ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বরগুনা, ভোলা ও নোয়াখালীতে টর্নেডো

বিপর্যস্ত জনজীবন : ১০ জনের মৃত্যু

ডেস্ক রিপোর্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১০
বিপর্যস্ত জনজীবন : ১০ জনের মৃত্যু

ঢাকা: নিম্নচাপের কারণে উত্তাল বঙ্গোপসাগর। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ-ছয় ফুট উচ্চতায় বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

রাজধানীসহ সারাদেশে ভারি থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত।

শুক্রবার সকালে বরগুনা, ভোলা ও নোয়াখালীতে টর্নেডো ও ঘুর্ণিঝড় আঘাত হানে। বরগুনায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ভোলায় ঠাণ্ডাজনিত কারণে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বাগেরহাটে বজ্রপাতে আরও তিনজন মারা গেছেন।

এছাড়া পটুয়াখালী, ভোলা, সাতীরা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, বরগুনা, বাগেরহাট ও খুলনায় বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এবং নদীতীরবর্তী শতাধিক গ্রাম ও এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

কলাপাড়া আবহাওয়া অফিস ও বরগুনা ঘুর্ণিঝড় প্রস্ততি কর্মসূচির উপ-পরিচালক মো. হাফিজ আহম্দে বাংলানিউজকে জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি বর্তমানে নিম্নচাপে পরিণত হয়ে মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৮৫ কি.মি. দণি-পশ্চিম অবস্থান করছে। নিম্নচাপের প্রভাবে বরগুনাসহ উপকূলীয় এলাকায় ভারীবর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৬-৭ ফুট বৃদ্ধি পেতে পারে।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ বাংলানিউজকে জানান, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ৯ টা পযর্ন্ত ৩ ঘণ্টায় ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটি খুলনায় এখন পর্যন্ত এ বছরের সবোচ্চ মাত্রার বৃষ্টিপাত।

তিনি জানান, এর আগে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪১ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয় ৫১ মিলিমিটার।

এ অবস্থা আগামী ২৪ ঘণ্টা চলতে পারে বলে জানান তিনি।

বরগুনা প্রতিনিধি এমএইচআর রিংকু জানান, বরগুনার আমতলী উপজেলায় শুক্রবার সকালে ঘুর্ণিঝড়ে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্থ হয়েছে। এসময় দেয়াল চাপা পড়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বরগুনার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

সকাল সাড়ে নয়টায় আমতলী উপজেলায় ঝুণিঝড় আঘাত হানে। এতে কয়েকটি গ্রামের শতাধিক কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়। এসময় দেয়াল চাপা পড়ে আঠারোগাছিয়া গ্রামের মিনারা বেগম (২৮) এবং টিয়াখালী গ্রামের নরেন নামের এক শিশু মারা যান।

এসময় অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। গুরুতর আহত ১০ জনকে আমরী হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে সকালে বঙ্গোপসাগের তালতলী মোহনায় আমতলীর এফবি আজমেরী নামক একটি ট্রলার ডুবে ২ জেলে নিখোজ রয়েছে।

এছাড়া চরকলোনি গ্রামে সাফিন (৭) নামের এক শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে।

অবিরাম বর্ষণে বরগুনার বিষখালী বলেশ্বর ও পায়রা নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৭-৮ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় বরগুনার পুরাকাটা-আমতলী ও বড়ইতলা-বাইনচটকি ফেরীঘাটের গ্যাংওয়ে তলিয়ে গেছে। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। শহরের সদর রোড ছাড়া সব রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। শহরের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

জেলার চিংড়ি মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে যাওয়ায় সহস্রাধিক মানুষ কুমিরমারা, গাজী মাহামুদ, বড়ইতলা, তালতলী বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। আমতলীর শারিকখালী, বাদুরগাছা, ঝাড়াখালী এলাকার ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে।

