ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আইন প্রণয়ণের দাবি এক নির্যাতিত পুরুষের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১০
পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আইন প্রণয়ণের দাবি এক নির্যাতিত পুরুষের

ঢাকা; ‘এমন একটি আইন করুন যাতে আমার মতো নির্মম নির্যাতনের শিকার পুরুষরা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন’।

পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ণের দাবি করে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে এ কথাগুলো বলেছেন স্ত্রী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের দ্বারা নির্মম নির্যাতনের শিকার এক ব্যক্তি।



বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।

তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্ন করেন, সরকার নারী নির্যাতন রোধে একের পর এক আইন করছে; কিন্তু তার মতো অসহায় পুরুষরা যে নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন- এর বিরুদ্ধে কি কোনো আইন হবে না?

সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসা ফেরার পর ফেরার পর স্ত্রী ও শশুরবাড়ির লোকজনের প্ররোচনায় যাত্রাবাড়ি থানা পুলিশ তাকে মালায় ফাঁসিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে।

লিখিত বক্তব্যে যাত্রাবাড়ি থানাধীন কাঠেরপুল এলাকার বাসিন্দা নির্যাতিত আব্দুল্লাহ আল মামুন খান বলেন, তিনি ১৯৯৯ সালের ১৭ আগস্ট একই থানাধীন বাঁশেরপুল এলাকার গেদু মিয়ার মেয়ে জুলেখা আক্তার লিপিকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তার স্ত্রী শাহ্ আলম নামে যাত্রাবাড়ি থানা পুলিশের এক সোর্সের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুললে দেখা দেয় দাম্পত্য বিরোধ। এ অবস্থায় ২০০৭ সালে তিনি সৌদি আরবে যান।

আড়াই বছর পর দেশে ফিরে জানতে পারেন, লিপি স্থানীয় গার্মেন্টস ব্যবসায়ী পলাশের সঙ্গেও সম্পর্ক গড়েছে। তিনি স্ত্রীকে পলাশের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করতে বললে লিপি শর্ত দেয়, তার নামে ৩ কাঠা জমি লিখে দিলে সে সংসার করবে। লিপির উগ্র আচরণের কারণে জমি লিখে না দেওয়ায় লিপির ভাই ফারুক ও সুমন এবং শ্বশুর গেদু মিয়া তাকে কয়েক দফা তাদের বাড়িতে আটকে রাখে।

পরে মামুন বড়ভাইয়ের নিষেধ সত্ত্বেও স্ত্রীর পরিবর্তে একমাত্র মেয়ে ইশরাত জাহান ইশার নামে জমি লিখে দিতে রাজি হন।

সাংবাদিক সম্মেলনে মামুন জানান, তার স্ত্রী গর্ববতী ছিল। গত ৪ এপ্রিল সে কোনাপাড়ার লুমা কিনিকে গিয়ে গর্ভপাত ঘটায়। পলাশকে লেখা একটি চিঠি পাওয়াসহ ১১ এপ্রিল বিষয়টি জানতে পারেন তিনি। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে স্ত্রীকে চড়-থাপ্পড় দেন।

তিনি জানান, এ জন্য ওইদিনই দুপুরে বাসায় ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় সুমন ও ফারুক তার শরীরে গরম পানি ঢেলে দেয়। এতে তার পুরো শরীর ঝলসে যায়। প্রথমে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে লালমাটিয়ার সিটি হাসপাতালে আড়াই মাস চিকিৎসা নেন।

তিনি জানান, খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে আসে। পুলিশ একটি এজহার লিখে হাসপাতাল থেকেই তার সই নেয় এবং গত ১৩ এপ্রিল যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা প্রচেষ্টা মামলা হিসেবে রেকর্ড করে। পুলিশ জুলেখাকে মামলার প্রধান আসামি করে তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানায়।  

মামুন জানান, পুলিশের যোগসাজসে লিপিকে রিমান্ডে না নিয়ে উল্টো তাকে জামিন দেওয়া হয়। এমনকি পুলিশ তাকে লিপির সঙ্গে আপোস করতে বলে। এ নিয়ে যাত্রাবাড়ী থানার ওসির সঙ্গে তার কথা কাটাকাটিও হয়।

মামুন অভিযোগ করেন, লিপি যাত্রাবাড়ী থানার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গেও সম্পর্ক গড়ে।

তিনি জানান, তাকে শায়েস্তা করার জন্য অস্ত্র ও নারী ব্যবসার মিথ্যা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে নীতিহীন ব্যবসা দমন আইনে যাত্রাবাড়ী থানার এসআই কামাল হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।

লিখিত বক্তব্যে মামুন আরও জানান, যাকে বিয়ে করার কারণে ১০টি বছর তিনি পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন সেই স্ত্রীই তার জীবনে কালসাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি প্রশ্ন করে বলেন, প্রশাসন এমন কী পেলো লিপির মধ্যে? কোনো তদন্ত না করেই তারা তার কথামতো চলছে।

পুলিশের সোর্স শাহ আলমের সঙ্গে লিপির সম্পর্ক থাকায় তিনি পুলিশের কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মামুন বলেন, ‘আমাকে বাঁচতে দিন। আমার অবস্থা এমন যে, আমি এখন নিজেই নিজের শরীর দেখলে ভয় পাই। আমি এক ভয়াবহ মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে আছি। এর থেকে আমি মুক্তি চাই। ’

মামুন ঘটনার নিরপে তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, র‌্যাব মহাপরিচালক, ডিএমপি কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধে শক্তিশালী একটি আইন করার দাবি করেন, যাতে তার মতো নির্মম নির্যাতনের শিকার পুরুষরা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মামুনের আইনজীবী অ্যাডভোটেক আমির হোসেনসহ কয়েকজন।

বাংলাদেশ সময় ১৭৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।