্রতিনিয়ত ঘোরাফেরা করছে চক্রটি। আমরাও এর প্রতিকার চাই।

‘মেঘনা ব্যাংক লিমিটেড’ টেকেরহাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমরাও অবাক হই। টাকা লেনদেনের খবর কীভাবে প্রতারক চক্র পায়। মূলত এই চক্রটি দীর্ঘসময় একজন গ্রাহককে নজরদারিতে রাখে। এই চক্রটিকে অসংখ্য লোক কাজ করে। সম্প্রতি টাকা খোয়া যাবার ঘটনায় খুবই দুঃখজনক। অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

মাদারীপুর পুলিশ সুপার মাসুদ আলম খান বলেন, ‘টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় চক্রটির বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে, তাদের ধরতে থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। গ্রাহক টাকা উত্তোলনের পর ঝুঁকি মনে করলে পুলিশের সহায়তা নিতে পারে। এ ব্যাপারে পুলিশ আন্তরিকতার সহিত গ্রাহকের টাকা নিজ গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।