বরগুনা জেলা ট্রালার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা চৌধুরী জানান, সাগর উত্তাল থাকায় মাছধরা সব নৌকা ও ট্রলার আশারচর, কুয়াকাটা, মহিপুর, ফকিরের হাট, চরদুয়ানী ও পাথরঘাটা বন্দরে অবস্থান করছে। এখন পর্যন্ত ৪৭ জেলেসহ তিনটি ট্রলার নিখোঁজ রয়েছে। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

ভোলো প্রতিনিধি ছোটন সাহা জানান, ভোলার সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের চৌদ্দগ্রামে শুক্রবার সকালে টর্নেডোর আঘাতে ৩৯টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘর চাপায় এবং ঠাণ্ডায় শিশুসহ চারজন মারা গেছেন।

চরফ্যাশন থানার ওসি নাসির উদ্দিন মল্লিক বাংলানিউজকে জানান, ঝড়ের কারণ ঘরের চাপায় চরফ্যাশন উপজেলার চর যমুনা গ্রামের জয়নাল আবেদীন (৭০) মারা যান। এছাড়া চর নলুয়া গ্রামের মমতাজ বেগম (৪০) এবদণি ফ্যাশন গ্রামের মাসুমা (৬০) ঠাণ্ডায় মারা যান।

মনপুরা থানার ওসি হারুন-অর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, আন্দিরপাড়া গ্রামের স্বপন দের ছেলে পরম (২) ঠাণ্ডাজনিত কারণে মারা গেছে।

এছাড়া পানিতে ডুবে অর্ধশতাধিক গবাদী পশু মারা গেছে বলেন জানান তিনি।

ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম ফকির বাংলা নিউজকে জানান, জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি দল তিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে য়তির তালিকা করছেন। প্রাথমিভাবে ১৯ টি ঘর সম্পূর্ন বিধ্বস্ত ও আংশিক কিছু ঘর তির তালিকা করা হয়েছে। তিগ্রস্থদের জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

তজুমদ্দিন থানার ওসি আব্দুর রশিদ ভূঁইয়া বাংলানিউজকে জানান, শুক্রবার দুপুরে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে তজুমদ্দিন উজেলার বিচ্চিন্ন চর জহির উদ্দিনের চর নাসরিন ও তেলিয়ার চর এলাকার ৫০টি কাঁচা ও শতাধিক গবাদী পশু মারা গছে।

তিনি জানান, নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রভাবিত হওয়ার ফলে মেঘনা উত্তাল হয়ে ওঠেছে। যে কোনো মুহূর্তে উপজেলার স্লুইজ গেইট পয়েন্ট দিয়ে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে।

নোয়াখালী প্রতিনিধি জামাল হোসেন বিষাদ জানান, নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নের থানার হাট, চর বৈশাখী ও চর ধানের শীষ গ্রামে সকালে টর্নেডো আঘাত হানে। এতে আঘাতে ২০টির বেশি কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত এবং ২ শতাধিক গাছপালা উপড়ে যায়।

প্রবল বৃষ্টির কারণে উপজেলার ১৪ হাজার একর জমির আমন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
 
সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলামুর রহমান জানান, ওয়াপদা ইউনিয়নের ২টি গ্রামে টর্নেডো আঘাত হানে। এতে য়তির পরিমাণ কয়েকটি কাঁচা ঘর, শতাধিক গাঝপালা এবং ১৪ হাজার একর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

স্বাভাবিক চেয়ে ৫ থেকে ৮ফুট উচ্চতায় জোয়ারের ফলে নলচিরা, চরঈশ্বর ও তমরদ্দি কোরালিয়ায় ৪ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার লাধিক লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

খুলনা প্রতিনিধি শেখ হেদায়েতুল্লাহ জানান, শুক্রবার সকালে মাত্র তিন ঘণ্টায় খুলনায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৭০ মিলিমিটার। এটা এ বছরে খুলনায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।

এদিকে গত তিন দিনের অবিরাম বর্ষণে প্রচণ্ড গরম থেকে স্বস্তি মিললেও জনজীবনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কখনও মুষলধারে, কখনও গুড়িগুড়ি বৃষ্টির সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে প্লাবিত হয়ে পড়েছে জেলার নিম্নাঞ্চলসমূহ।

