ঢাকা, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

এক টানে জালে উঠল ৫২ লাখ টাকার ইলিশ

সুনীল বড়ুয়া,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৩
এক টানে জালে উঠল ৫২ লাখ টাকার ইলিশ

কক্সবাজার: প্রজনন মৌসুম শেষে এবার ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে রূপালী ইলিশ। প্রায় প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছেন জেলেরা।

এমনকি শনিবার (১৯ আগস্ট) এফবি ফয়সাল নামের একটি ট্রলারে ধরা পড়েছে ৫২ লাখ টাকার ইলিশ।  

তবে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লে স্থানীয় বাজারে দাম চড়া। বেশির ভাগ ইলিশ চলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম- ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে।

কক্সবাজার শহরের পেশকারপাড়া এলাকার আবদুস সাত্তারের মালিকানাধীন ট্রলারটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ভিড়ে শুক্রবার । এই একটি ট্রলারেই ৫২ লাখ টাকার ইলিশ ধরা পড়েছে বলে জানান, ট্রলারের মাঝি আবদুল মজিদ।

মজিদ বলেন, গত ১১ আগস্ট ২১ জন জেলে নিয়ে ট্রলারটি সাগরে নামে। গভীর সাগরে গিয়ে তারা জাল ফেলে। ওই জালে একসঙ্গে  ধরা পড়ে প্রায় ৭ হাজারের বেশি মাছ। সবগুলোই ইলিশ। মাছগুলো কক্সবাজার ফিশারিঘাটে ৫২ লাখ টাকা দিয়ে বিক্রি করেন বলে জানান মজিদ।  

কক্সবাজার জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে , গত সাত দিনে কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ২ হাজার ১০০ মেট্রিক টনের বেশি ইলিশ সরবরাহ করা হয়েছে। ফিশারিঘাটের পাইকারি বাজার ছাড়াও টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়াসহ জেলার বিভিন্ন মৎস্যকেন্দ্র থেকে দৈনিক ৩০০ মেট্রিক টন ইলিশ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। এর আগে গত বছর কক্সবাজারে ইলিশ আহরণ হয়েছিল ৩৯ হাজার ৩১৪ মেট্রিক টন। এবার ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন।

গত ২৩ জুলাই সাগরে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে বৈরী আবহাওয়ার কারণে আবার  ফিরে আসতে হয়। এরমধ্যে কক্সবাজার ও আশপাশের জেলায় বন্যা দেখা দেয়। গত ১০ জুলাই কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত প্রত্যাহার করার পর জেলেরা পুনরায় সাগরে মাছ শিকারে যায়।

রোববার (২০ আগস্ট) দুপুরে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে দেখা যায়, ঘাটের পল্টুনটি ইলিশে ভরে গেছে। ছোট ছোট ডিঙি নৌকা থেকে শ্রমিকেরা ঝুড়ি ও লাই ভরে ইলিশ ও অন্যান্য মাছ খালাস করছে। একপাশে দেখা গেল, ট্রাক তোলা হচ্ছে ইলিশ। জেলেরা জানালো, ইলিশ ভর্তি এসব ট্রাক চলে যাবে ঢাকা চট্টগ্রামে।  

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় জেলে পাড়ায় যেন বইছে আনন্দের বন্যা। ট্রলার মালিক,মাঝি, শ্রমিক সবার চোখে-মুখে লেগে আছে হাসির ঝিলিক।

ট্রলার মালিক মোহাম্মদ চোখে-মুখে মহা খুশি। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে সাগরে শুধু ইলিশ ধরা পড়ছে। একেকটি ট্রলার ২ থেকে ৩ হাজার ইলিশ নিয়ে উপকূলে ফিরছে। ইলিশের আকার মোটামুটি ভালো।

স্থানীয় খুচরা মাছ ব্যবসায়ী পরানশু বড়ুয়া জানান, গত কদিন ধরে যেসব ট্রলার ঘাটে ভিড়ছে সবগুলো ইলিশে ভর্তি। কিন্তু তবুও দাম বাড়তি। এখনো সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে ইলিশের দাম।

তিনি বলেন, এত ইলিশ ধরা পড়ার পরেও  খুচরা বাজারে ৫০০-৬০০ গ্রামের ইলিশ বেচতে হচ্ছে কেজি ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা।

রোববার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে দেখা গেছে, ৫০০ গ্রামের বেশি ওজনের ইলিশ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৮০০ টাকা এবং ৮০০ থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  আর ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা।

ট্রলার মালিক ও মৎস্য ব্যবাসয়াীরা বলছেন, এখনও মাছের জোগান বেশি নয়। তাই দাম বেশি। দুই তিন দিনের মধ্যে ঘাটে শত শত ট্রলার ভিড়বে। তখন দাম অনেক কমে আসবে।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন বলেন,  প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লে ও এখনও দাম তুলনামূলক বেশি।  

তবে ইলিশের দাম কমতে শুরু জানিয়ে তিনি বলেন, সাগর থেকে মাছ ভর্তি ট্রলারগুলো ফিরতে শুরু করেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ইলিশে সয়লাব হয়ে যাবে। তখন দাম কমবে।

জেলা ফিশিংবোট মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সমিতির নিবন্ধিত ছয় হাজার ট্রলার রয়েছে। এতে লক্ষাধিক জেলে ও শ্রমিক জড়িত।

তিনি বলেন, সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কার্যকর সুফল নানা কারণে পাওয়া যাচ্ছে না। মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পুনর্বিবেচনা করে সমন্বয় করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।  

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, বৈরী আবহাওয়া কেটে সাগরে এখন মাছ ধরায় অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। শহরের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ জেলার উপকূলীয় ঘাট থেকে দৈনিক প্রায় ৫০০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছ আহরিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই ইলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ২৪৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৩
এসবি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।