ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ফোনে বিয়ে, সশরীরে বউ দেখার আগেই না ফেরার দেশে রুবেল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২৩
ফোনে বিয়ে, সশরীরে বউ দেখার আগেই না ফেরার দেশে রুবেল

রাজশাহী: আর দশ জনের মতোই বড় স্বপ্নের খোঁজে দেশ ছেড়ে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন রুবেল হোসাইন। সাত বছর ধরে দেশটিতে ছিলেন তিনি।

নয় মাস ছয় দিন আগে মোবাইলে ভিডিও কনফারেন্সে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু ভয়াল আগুন তাকে কেড়ে নিয়েছে পরিবারের কাছ থেকে। বিয়ে করা বউয়ের বাস্তব মুখও দেখে যেতে পারলেন না রুবেল। এদিকে দেশে তার স্ত্রীর শত-সহস্র আশা ভেঙে গেছে, ছাই হয়ে গেছে সব স্বপ্ন।

সৌদি আরবের স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকাল ৪টায় রাজধানী রিয়াদের ৩৫০ কিলোমিটার পূর্বে আল আহসা শহরের হুফুফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি এলাকায় একটি ফার্নিচার কারখানায় আগুনের ঘটনায় ৯ বাংলাদেশিসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যেই একজন রাজশাহীর বাগমারার বারইপাড়ার জফির উদ্দিনের ছেলে রুবেল হোসাইন। ৯ মাস আগে যাকে বিয়ে করেছিলেন তার নাম মরিয়ম আক্তার। তিনি কলেজ ছাত্রী।

বিয়ের আগে দুজনের মধ্যে প্রেম বিনিময় হয়েছিল। বিয়ের অল্প কয়মাসের মধ্যে বিধবা হওয়া মরিয়ম এখন পাগল প্রায়। তার বুকফাটা কান্না, আর্তনাদ আর প্রলাপে অশ্রু ঝরছে পাড়া-প্রতিবেশীদেরও। কোনোভাবেই মরিয়মের আহাজারি থামানো যাচ্ছে না। মোবাইলে স্বামীর ছবি দেখছেন আর বিলাপ করে যাচ্ছে। কখনো মূর্ছা যাচ্ছেন, কখনো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছেন।

সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন বাংলানিউজের এ প্রতিবেদক। সাংবাদিক শব্দটি শুনে মরিয়ম চিৎকার করে বলতে শুরু করেন, ‘আমার স্বামিক আমি কাছ থেকে দেখিনি। যা দেখেছি দূরে থ্যাকা রে। যত কথা কছে দূরে থ্যাকাই কথা কছে রে। আমার স্বামীকে একটা বার হলেও দেখতে চাই। আপনাদের পায়ে ধরি রে, আমার স্বামিক একনা এনে দেনরে ভাই। ’

কান্না করতে করতে তিনি জানান, ফোনে কথা বলার সময় তিনি রুবেলকে রাগ দেখাতেন। বারবার দেশে চলে আসার কথা বলতেন। তবে রুবেল তাকে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাতেন। ধৈর্য ধরতে বলতেন। একদিন সব স্বপ্ন পূরণ হবে- দূর থেকে শুধু এ সান্ত্বনাই দিতেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রাত ১২টার দিকে স্বামী-স্ত্রীর শেষ কথা হয়। মরিয়মকে এ সময় রুবেল জানান, দেশে ফেরার জন্য শুক্রবার (১৪ জুলাই) কাগজপত্র জমা দিয়ে কারখানায় যাবেন। শুক্রবার রাতেই আবার কথা বলবে বলে জানান। মরিয়ম সে রাতে রুবেলকে কল দিয়েছিলেন। ফোন বেজেছিল, কিন্তু কেউ রিসিভ করেনি। পরে ফোন বন্ধ হয়ে যায়। শনিবার (১৫ জুলাই) সকাল ৮টার দিকে রুবেলের বড় ভাই ফোন করে জানান, তিনি (রুবেল) আর নেই।

তিন ভাইয়ের মধ্যে রুবেল হোসাইনই ছিলেন সবার ছোটে। স্থানীয় এক দালালকে ১৬ কাঠা জমি লিখে দেওয়া ছাড়াও দেড় লাখ টাকা নগদ দিয়ে ২০১৬ সালে সৌদি আরব গিয়েছিলেন তিনি। তার বড় দুই ভাই আগে থেকেই প্রবাসী। বড়ভাই সৌদি আরব এবং মেজ ভাই দুবাই থাকেন। রুবেলকে হারিয়ে পরিবারের সবাই এখন বাকরুদ্ধ। সরকারের কাছে তারা যত দ্রুত সম্ভব রুবেলের মরদেহ ফেরত দিতে অনুরোধ করেছেন।

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমন চৌধুরী জানান, সরকারিভাবে তাদের পরিবারের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। এ বিষয়ে তাদের কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় বিষয়টি মনিটরিং করছেন।

সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর নির্দেশে কাউন্সিলর (শ্রম) মুহাম্মাদ রেজায়ে রাব্বী দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিয়ে নিহতদের মরদেহের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২৩
এসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।