ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

তাহের হত্যা

ছেলের ফাঁসির খবর জানেন না মা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৩
ছেলের ফাঁসির খবর জানেন না মা

ফরিদপুর: অন্যকোনো বিপত্তির উৎপত্তি না হলে আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাতেই কার্যকর হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিনের।  

শেষ মুহূর্তেও তার শতবর্ষী বৃদ্ধা মা সেতারা বেগম জানেন না ছেলের ফাঁসি হবে আজ রাতেই ।

 

এ বিষয়ে ড. মহিউদ্দিনের ছোট ভাই আরজু মিয়া বলেন, বড় ভাইয়ের ফাঁসির খবর শুনলে মা স্ট্রোক করতে পারেন এ শঙ্কায় তাকে কিছুই জানানো হয়নি।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা আওয়ামী পরিবারের সন্তান। আমার ভাই মামলার ৪ নম্বর আসামি ছিলেন। মামলায় প্রথম ও দ্বিতীয় আসামি খালাস পেলো অথচ আমার ভাইয়ের ফাঁসি বহাল থাকল।

এদিকে, স্বজনদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের সময় নিজেকে ন্যায়বিচারবঞ্চিত দাবি করে স্ত্রীকে দেশের সহায়সম্পত্তি বিক্রি করে সন্তানদের নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যাওয়ার অনুরোধ জানান মহিউদ্দিন।  

অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলার ৪ নম্বর আসামি ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিনের বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দি গ্রামে। তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার খবরে গ্রামের মানুষও বিচলিত।  

জান্দি গ্রামে ড. মহিউদ্দিনের পৈত্রিক বাড়িতে বৃদ্ধা মা ব্যতীত তার চাচাতো ভাইয়েরা বসবাস করেন। তার শতবর্ষী বৃদ্ধা মা কানে একদমই শুনেন না। তিনি এখনো জানেনই না যে তার ছেলের ফাঁসি হচ্ছে। পরিবারের কেউ তাকে কিছু জানায়নি।  

বাড়িতে কোনো সংবাদকর্মী বা আত্মীয়স্বজনের সমাগম দেখলেই তিনি জানতে চাইছেন আগমনের কারণ কি? 

গত ১৭ বছর তার সঙ্গে দেখা নেই ছেলের। এমনকি তার ছেলে যে একটি হত্যা মামলার আসামি তাও জানেন না এই বৃদ্ধা।

ভাঙ্গার জান্দি গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধা মা ও ছোট ভাই আরজু মিয়া ছাড়াও বোন রিনা বেগম এবং দুজন চাচাতো ভাই ছিকু মিয়া ও শাহীন মিয়া বসবাস করেন।  

বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের লোকজন স্তব্ধ হয়ে আছেন। চাচাতো ভাই ছিকু মিয়া জানান, গত মঙ্গলবার দুপুরে তারা ড. মহিউদ্দিনের সঙ্গে শেষ দেখা করে এসেছেন। সেদিন সেখানে ছিলেন মহিউদ্দিনের স্ত্রী, ভাই  আরজু মিয়া, বোন রিনা বেগম, ছিকু মিয়া ও শাহীন মিয়া। বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত তারা সেখানে ছিলেন।  

শেষ কথা কি হয়েছে জানতে চাইলে ছিকু মিয়া বলেন,  ড. মহিউদ্দিন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানতেন না। তিনি ন্যায় বিচার পেলেন না এবং আল্লাহর কাছে এর বিচার দিয়ে গেলাম বলে তাদের বলেছেন। আর তার স্ত্রীকে বলেছেন, ‘যেহেতু এদেশে ন্যায় বিচার পেলাম না, তাই জায়গাজমি বিক্রি করে ছেলেমেয়ে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যেও। ’  

মহিউদ্দিনের ছোট ভাই আরজু বলেন, আমার বড় ভাই নির্দোষ ছিলেন বিধায় মামলা সম্পর্কে কোনো গুরুত্ব দেননি। বড় ভাই বলেছিলেন, ‘অন্যায় করিনি। ইনশাআল্লাহ খালাস পাব। ’ কিন্তু রোষানলে পড়ে আমার ভাইয়ের ফাঁসি হলো। আমার ভাইয়ের বিচার পরকালে পাব।

তিনি আরও বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে একটা চিঠি দিয়েছিল। সেই চিঠি বাড়ি নিয়ে খুলতে বলেছিল। আমরা গাড়ির মধ্যেই চিঠি খুলে দেখেছি তাতে লেখা রয়েছে ২৭-৭-২০২৩ বৃহস্পতিবার রাত দশটা এক মিনিটে ফাঁসি কার্যকর হবে। আমরা লাশ অ্যাম্বুলেন্সে পাঠিয়ে দেব, আপনারা শুধু অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া দিয়ে দিয়েন।  

স্বজনরা জানান, জানাজা বাড়ির মসজিদে এবং জুমার নামাজের আগেই দেওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।  

ওই গ্রামের প্রায় পঁচাত্তর বছর বয়সী বৃদ্ধা হাসিনা বেগম বলেন, মহিউদ্দিন মিয়াকে আমরা গ্রামে বলি সূর্য মিয়া। তার মতো একজন ভদ্র ছেলে আমাদের গ্রামে নাই।  

গ্রামের আরেক যুবক রনি মিয়া বলেন, আমরা শুনেছি মহিউদ্দিন চাচা জাপান, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া থেকে পড়াশুনা করে সোনার মেডেল পেয়েছেন। তিনি একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। তার মতো এমন লোক আর আমাদের এলাকায় হবে না।

ব্যক্তিজীবনে ইয়াফি ও ইউসি নামে এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা ড. মহিউদ্দিন মিয়া। তার বাবা মৃত আব্দুল মান্নান মিয়া খুলনা জুট মিলে চাকরি করতেন।  

১৯৮১ সালে তিনি ভাঙ্গা কেএম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিষয়ে ভর্তি হন। তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৬ , ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।