ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

যাত্রাবাড়ির ৩ কি. মি এলাকায় সহস্রাধিক ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা

সাঈদুর রহমান রিমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১০

ঢাকা: রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, মীরহাজিরবাগ, জুরাইন ও শ্যামপুরের মাত্র তিন বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে সহস্রাধিক ‘বিপজ্জনক প্রতিষ্ঠান’। চলছে আবাসিক বাড়িঘর, বাণিজ্যিক দোকানপাট আর মিল-কারখানার ঝুঁকিপূর্ণ সহাবস্থান।



এলাকার অধিকাংশ বাড়িতেই অবৈধ কল-কারখানা আর কেমিক্যাল গুদামের ছড়াছড়ি। অনুমোদনহীন বেশিরভাগ কারখানায় বয়লার স্থাপন করা হয়েছে। আছে হাতুড়ে মার্কা ঝুঁকিপূর্ণ যন্ত্রপাতির অবাধ ব্যবহার।

বয়লার পরিদর্শন টিমের কর্মকর্তারা ওই এলাকা পরিদর্শন শেষে বাংলানিউজকে বলেছেন, এখানে বৈধ কারখানা খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই অবৈধ কারখানা আর ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাত্রা চোখে পড়ে।

বুধবার বিকেলে ধোলাইপাড়ে লিলি কেমিক্যালস কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নয় জন নিহত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সরেজমিন অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের বয়লার পরিদর্শন টিম ঘটনাস্থলে যাওয়ায় এলাকার কারখানা মালিকদের মধ্যে চরম আতংক দেখা দেয়। অনেক কারখানার সাইনবোর্ড খুলে ফেলা হয়, কেমিক্যাল গুদামগুলোতে তালা ঝোলানোর হিড়িক পড়ে।

অবৈধ কারখানাগুলোর বেশিরভাগই চাপা গলি, ঘুপচি জায়গায় স্থাপিত। কাজকর্মও চলে চুপিসারে। আশপাশের বাসিন্দারা এসব কারখানায় চাকরির সুযোগ পায় বলে তারা বরাবরই কারখানা মালিকের পক্ষে অবস্থান নিয়ে থাকে। তাছাড়া বাড়ির মালিকরাও কারখানা ভাড়া দিয়ে দ্বিগুণ অর্থ উপার্জন করছেন।

তাছাড়া কারখানার জন্য ভাড়া দেওয়ার সুবাদে বাড়ি মালিকদের গ্যাস, বিদ্যুত আর পানির বিল নিয়ে চিন্তা করতে হয়না।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, বাড়িওয়ালার নামে নেওয়া গ্যাস, বিদ্যুত, পানির আবাসিক সংযোগ সুবিধা ব্যবহার করে কারখানা পরিচালিত হয় এবং ওই বাড়ির সব ইউটিলিটি বিল কারখানা মালিক বহন করেন। বিনিময়ে কারখানা মালিক শুধু বাড়িওয়ালার নিরাপত্তা বেষ্টনি আশা করেন।

লিলি কেমিক্যালস, শফিক ফ্যান কোং, রশিদ জর্দ্দা, শ্যামা বৈদ্যুতিক বাতি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, জান্নাতআরা কেমিক্যালস, রজনী কেমিক্যালস, সুরভী পারফিউম, জীবন মোজা- এমন আরও কয়েকশ’ কারখানা অবৈধভাবে গজিয়ে ওঠেছে এলাকাবাসীর চোখের সামনেই।

অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্থানীয় থানা, বিএসটিআই, বিস্ফোরক অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থার একশ্রেণীর কর্মচারী নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা বাংলানিউজকে জানান, মাসোহারা বিনিময়েই সহস্রাধিক অবৈধ কারখানা ও কেমিক্যাল গুদাম দাপটের সঙ্গেই টিকে রয়েছে। এসব কারখানা মালিকদের বিরুদ্ধে টু শব্দটিও করার জো নেই।

রাত-দিন কল-কারখানার বিষোদগার, কেমিক্যাল বর্জ্য, উচ্চমাত্রার শব্দসহ নানা অত্যাচার সহ্য করেই বাস করছেন এলাকাবাসী। পরিবেশ দূষণ রোধের ব্যাপারে কেউ এগিয়ে আসে না বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগিরা।
 
এসব ব্যাপারে বিএসটিআই’র উপ-পরিচালক আবু হানিফ বাংলানিউজকে জানান, যাত্রাবাড়ি, শ্যামপুর ও কদমতলী থানা এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক অবৈধ কারখানা গজিয়ে ওঠার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, ‘অবৈধ কারখানাগুলো সরকারি কোনো সংস্থা থেকে কোনোরকম অনুমোদন নেয়নি। এরইমধ্যে অনুমোদনহীন কারখানাগুলোর তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পেলে মামলাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধান বয়লার পরিদর্শক মো. বাকীবিল্লাহ বলেন, ‘যাত্রাবাড়ি ও এর আশপাশের এলাকাটি মোটেই কলকারখানা গড়ে তোলার উপযোগী নয়। তবু সেখানে ব্যঙের ছাতার মতো শত শত কারখানা স্থাপন হয়েছে। দক্ষ কর্মী ছাড়াই বসানো হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ বয়লার। ’

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘন্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।