ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রিমুর জন্য স্বামীর কান্না: তুমারে আর কামে পাঠামু না

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১০
রিমুর জন্য স্বামীর কান্না:  তুমারে আর কামে পাঠামু না

ঢাকা : ‘বউ, তুমি কথা কও না ক্যান? তুমি ভালো হয়্যা গেলে আমি  তোমারে আর কামে পাঠামু না। কথা দিলাম, এইবার আমারে মাপ কইরা দ্যাও।

ভালো হয়্যা গেলে এক বেলা খামু, তবু তুমারে কামে পাঠামু না। ’

কখনও রিকশা চালিয়ে, কখনও তরকারি বেচে জামালউদ্দিন তার সংসার চালাতে পারতেন না। তাই স্ত্রী রিমু আক্তারকে কাজে পাঠাতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু তখন কি জামাল জানতেন, রিমু আর ফিরবেন না কাজ থেকে?
 
বুধবার যাত্রাবাড়ীর কেমিকেল কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে যে চারজন গুরুতর আহত হয়েছিলেন তার মধ্যে বৃহস্পতিবার মারা গেছেন দু’জন। এর একজন রিমু আক্তার (২০)। অন্যজন শিউলী আক্তার (২২)।

রিমুর লাশ নিয়ে জামাল যেমন হাউমাউ করে কাঁদছিলেন শিউলীর বাবা টিটু হাওলাদার তা পারছিলেন না। অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছেন তিনি।

নিহত নয়জনের মধ্যে এ দু’জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলেও এখনও মর্গে পড়ে আছে সাতটি লাশ।

রিমুকে নিয়ে জামাল কেমিকেল কারখানার পাশেই থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার পোলাপাল গ্রামে।

জামালউদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, তার একার পক্ষে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হওয়ায় রিমু ওই কারখানায় চাকরি নেয়। রিমুর বেতনের ২৮০০ টাকার সঙ্গে তার নিজের আয় দিয়ে মোটামুটি ভালোই চলছিল সংসার।

আগুন লাগার দিন সকালে কারখানায় যাওয়ার আগে রিমু জামালকে বলে যান, ‘ভালোভাবে থেকো। খাওয়া-দাওয়া করে নিও। সমস্যা হলে জানাবোনি। ’

দীর্ঘশ্বাস নিয়ে জামাল বলেন, ‘এই ছিল তার শেষ কথা। ’

ঘটনার দিন জামালউদ্দিন আগুনের কথা শুনে রাত সাড়ে আটটায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান উদ্ধার তৎপরতা চলছে। সেখানে তিনি তার স্ত্রীর খোঁজ নিতে থাকেন। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পান না। পরে আশেপাশের লোকজনের কাছে জানতে পারেন বেশ কিছু আহতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

জামাল ছুটে যান হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। রাত নয়টার দিকে খুঁজে পান রিমুকে। স্ত্রীর সঙ্গে তিনি সারা রাত কথা বলার চেষ্টা করেন।

‘সকালে শুধুমাত্র একবার গোঙানির মতো একটু শব্দ করে রিমু, তারপর সবশেষ। ’ বলেন জামাল, চোখ মুছতে মুছতে।

শিউলীর বাড়ি পটুয়াখালী সদরের গোপখালী গ্রামে। দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারের সন্তান শিউলী ঢাকায় ৫/১ দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীতে থাকতেন।

গরিব বাবাকে সাহায্য করতে শিউলী কাজ নিয়েছিলেন লিলি কেমিক্যাল কারখানায়।

‘কিন্তু এ কারখানা যে মৃত্যুফাঁদ তা জানলে কি আমি ওকে এখানে পাঠাতাম ?’ অশ্রুভারাক্রান্ত টিটু হাওলাদারের কণ্ঠে ফুটে ওঠে ক্ষোভ।

এদিকে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রায় কয়েকশ’ মানুষ তাদের প্রিয় মানুষের লাশ সারা দিনেও শনাক্ত করতে পারেননি। তাদের আহাজারিতে বুড়িগঙ্গার বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। তাদের চোখে মুখে দানা বাঁধছে ক্ষোভ।

তারা মানতে পারছে না এ অন্যায় মৃত্যু।

বাংলাদেশ সময় : ২২২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।