ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রাজশাহীতে দুর্ভোগের অপর নাম ‘বিটিসিএলর ইন্টারনেট সংযোগ’

জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০১০
রাজশাহীতে দুর্ভোগের অপর নাম ‘বিটিসিএলর ইন্টারনেট সংযোগ’

রাজশাহী: মাইক্রোওয়েব লিংক, ইন্টারনেট সার্ভার এক্সচেঞ্জের ম্যাচিং ত্রুটিসহ নানা কারণে রাজশাহী অঞ্চলের সঙ্গে বিটিসিএল সংযোগের মাধ্যমে দেশের ও বহি:বিশ্বের সঙ্গে ইন্টারনেট যোগাযোগ গত দুই মাস ধরে প্রায় অচল রয়েছে। এত দীর্ঘ সময় ধরে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি আদান-প্রদানের বাহক ইন্টারনেট সংযোগের বেহাল অবস্থায় স্থানীয় ব্যবসায়ী, শিল্প-মালিক ও সাংবাদিকসহ সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে।



বিশেষ করে আমদানিকারক, ও ব্যবসায়ীরা তাদের জরুরি তথ্য, ছবি বা ব্যবসায়িক চিঠি ঢাকায় বা বিদেশে পাঠাতে পারছেন না। একইভাবে তারা ডাউনলোড করতে পারছেন না ই-মেইলে বাইরে থেকে আসা তথ্য, ছবি বা ডকুমেন্ট।

বর্তমান অবস্থায় রাজশাহী থেকে ঢাকায় বা অন্যান্য স্থানে কেউ সহজে ই-মেইলে যোগাযোগ করতে পারছে না। ২০ থেকে ৩০বার চেষ্টা করে কোনও রকম লাইনে ঢুকতে পারলেও প্রয়োজনীয় স্পিড না থাকায় তথ্য আদান প্রদানে বারবার ব্যর্থ হতে হচ্ছে।

অপরদিকে প্রতিবার লাইনে ঢুকার ব্যর্থ চেষ্টার বিপরীতে একটি করে কলের টাকা কেটে নিচ্ছে বিটিসিএল। ফলে ইন্টারনেট সেবা না ভোগ করেও উল্টো যন্ত্রণা সয়েও বাড়তি বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে গ্রাহকদেরকে।

একই অবস্থা বৃহত্তর রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোরসহ বেশ কয়েকটি জেলার। এ অঞ্চলের মানুষের কাছে বিটিসিএল’র ইন্টারনেট মানে দুর্ভোগের অপর নাম।

এর মধ্যে গত মার্চে টাঙ্গাইলে ফাইবার অপটিক্যাল লাইন কাটা পড়ায় টানা কয়েক দিন ইন্টারনেট যোগাযোগ একবারেই বন্ধ ছিলো।

রাজশাহী অঞ্চলের বিটিসিএল গ্রাহকরা দীর্ঘসময় চেষ্টায়ও ওয়েবপেজ খুলতে পারছেন না। ঘন্টার পর ঘন্টা কানেকশনে থেকেও  ই-মেইল পাঠাতে বা চেক করতে পারছেন না, কখনও কখনও ওয়েবপেজ খোলা গেলেও কোন চিঠি, সংবাদ, তথ্য বা ছবি সংযুক্ত করতে গেলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।

চিঠি, খবর বা ছবি প্রেরণের দ্রুততম মাধ্যম ইন্টারনেটের সরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিটিসিএলের এহেন অনির্ভরযোগ্যতার কারণে সাধারণ মানুষ বাধ্য হচ্ছে বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বারস্থ হতে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময়ে বিশাল এলাকার গ্রাহক হারাবে সরকারি এ প্রষ্ঠিানটি। যার অর্থ সরকার বিরাট আর্থিক তির মুখে পড়বে।

অথচ এর পরেও টনক নড়ছে না বিটিসিএল কর্তৃপরে। ফলে গ্রাহকরা যথাযথ সেবা না পেয়েও প্রতি মাসের বিলের টাকা গুনছেন।

বিটিসিএল সূত্র জানায়, এক্সচেঞ্জের মাইক্রোওয়েবে ত্র“টি দেখা দেয়ায় ইন্টারনেট যোগাযোগে সমস্যা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিটিসিএল রাজশাহী এক্সচেঞ্জ ক্যারিয়ারের দায়িত্বে নিয়োজিত এক প্রকৌশলী বাংলানিউজকে জানান, ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপকে একাধিকবার এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে কার্যকর কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় গ্রাহকদের অভিযোগ নিয়ে তারাও বেকায়দায় রয়েছেন।  

এদিকে জাতীয় সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের প্রতিদিনের জরুরি সংবাদ বা ছবি এই অঞ্চল থেকে ঢাকায় কিংবা দেশের বাইরে পাঠাতেও বেগ পেতে হচ্ছে। একইভাবে ডাক্তাররা মুমূর্ষু রোগীর জরুরি এক্সরে বা অন্য কোনও মেডিকেল রিপোর্ট দ্রুত পাঠিয়ে নিতে পারছেন না দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের চিকিৎসকদের মতামত।

মুলত: ইন্টারনেট লাইনের স্পীড বা গতি অস্বাভাবিক ভাবে কম হওয়ার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে গ্রাহকরা জানান।

তবে এতকিছুর পরেও বিটিসিএল কর্তৃপ যেন নির্বিকার।

এ ভ্যাপারে বিটিসিএল’র রাজশাহী এক্সচেঞ্জের ইন্টারনেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী গোলাম মোরশেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এই সমস্যা সম্পর্কে তিনি অবগত নন বলে জানান। উল্টো বিষ্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের কম্পিউটারে তো কোনও সমস্যা হচ্ছে না!’

বিটিসিএল রাজশাহীর বিভাগীয় প্রকেীশলী আব্দুল মান্নান জানান, মাইক্রোওয়েব লিংক ডাউন বা ফেডিং হওয়া, রাজশাহী এক্সচেঞ্জের নিজস্ব ব্লক ঢাকার ইন্টারনেট সার্ভার এক্সচেঞ্জের ম্যাচিং না থাকাসহ মগবাজার ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জে প্রায়শ: সমস্যা হওয়ায় বিকল্প একটি লাইন পাবনা স্টেশনের মাধ্যমে কোনওভাবে চালু করা হয়েছে।

বর্তমান অবস্থা এবং লাইনে থেকেও ইন্টারনেটে মেইল আদান-প্রদান করতে না পারায় গ্রাহকদের হয়রানির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপকে জানানো হয়েছে।

তিনি জানান, যত দ্রুত সম্ভব এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