ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

অধ্যাপক তাহের হত্যা: মৃত্যুণ্ডপ্রাপ্ত মহিউদ্দিন চূড়ান্ত বরখাস্ত হন এক মাস আগে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২৩
অধ্যাপক তাহের হত্যা: মৃত্যুণ্ডপ্রাপ্ত মহিউদ্দিন চূড়ান্ত বরখাস্ত হন এক মাস আগে

রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিনকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয় এক মাস আগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে ২০০৮ সালের ২২ মে থেকে সহযোগী অধ্যাপকের পদ ও চাকরি থেকে তাকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করা হয়।

তবে রায়ের দিন থেকে অর্থাৎ ১৫ বছর আগে থেকে তাকে চূড়ান্ত বরখাস্ত দেখানো হয়েছে।  মামলাটি উচ্চ আদালতে রিভিউয়ে থাকায় চূড়ান্ত বরখাস্তের আদেশের চিঠি স্বাক্ষর করা হয়েছে চলতি বছরের ২৩ মে।

রেজিস্ট্রার আবদুস সালাম জানান, ২০০৮ সালের ২২ মে নিম্ন আদালতে সাজা হওয়ায় ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মো. মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে বিশ্ববিদ্যালয় চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী (২০১৮/৪২ ধারা) ওই দিন থেকেই চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে উচ্চ আদালতে মামালাটি রিভিউয়ে থাকায় গত ২৩ মে সেই আদেশে স্বাক্ষর করা হয়েছে। এর আগে তিনি সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় ছিলেন।

এ দিকে মহিউদ্দিনের ফাঁসির রায় কবে কার্যকর করা হবে জানতে চাইলে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নিজাম উদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হাওয়ার পর সেই চিঠি ডাকযোগে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছেছে।

এ কারণে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা নেই। জেল কোডে অনুযায়ী প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের চিঠি হাতে পাওয়ার পর ২১ থেকে ২৮ দিনের দিনের মধ্যে যেকোনো দিন ফাঁসি কার্যকর করা যাবে। তাই কনডেম সেলে বন্দি থাকা দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরের পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে ফাঁসির আগে শেষ দেখা করার জন্য দণ্ডিতদের পরিবারকে এখনো দিন-ক্ষণ জানানো হয়নি। জেল কোড অনুযায়ী স্বজনদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের পর ফাঁসির ক্ষণ গণনা শুরু হবে বলে জানান রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার।

২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক কোয়ার্টার থেকে নিখোঁজ হন অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ। বাড়িতে তিনি একাই থাকতেন। কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম তার দেখাশোনা করতেন। পরদিন বাড়ির পেছনের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় ড. এস তাহেরের মরদেহ।

এরপর অধ্যাপক তাহেরের করা একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) সূত্র ধরে একই বিভাগের শিক্ষক মিয়া মো. মহিউদ্দিন ও রাবি ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী, তার বাড়ির কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীরসহ আটজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর ওই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারদের মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে তারা বলেন, অধ্যাপক ড. এস তাহের বিভাগের একাডেমিক কমিটির প্রধান ছিলেন। একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মহিউদ্দিন অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য কমিটির সুপারিশ চেয়ে আসছিলেন। কিন্তু বাস্তব কারণে অধ্যাপক তাহের তা দিতে অস্বীকার করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মো. মহিউদ্দিন এই হত্যার পরিকল্পনা করেন। বালিশ চাপা দিয়ে খুনের পর বাড়ির ভেতরে থাকা চটের বস্তায় ভরে অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ বাড়ির পেছনে নেওয়া হয়। মরদেহ গুমের জন্য জাহাঙ্গীররের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুলের স্ত্রীর ভাই আবদুস সালামকে ডেকে আনা হয়। তাদের সহায়তায় পেছনের ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে ড. তাহেরের মরদেহ ফেলা হয়।

২০০৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহেরের মরদেহ। এই ঘটনায় ৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় পুলিশ।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন।

দণ্ডিতরা হলেন, রাবি ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. এস তাহেরের বাড়ির সেই কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের সমন্ধী আব্দুস সালাম।

খালাসপ্রাপ্ত চার্জশিটভুক্ত দুই আসামি হলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী। ২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রাবি অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন করেন হাইকোর্ট।

এরপর আবারও রিভিউ আবেদন করেন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি। তবে এ বছরের ২ মার্চ রাবি অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুজনের ফাঁসি এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।

নিম্ন আদালতে দুজনের মৃত্যুদণ্ডের যে রায় এসেছিল তাই বহাল থাকে আপিল বিভাগে, খারিজ হয় রিভিউ আবেদনও।

এজন্য প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না তাদের কাছে। তবে এরপরও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় দণ্ডিত এই দুজনের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে গত ৭ মে ফের রিট আবেদন করেন তাদের স্বজনরা। কিন্তু উত্থাপিত হয়নি মর্মে পরবর্তীতে সেই আবেদনও খারিজ করে দেন বিচারপতি মো. জাফর আহমেদ ও মো. বশির উল্ল্যার হাইকোর্ট বেঞ্চ। মূলত এর পরই কারা বিধি অনুযায়ী ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে এই ঘটনায় দোষ স্বীকার করে নিজেদের প্রাণভিক্ষার আবেদন জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২৩
এসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।