ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আজ ১০ অক্টোবর, দিনাজপুরের চড়ারহাট-সারাইপাড়া গণহত্যা দিবস

সানি সরকার, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১০
আজ ১০ অক্টোবর, দিনাজপুরের চড়ারহাট-সারাইপাড়া গণহত্যা দিবস

দিনাজপুর: আজ ১০ অক্টোবর। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের চড়ারহাট-সারাইপাড়া গণহত্যা দিবস।

১৯৭১ সালের এই দিনে এ দু`টি গ্রামে হানা দিয়ে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হত্যা করেছিল ১৫৭ জন নিররপরাধ গ্রামবাসীকে।

ওই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া রহমত, শিক যথাক্রমে মোজাম্মেল হক, খলিল উদ্দিন ও  মোসলেম উদ্দিন, ডা. এহিয়া মণ্ডল, ডা. আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল হামিদ ও একরাম এখনও সেই ভয়াল স্মৃতি স্মরণে শিউড়ে ওঠেন।

তারা জানান, ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর স্থানীয় মসজিদে ফজরের আযানের পর ঘুম ভাঙ্গা চোখে গ্রামবাসী দেখেন এলএমজি, এসএমজি আর রাইফেল তাক করে শত শত হানাদার গোটা এলাকা ঘেরাও করে রেখেছে। কিছুণের মধ্যেই পাকি (পাকিস্তানি) হানাদাররা বাড়ি বিড়ি গিয়ে নারী-পুরষ নির্বিশেষে নিরীহ মানুষজনকে ধরে এনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করায় বিরামপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের পাশের জমিতে।

অপরদিকে ফজরের নামাজ শেষ হওয়ামাত্র পাকি হানাদারদের আরেকটি দল রাস্তায় মাটি কাটার কথা বলে মসজিদ থেকে মুসল্লিদের এনে একই স্থানে জড়ো করে। এরপর মেশিনগানের বার্স্ট (ব্রাশ) ফায়ারে শুরু করে নির্মম-নির্দয় হত্যাজজ্ঞ।

ভোরের শান্ত-স্নিগ্ধ প্রকৃতি মূহুর্তেই পাকি খান সেনাদের পৈশাচিক উল্লাসে নারকীয় আবেশের রূপ নেয়। শরীরে তাজা বুলেটের ত নিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন দু’গ্রামের নিরীহ বৃদ্ধ, যুবক, কিশোর ও মহিলারা। তাদের রক্তে সয়লাব হয়ে যায় সবুজ ঘাষ। মৃত্যু যন্ত্রণাকাতর এতগুলো মানুষের আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।

ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে পাকি সেনাদের নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞ। তাদের নিষ্ঠুরতা থেকে সেদিন রেহাই পাননি মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে পুরুষ, মহিলা, কিশোর, যুবক এমনকি গর্ভবতী নারীও। সব মিলিয়ে চড়ারহাট (প্রাণকৃষ্ণপুর) ও সারাইপাড়া (আন্দলগ্রাম) গ্রামের ১৫৭ জন নিরীহ পুরুষ ও মহিলা সেদিন শহীদ হন।
 
নারকীয় এ হত্যাযজ্ঞে নিহতদের জন্য জোটেনি এক টুকরো কাফনের কাপড়ও। মশারি, কাঁথা ও শাড়ি-লুঙ্গির কাপড় দিয়ে তাদের দাফন করা হয়। গ্রাম দু’টি প্রায় পুরুষ শুন্য হয়ে যাওয়ায় সেদিন কবর খোঁড়ার অভাবে একটি কবরে একাধিক লাশও দাফন করা হয়।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাদেক মাস্টার বাংলানিউজকে জানান, ৭১ এর ৩ অক্টোবর চড়ারহাটে একটি গরুর গাড়িতে অ্যামবুশ করে ৭ জন হানাদার খান সেনাকে হত্যা করে তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল।

এর প্রতিশোধ নিতে কাপুরুষ পাকিরা যুদ্ধের সব নিয়ম-নীতি ভেঙ্গে নিরীহ-নিরপরাধ গ্রামবাসীদের ওপর ওই নির্বিচার হত্যাজজ্ঞ চালায়।

তবে স্বাধীনতার ৩৯ বছর পার হলেও সেদিনের সেই শহীদদের স্মরণে এ দু’টি গ্রামে নির্মিত হয়নি কোনও স্মৃতিসৌধ। অযতœ-অবহেলা আর সংস্কারের অভাবে চড়ারহাট গণকবরটির সীমানা বেষ্টনি আজ নিশ্চিহ্ন প্রায়। যে রাজনৈতিক দলই মতায় আসে, তাদের কেন্দ্রীয় নেতা ও স্থানীয় সাংসদরা এলাকায় এসে চড়ারহাট-সারাইপাড়ার গণকবর দুটিতে স্মৃতিস্তম্ভসহ সীমানা প্রাচীর  নির্মাণের ঘোষণা দেন। তবে তাদের কারও প্রতিশ্র“তিই বাস্তবায়ন হয়নি এখন পর্যন্ত।

স্থানীয়রা অবশ্য বসে থাকেননি। তারা সেদিনের সেই শহীদদের স্মরণে এলাকায় ১টি কলেজ ও ১টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। দিবসটি উপলক্ষে রোববার বিকেলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের উদ্যোগে দু’গ্রামের মসজিদে দোয়া ও চড়ারহাট শহীদ স্মৃতি কলেজে স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