ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

‘পুলিশের প্রচেষ্টা না থাকলে ঢাকায় আরও খারাপ অবস্থা থাকতে পারত’ 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২৩
‘পুলিশের প্রচেষ্টা না থাকলে ঢাকায় আরও খারাপ অবস্থা থাকতে পারত’ 

ঢাকা: রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) খ. মহিদ উদ্দিন বলেছেন, পুলিশের প্রচেষ্টা যদি না থাকত, আমি মনে করি যে, এর চেয়ে অনেক খারাপ অবস্থা ঢাকায় থাকতে পারত। ইংল্যান্ডে ১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না।

কী পরিস্থিতি হয়েছিল, তা আপনারা জানেন।  

তিনি বলেন, আমাদের দেশে যে ইংল্যান্ডের মতো পরিস্থিতি হয় না, এর কারণ হলো, দেশে পুলিশের উপস্থিতি ও আইন রয়েছে। তবে কিছু ঘটনা ঘটছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। তবে আমরা গভীরভাবে সতর্ক রয়েছি। ডিএমপি কমিশনার এই বিষয়ে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

সোমবার (৩ জুলাই) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন খ. মহিদ উদ্দিন।

তিনি বলেন, একটি বিষয় জানিয়ে রাখি, ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের যে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে তা আরও গতিশীল করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শকের নির্দেশনা রয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন করছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার। গত ৪৮ ঘণ্টায় আমরা ১৪৫ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছি। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ১১৪ জন এবং এর আগের ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩১ জন।  

ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এই অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, বাড্ডার একটি বাসায় ডাকাতির ঘটনায় আমরা ইতোমধ্যে অপরাধীদের চিহ্নিত করেছি। আর বাড্ডায় ট্রাকে গরু বিক্রির টাকা ডাকাতির ঘটনা চলন্ত অবস্থায় সড়কে ঘটেছে। এটা তো আসলে একটু জটিল।  

তিনি বলেন, প্রথমত যদি ধরেন আপনি একটি ট্রাকের মধ্যে একসঙ্গে ৩০ জন যাত্রা করলেন। মাঝখানে গিয়ে দেখলেন, আপনার সঙ্গে আটজন লোক অন্য আচরণ করছে। তারাও যাত্রী হিসেবে উঠেছিলেন। এসব ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের একটু সচেতনতা দরকার। আমরা সবসময়ই ক্যাম্পেইন (প্রচারণা) করে থাকি যে, অপরিচিত কারো সঙ্গে গাড়িতে উঠবেন কি না।

তিনি আরও বলেন, তবে গরু বিক্রির টাকা ডাকাতির ঘটনায় আমরা যতটুকু জেনেছি, তাদের কাছে বড় ধরনের কোনো অস্ত্র ছিল না। এসব ঘটনার প্রত্যেকটিতেই আমরা অপরাধীদের চিহ্নিত করার পর্যায়ে আছি। চিহ্নিত করা যাবে না, সেটা আমরাও আশা করি না। চিহ্নিত করা গেলেই আসলে কাজ করা সম্ভব।

মহিদ উদ্দিন বলেন, আমরা যদি চিন্তা করি সমাজ হবে অপরাধমুক্ত, তাহলে সেটি আসলে কাল্পনিক চিন্তা। এটি আসলে পুরোপুরি অসম্ভব। আমাদের চেষ্টা করতে হবে। দেখতে হবে আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি আছে কি না। আমাদের অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা রাতদিন কাজ করছেন।

নিরাপত্তার জন্য পুলিশের কিছু আগাম কার্যক্রম হিসেবে পুলিশি টহল, চেকপোস্ট, গোয়েন্দা কার্যক্রম থাকে। এবারের ঈদের আগে এসব কাজে কোনো ব্যত্যয় ছিল কি না-  প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ঈদের আগে ১ হাজার ৭৬৪ জন ছিনতাইকারীকে ধরা হয়েছে। আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, আমাদের মনে রাখতে হবে ছিনতাইকারীদের আমরা যখন আইনের মাধ্যমে আদালতে পাঠাই, তারা একটা সময় জামিন পেয়ে যান। জামিন পেয়ে আবার সমাজের সাথে মিশে যান তারা। এই সীমাবদ্ধতা নির্মূল করার ক্ষমতা আমাদের নেই। এগুলোও কিন্তু একটা বাস্তবতা।  

তিনি আরও বলেন, মনে রাখবেন দুই কোটি নাগরিক ঢাকায় বসবাস করেন। এর মধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে ৫০ লাখের বেশি মানুষ ঢাকায় যাতায়াত করেন। এই রকম পরিস্থিতিতে আমাদের দেশ কিন্তু সিঙ্গাপুরের মতো নয় যে, মহাসড়ক থেকে মহাসড়ক হয়ে বেরিয়ে যাবেন। এখানে কোথাও নদী, খাল, কালভার্ট আছে, কোথাও মহাসড়ক। অথচ পৃথিবীতে অনেক দেশে ২ কোটি লোকও নেই। এ ছাড়া যেসব অপরাধ আমরা আগে থেকে নিবারণ করে ফেলি, সে বিষয়ে কিন্তু কোনো পরিসংখ্যান নেই। এই পরিসংখ্যান আমিও জানি না, কেউ জানতেও পারে না।

ঢাকার বেশ কিছু স্থানে ছিনতাইয়ের বিষয়ে পুলিশের এই অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আমাদের কাছে তালিকাও রয়েছে। ঈদের আগে আমরা ১ হাজার ৭৬৪ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছি। গত দুই দিনে ১৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এদের অধিকাংশই কিন্তু ছিন্নমূল ও রাস্তায় বসবাস করে। তাদের যে বয়স, তারা সেখান থেকে মাদক জোগাড় করে তা নেয়। তারা পরিবারের কাছে ফিরে যায় না। এমন লোকজন আছে। সার্বিকভাবে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তারপরও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ঈদের সময় দুটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা আগেও বলেছি, পুরোপুরিভাবে এগুলো নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব না। ইউরোপের মতো জায়গায় প্রচুর বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। সুইজারল্যান্ডের মতো জায়গায় এমন হচ্ছে, তাদের তো অন্ন-বস্ত্রের কোনো অসুবিধা নেই, থাকার অসুবিধা নেই।

পুলিশ কনস্টেবল নিহত ও সাংবাদিক আহতের ঘটনাসহ ছিনতাই রোধে পুলিশের কোনো গাফিলতি ছিল কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কারো যদি গাফিলতি থাকে, আমরা চেষ্টা করি তাকে জবাবদিহির আওতায় আনতে। এটি না করার কোনো কারণ নেই, কারণ আজ আমি নিজেও প্রশ্নবিদ্ধ। তাই যখনই এই ধরনের ঘটনা ঘটে, তখন ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এটি অনেক ডিপার্টমেন্ট চিন্তাও করে না। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশে তাৎক্ষণিক জেরা করা হয়, কেন হয়েছে, কীভাবে হয়েছে।

আর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটা জিনিস আমাদের বুঝতে হবে, ব্যক্তিগত জিনিস ও নিজের শরীরের নিরাপত্তা কিন্তু পৃথিবীতে প্রত্যেকের নিজেকেই দিতে হয়। রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব রয়েছে। তবে অনেকে দেখা যায়, রাতে বা বাসের বাইরে মোবাইল রেখে কথা বলছে। ছিনতাইকারীরা তা টান দিয়ে নিয়ে নিচ্ছে। এই ধরনের বিষয়ের কারণেই কিন্তু মোবাইল ফোন ছিনতাই হতে থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২৩
এমএমআই/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।