ঢাকা, রবিবার, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

পরকীয়ার সন্দেহে ভগ্নীপতিসহ স্ত্রীকে হত্যা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:১৪, আগস্ট ১৫, ২০২৩
পরকীয়ার সন্দেহে ভগ্নীপতিসহ স্ত্রীকে হত্যা

ঢাকা: ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় এক গৃহবধূকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রাখার ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী ও প্রধান আসামি হাবুল বেপারীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। তিনি নিহতের স্বামী।

সোমবার (১৪ আগস্ট) বিদাবগত রাতে রাজধানীর তুরাগ এলাকার কামারপাড়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, স্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ ও পরকীয়ার সন্দেহে ওই গৃহবধূকে হত্যা করেন হাবুল। তার স্ত্রীর নাম রাবেয়া বেগম। তার হত্যাকাণ্ডে হাবুলের ভগ্নীপতি সূর্য্য মোল্লা সম্পৃক্ত।

র‌্যাব আরও জানায়, রাবেয়ার প্রতি আগে থেকেই সূর্য্য মোল্লার ক্ষোভ ছিল। তাকের হত্যা করলে ধারের টাকা ফেরত দিতে হবে না চিন্তা করেই হাবুলের কথায় খুনের ব্যাপারে রাজি হন তিনি।

মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, গত ১৩ আগস্ট ফরিদপুর সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী এলাকায় নিজ বাড়ির পেছনে সেপটিক ট্যাংক থেকে রাবেয়া বেগমের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় তার ভাই বাদি হয়ে সদরপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

গ্রেপ্তার হাবুল ৭ বছর আগে রাবেয়া বেগমের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর তিনি স্ত্রীর বাবার বাড়িতেই ঘর তৈরি করে সেখানে বসবাস করছিলেন। গত কয়েকমাস ধরে স্ত্রীর প্রতি তার ক্ষোভ জন্মায়।

মূলত তিনি রাবেয়া পরকীয়া করছেন এমন সন্দেহ করতেন। তা ছাড়া তার স্থায়ী কোনো চাকরি ছিল না। তিনি ফার্নিচার দোকানে রং মিস্ত্রির কাজ করতেন। উপার্জনও কম ছিল। রাবেয়া বেসরকারি একটি এনজিওতে মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি করতেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, হাবুলের উপার্জন কম থাকায় প্রায়ই তিনি স্ত্রীর কাছ থেকে নিজের বিভিন্ন খরচের জন্য টাকা চাইতেন। যেহেতু রাবেয়া চাকরির উপার্জিত অর্থ দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনার খরচসহ সংসারের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করতেন, এজন্য তিনি স্বামীকে টাকা দিতে চাইতেন না। এতে তার পরকীয়ার বিষয়ে হাবুলের সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। তার দুলাভাই সুর্য্য মোল্লা বিভিন্ন সময়ে রাবেয়ার কাছ থেকে বেশকিছু টাকা ধার নেন। এ টাকা পরিশোধের জন্য রাবেয়া তাকে চাপ দিচ্ছিলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটিও হতো।

রাবেয়ার প্রতি ক্ষোভ ও পরকীয়ার সন্দেহে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন হাবুল। বিষয়টি তিনি সূর্য্য মোল্লাকেও জানান। সূর্য্যও তার সঙ্গে রাবেয়ার ঘটে যাওয়া সার্বিক পরিস্থিতি চিন্তা করে হত্যাকাণ্ডে রাজি হন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১১ আগস্ট রাতে রাবেয়াদের বাড়ি আসেন সূর্য্য। পরে সবাই একসঙ্গে রাতের খাবার খান। রাত আনুমানিক সাড়ে ১০ টায় খাবার শেষ করে রাবেয়ার সন্তানরা ঘুমিয়ে পড়ে। এ সময় হাবুল, সূর্য্য ও রাবেয়া নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করছিলেন। একপর্যায়ে হাবুল সুযোগ বুঝে অতর্কিতভাবে তার গলার ওড়না পেঁচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করেন। রাবেয়াকে পেছন থেকে চেপে ধরেন সূর্য্য। এভাবেই হত্যাকাণ্ডটি ঘটে।

র‌্যাবের এ মুখপাত্র বলেন, হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি কেউ যেন জানতে না পারে এ জন্য রাবেয়ার মরদেহ গুম করতে তার ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে বের করে টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেওয়া হয়। সূর্য্য রাতেই ঘটনাস্থল ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান।

ঘটনার পরদিন শনিবার সকালে রাবেয়ার মা হাবুলের কাছে তার মেয়ের ব্যাপারে জানতে চান। এ সময় হাবুল তার স্ত্রী এনজিওর কাজে অফিসে গিয়েছেন বলে জানান। সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যেতে শাশুড়িকে অনুরোধও করেন।

পরবর্তীতে হাবুল তার শাশুড়িকে জরুরি কাজে ঢাকা যেতে হবে বলে জানান। আসলে তিনি কৌশলে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় আসার পরিকল্পনা করেন। পালানোর সময় তিনি বেশকিছু স্বর্ণ ও রুপার অলংকার এবং গচ্ছিত টাকা নিয়ে আসেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২৩
পিএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।