শুক্রবার সকাল থেকে এখন পর্যন্ত (শুক্রবার দুপুর ১২: ৪২ মিনিট) বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে সমগ্র খুলনায়।

বরিশাল প্রতিনিধি জানান, বরিশালের নিš§াঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অঝোর বৃষ্টিতে বিপযর্স্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। নগরীর বগুড়া রোড, কাউনিয়া, আলেকান্দার সড়ক তলিয়ে গেছে।

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চমান পর্যবেক মফিজুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার থেকে লেবুখালী ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বাগেরহাট প্রতিনিধি এম আকবর টুটুল জানান, বাগেরহাট শহরসহ উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি। জোয়ারের পানিতে নয় উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

বাগেরহাট শহর, মোরেলগঞ্জ, রামপাল, শরণখোলার  অন্তত ১০ হাজার মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। শত শত কাঁচা ঘর তিগ্রস্ত হয়েছে। বিসিক শিল্প নগরীতে মিল কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বজলুর রশীদ বাংলানিউজকে জানান, অতিবৃষ্টির কারণে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে শুক্রবার দুপুরে মোল্লাহাট উপজেলার কাহালপুর গ্রামে বজ্রপাতে কাহালপুর গ্রামের পাচু মোল্লার দুই ছেলে ময়েন মোল্লা (২৫) এবং রঞ্জু মোল্লা (২২) মারা গেছেন। বৃষ্টির মধ্যে তারা চিংড়ি ঘেরে কার করছিলেন। বজ্রপাতে আরও তিনজন গুরুতর আহত হন।

এদিকে সুন্দরবনের ভোলা নদীতে মাছ ধরার সময় বজ্্রপাতে কাউছার হাওলাদার (৩৫) আরও একজন মারা যায়।

চট্টগ্রাম থেকে স্টাফ করেসপন্ডেন্ট হাজেরা শিউলি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের কারণে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত এবং  পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরেও বড় জাহাজ (মাদার ভেসেল) থেকে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে পণ্য খালাস করা যাচ্ছেনা

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব সৈয়দ মোহাম্মদ ফরহাদউদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, বৃষ্টির কারণে বাল্ক কার্গো জাহাজ (খোলা ) থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। তবে জেটিতে কনটেইনার জাহাজ থেকে পণ্য খালাস চলছে যথানিয়মে।

বহিনোর্ঙ্গরে প্রায় ৮০টি জাহাজ পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান তিনি।

লাইটার জাহাজ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের নির্বাহী পরিচালক কমোডর এম নিজাম উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, বহির্নোঙ্গরে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাসের জন্য  শুক্রবার ২০টি লাইটারেজ জাহাজের বুকিং দেওয়া হয়েছে। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে জাহাজ চলতে করতে পারছেনা।

লাইটারেজ মালিক সমিতির সভাপতি শফিক আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, কর্নফুলী নদীর  ১৭টি ঘাটে প্রায় দেড়শ’ লাইটারেজ জাহাজ বসে আছে।

দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১০০ মিলিমিটার  বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। এতে নগরীর চকবাজার, হালিশহর, বিশ্বরোড , মুরাদপুর, আগ্রাবাদ, বহদ্দারহাট , বাদুরতলা এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

প্রবল বর্ষণে আনোয়ারা উপজেলার বারোআউলিয়া, সরেঙ্গা ও ফকিরহাট এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

উপজেলার রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সৈয়দ চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান , ইউনিয়নের বারোআউলিয়া বেড়িবাধের এক কিলোমিটার  এলাকা পুরো বিলীন হয়ে গেছে।

কক্সবাজার থেকে আনছার হোসেন জানান, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে কক্সবাজারের উপকূল এলাকা নিচু অংশ প্লাবিত হয়েছে। টেকনাফ, কুতুবদিয়া, সদর উপজেলা ও পেকুয়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। সাগরের জোয়ারের পানিতে ঢুবে গেছে কয়েকশত বসতবাড়ি।

