ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

দু’দিনের বৃষ্টিতেই দুর্বিষহ নগরজীবন

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১০
দু’দিনের বৃষ্টিতেই দুর্বিষহ নগরজীবন

ঢাকা: মাত্র দু’দিনের বৃষ্টিতেই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে রাজধানীর জীবন। অনেক পাড়া-মহল্লা-বসতিতে থই থই করছে দুর্গন্ধময় পানি।

জল-মল-কাদায় একাকার অধিকাংশ রাস্তাঘাট। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে রাস্তায়ই বসে গেছে অসংখ্য যানবাহন। অনেক স্থানে কেবল রাস্তা পার হতেই ধরতে হচ্ছে রিকশা। এর মধ্যেই অফিসে যাওয়া-আসা ও ব্যবসা-বাণিজ্য সামলানোসহ জরুরি সব নিত্যকর্ম সম্পাদন করছে আমজনতা।

আবহাওয়া অফিস জানায়, বুহস্পতিবার ঢাকায় বৃষ্টিপাত হয় ৫১ মিলিমিটার। শুক্রবার হয় ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি। এতেই নাকাল নগরবাসীকে সামলাতে হচ্ছে নাগরিক বৃষ্টির হ্যাপা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর নিষ্কাশন নালাগুলো ময়লা জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় সময়মতো সরতে পারছে না পানি। এছাড়া রাজধানীর আশপাশের খালগুলো বেদখল হয়ে হারিয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি রাস্তা-মহল্লায় তৈরি করছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা।

জলাবদ্ধতা প্রকট হওয়ার কারণ হিসেবে খাল দখল হওয়াসহ ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসনের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। তবে রাজধানীবাসী মনে করে, জলাবদ্ধতার দায় ওয়াসারও বটে। বর্ষা মৌসুমে সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা ও ডেসার উন্নয়ন কাজের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িও জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ।
 
ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানায়, রাজধানী ঢাকায় বছরে ৫৬ কোটি ঘনমিটার পানি নিষ্কাশিত হয়। এর মধ্যে ২৩ কোটি ঘনলিটারই বৃষ্টির পানি। দিনে দশ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হলে তা আর যথাসময়ে নিষ্কাশন হয়না।

ওয়াসা কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, কল্যাণপুর বা বেগুনবাড়ি এলাকায় এখনো খাল টিকে থাকায় ওসব এলাকায় কখনোই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় না। কিন্তু রাজধানীর পুরনো ঢাকা, মতিঝিল, শান্তিনগর, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, কাজিপাড়া ও খিলগাঁওসহ অধিকাংশ এলাকাতেই বৃষ্টির পানি প্রবাহের হার কম। তাই তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। ডায়ারিয়া, আমাশয় ইত্যাগি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

পাকিস্তান আমলে ঢাকার সুয়ারেজ সিসটেম স্থাপিত হওয়ার পর থেকে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ প্রায় প্রতি বছরই তা সংস্কারে কোটি টাকা ব্যয় করছে। কিন্তু কমছে না নাগরিক দুর্ভোগ। বরং বছরের পর বছর ভোগান্তি বেড়েই চলেছে।

বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের সঙ্গে বর্জ্য নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও জড়িত। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই বর্জ্য সঠিকভাবে অপসারিত হয় না। বর্ষা মৌসুমে এই অবস্থা আরও খারাপ হয়।

নগরীর জলাবদ্ধতা নিয়ে বুয়েটের পানি সম্পদ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ডীন ড. এম মনোয়ার হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য মানসিকতা বদলাতে হবে, সৎ হতে হবে এবং উপযুক্ত পরিকল্পনা করতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহর ঘিরে থাকা চার বড় নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যাকে ধ্বংস করা হচ্ছে। ওই চার নদী ছাড়াও এক সময় ঢাকার আশপাশে ৫২টি খাল ছিলো।   যেগুলো স্বাধীনতার পরে কমে হয় ৩৯টি। আরও কমতে কমতে এখন ৫/৭ টিতে নেমে এসেছে। তাই বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হওয়ার সুযোগ খুবই কম। ফলে প্রতি বর্ষাতেই ঢাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। ’

কিন্তু এসব কাজে বরাদ্দ পাওয়া অর্থের যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে তিনি  বলেন, ‘আমাদের মেধা ও ফান্ডের অভাব নেই। এসব কাজে লাগতে হবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা কাজ জানেনা তাদের দিয়েই এসব কাজ করানো হয়। তাই কাজটা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় না। ’

গত দু’দিনের টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতার শিকার মৌচাক এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রফিক বাংলানিউজকে বলেন, বৃষ্টির পানির সঙ্গে ড্রেনের পানি মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নোংরা পানিতে নষ্ট হচ্ছে জুতা-জামা-প্যান্ট।

এ জলাবদ্ধতায় বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগসহ পানিবাহিত রোগের প্রকোপ শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।