ঢাকা: রাজধানীর নীমতলী-নবাবকাটরার প্রাইমারী স্কুল সংলগ্ন এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় রাত ১২টা পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৫ মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ফায়ার ব্রিগেডের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নাইম মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানিয়েছেন মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ঘটনাস্থলে থেকে আগুন নেভানো ও উদ্ধারকাজ তদারকি করেন তিনি।
তবে মৃতের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে যাবে বলে ঘটনস্থল থেকে জানিয়েছেন আমাদের সিনিয়র রিপোর্টার সাইদুর রহমান রিমন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে অগ্নিদদ্ধ শতাধিক নারী-পুরুষ-শিশু ভর্তি হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরা।
এদিকে মৃতদের আত্মীয় স্বজনরা এলাকায় বিক্ষোভ দেখালে পুলিশ ও র্যাবের কর্মীরা তা নিয়ন্ত্রণে আনে।
আবু নাইম মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, এমন একটি ঘিঞ্জি এলাকায় এ অগ্নিকান্ড ঘটেছে যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ঘটনাস্থলে যেতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। সময় মতো হোস পাইপ নিয়ে ঢুকতে না পারায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
মৃতদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা গেছে তারা হচ্ছেন- ইতি আক্তার বিথী (১৬), সুমাইয়া আক্তার (দেড় বছর), নাসিমা (৩৮), সিনিয়র স্টাফ নার্স- শামসুননাহার (৩৫), তার মেয়ে চৈতি (৮) ও রীতা(৭), বাবু(২০), সাবিনা ইয়াসমিন (৩৫), সুনো (৪)।
ফায়ার ব্রিগেডের মহাপরিচালক বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে আরও বলেন, আগুন ও ধোয়ার কারণে সাফোকেশনে ভবনগুলোর মধ্যে অনেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে। ফায়ার ব্রিগেডের ৮টি স্টেশনের ৮টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত ছিলো বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় লোকজন জানান, বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার বিস্ফোরণ হলে আগুনের সূত্রপাত হয়। সঙ্গে সঙ্গেই বৈদ্যুতিক তারের মাধ্যমে চারদিকের ভবনগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
নাজিমুদ্দিন রোড, নবাবকাটরা, নিমতলী, আগামসি লেনসহ আশপাশের সব মহল্লায় বিদ্যুতহীন হয়ে পড়ায় পুরো এলাকা অন্ধকারে ঢেকে যাওয়ায় উদ্ধার কাজ ব্যহত হয়।
আহত সোলায়মান হোসেন, কবির মিয়াসহ অন্য কয়েকজন জানান, রাত পৌণে ৯টার দিকে অকস্মাৎ বিদ্যুতের একটি ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণ থেকে আগুন লাগে। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিদ্যুত ট্রান্সফর্মার সংলগ্ন চারপাশের ৭/৮টি ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ভবনগুলোর তিন তলা, চার তলা জুড়ে আগুনের শিখা খুব দ্রুত একের পর এক ফ্যাটে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এসব ভবনের বাসিন্দারা ছোটাছুটি করে ছাদের দিকে উঠতে থাকে। তারা আগুনের থাবার মধ্যে আটকে পড়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে আর্তচিৎকার করলেও তাদের উদ্ধারের জন্য ধারে কাছে কেউ যেতে পারছিলেন না।
ফায়ার সার্ভিসের ৭টি গাড়ি এবং বিভিন্ন হাসপাতাল কিনিকের ২০টিরও বেশি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে হতাহতদের হাসপাতালে আনা নেয়ার কাজে ব্যস্ত থাকে। অন্ধকারের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ এগিয়ে গেলে শোর, চিৎকার, কোলাহলে রীতিমত হুলোস্থুল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মহল্লার নিচতলাগুলো ছিল সব দোকানপাট। সেগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রতিটি মুহূর্তেই বেরিয়ে আসতে থাকে লাশ। আগুনে পুড়ে বিকৃত, বিভৎস হয়ে যায় সবগুলো মৃতদেহ। কারো চেহারা চিনতে পারছিলেন না এলাকাবাসী।
বাংলাদেশ সময় ০০৩৫ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১০
এসআরআর/এনএস/এমএমকে