কক্সবাজার শহরতলিতেই ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। শতশত একর চিংড়ি ঘের বিলীন হয়েছে। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে অন্তত ২৫টি ফিশিং ট্রলার। এতে নিখোঁজ রয়েছেন ৩ শতাধিক জেলে।

টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এম এম নাজিম উদ্দিন বাংলানউজকে জানান, টেকনাফের দক্ষিণ সীমান্ত উপকূলীয় এলাকা শাহপরীরদ্বীপে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সাগরের পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে।

শাহপরীর দ্বীপ এলাকার উপকূলবর্তী অন্তত ৫০০ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান শফিক মিয়া সাংবাদিকদের জানান, টেকনাফ জালিয়াপাড়া থেকে শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়া পর্যন্ত বেড়িবাঁধটি যে কোনো সময় ভেঙ্গে যেতে পারে।
 
কোনাখালী করিমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মহিউদ্দিন জানান, টানাবর্ষণে রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসতে পারছে না।

চিংড়ি ঘের মালিক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চকরিয়া ও মহেশখালী উপজেলায় অন্তত ৪ হাজার একর মাছের ঘের সমুদ্রের পানিতে ভেসে গেছে।
 
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল বাংলানিউজকে জানান, সদর উপজেলার ভারুয়াখালী, পোকখালী এলাকায় বেশ কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে চিংড়ি ঘের, ফসলি জমি ও সাধারণ মানুষের ঘর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

কুমিল্লা প্রতিনিধি কাজী এনামূল হক জানান, শহরের প্রায় সব রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার কারণে কুমিল্লাবাসী দুর্ভোগে পড়েছেন।

তিন দিনের বৃষ্টিপাতে শহরের কান্দিরপাড় মনোহরপুর, স্টেডিয়াম মার্কেট, ঠাকুর পাড়া বৌদ্ধ আশ্রম রোড, কালিগাছতলা, বাগিচাগাওঁ, রেইসকোর্সসহ শহরের নিমাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

পটুয়াখালী প্রতিনিধি মুজাহিদ প্রিন্স জানান, পটুয়াখালীতে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে দমকা ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। প্রবল জোয়ারে ৭ থেকে ৮ ফুট জলোচচ্ছাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলার কয়েক লাখ মানুষ। ৎ

পটুয়াখালী শহর রা বাঁধ ২০টি পয়েন্টে ধসে জেলা এখন ৫ থেকে ৭ ফুট পানির নিচে। সবকটি উপজেলার বেরীবাঁধ ভেঙ্গে গেছে।

চরআন্ডা, চরকাসেম, চরকলাগাছিয়া, চরহেয়ার, চরবাংলা, চরবাশবাড়িয়া, চরভূতম, চরহাদি, চরলক্ষী, চরখালী, চরব্যারেটসহ বেরীবাঁধ বিহীন অন্তত অর্ধশতাধীক চরে  পানিবন্দি হয়ে পরেছে কয়েক হাজার মানুষ।

জেলার কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া, দশমিনা উপজেলার  আলিপুর, রনগোপালদি, আউলিয়াপুর, গলাচিপা উপজেলার চরমোন্তাজ, বন্যাতলী, পানপট্টি, আমখোলা, দরিবাহেরচর, চরকাজল, চরবিশ্বাস, বড় বাইশদিয়া, মির্জাগঞ্জ উপজেলার চরখালী, রানীপুর দুমকী উপজেলার আঙ্গারিয়া, মুরাদিয়া, সদর উপজেলার লাউকাঠি, লোহালিয়া, ইটবাড়িয়া, আউলিয়াপুর, বলইকাঠি ,বাদুরা  এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেরীবাঁধ ভেঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে মারাত্মক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

ফেরি ঘাটের গ্যাংওয়ে ডুবে থাকায় অভ্যন্তরীণ সব রুটে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ থেকে ফারহানা মির্জা জানান, বৈরী আবাহওয়ায় মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌ রুটে ফেরি চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। ]

বিআইডব্লিউটিসি’র সহকারী ব্যবস্থাপক শেখর চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে জানান, পৌনে চার ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ফেরি চলাচল শুরু হলেও যে কোনো সময় বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মুন্সীগঞ্জের প্রধান সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে বর্ষণের কারণে দিনমজুর ও ছিন্নমূল মানুষের দুভোর্গ চরমে ওঠেছে।

পিরোজপুর প্রতিনিধি রশিদ আল মুনান জানান, জোয়ারের কারণে জেলার সকল নদ নদীর পানি বেড়েছে। জেলার তিনটি ঘাটের ফেরি চলাচল  বন্ধ রাখা হয়েছে। জেলার সব রুটের ছোট লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।

মঠবাড়িয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, পানির চাপে জেলার  মঠবাড়িয়ার  মাঝের চর, সাপলেজা, খেতাচিড়া, কচুবাড়িয়া, ভোলমারার অধিকাংশ স্থান তলিয়ে গেছে।

অপর দিকে মৎস বিভাগ জানিয়েছে জেলার নাজিরপুর, স্বরূপকাঠী, মঠবাড়িয়া, ভাণ্ডরিয়া, জিয়ানগর, কাউখালী ও পিরোজপুর সদর উপজেলার কয়েক’শ মাছের ঘের তলিয়ে গেছে।

পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মো. রুহূল আমীন জনান, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথাযথ প্রস্তুতি রয়েছে

সিলেট থেকে স্টাফ করেসপন্ডেন্ট জানান, টানা বৃষ্টিপাতে নগরীর অনেক স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলের ইরিধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে বিকাল ছয়টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় ১০৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আরো দুই-একদিন এ অবস্থা থাকতে পারে বলে সিলেট আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেণ কর্মকর্তা অমিত হাসান বাংলানিউজকে জানান।

টানা বৃষ্টিপাতে নগরীর মেন্দিবাগ, ঝর্ণারপাড়, বনকলাপাড়া, কোয়ারপাড়, কুমারপাড়, ছড়ারপার, রাজারগুলি, উপ-শহরের একাংশ, হাওয়াপাড়া, পায়ড়া প্রভৃতি নিম্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

যাত্রী স্বল্পতার কারণে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের একটি অভ্যন্তরীণ ফাইট বাতিল করা হয়েছে।

ঝালকাঠি প্রতিনিধি কাজী খলিলুর রহমান জানান, জেলার ৩২ টি ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি। জেলার বেশ কিছু মাছের ঘের ও চাষ করা পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। জেলায় ৯০ ভাগ পানের বরজ তিনদিন ধরে পানির নিচে ডুবে থাকায় পানের বরজ নষ্ট হয়ে হেছে।

জেলা প্রশাসক অশোক কুমার বিশ্বাস বাংলানিউজকে জানান, পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ন্ত্রণ ক খোলা হয়েছে। জেলা ও উপজেলার সরকারি কর্মকর্তাদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ফেনী প্রতিনিধি শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার জানান, জেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি। আমন ধানের ফসল, সবজির ব্যাপক তি ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। শতাধিক কাচা ঘরবাড়ীর তি হয়েছে।

সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জহির রায়হান বাংলানিউজকে জানান, সোনাগাজী সদর, চর চান্দিয়া ও চর দরবেশ ইউনিয়ন ও চর মজিলিশপুর ইউনিয়নের ১২টি গ্রামে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।

চর চান্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন আহম্মদ জানান, দনি পূর্ব চর চান্দিয়ায় বেড়িবাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে ৪-৫ ফুট উচু জলোচ্ছাসের পানি বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে পড়েছে।

ফেনী পৌর এলাকায় একাডেমি সড়ক, এসএসকে সড়ক, শান্তি কোম্পানি সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক এক থেকে দেড় ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি মাহবুব হোসেন সারমাত জানান, তিন দিনের বর্ষণে পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। েেতর উঠতি ফসলের তি হয়েছে। বর্ষণে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় শহরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের হয়নি মানুষ। দিন মজুর শ্রেণীর মানুষ কাজে বের হতে পারেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad