ঢাকা, বুধবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফরিদপুরে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান

ডিষ্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪০ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৩
ফরিদপুরে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান

ফরিদপুর: ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়ন ১১০ নম্বর পুকুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষকেরা। প্রচণ্ড তাপদাহে খোলা আকাশের নিচে পড়ালেখা করায় অর্ধেকের বেশি ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে যাওয়া আসা বন্ধ করে দিয়েছেন।

নতুন ভবন নির্মাণ করায় ও পুরাতন টিনের ঘর ভেঙে ফেলায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১১০ নম্বর পুকুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করেছে। ছাত্র-ছাত্রীদের লেখা পড়ার পরিবেশ তৈরি না করে কিভাবে বিদ্যালয়টি ভেঙে ফেলা হল প্রশ্ন অভিভাবকের। খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করায় অভিভাবকেরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।  

গত রমজান মাসে বিদ্যালয়ের পুরাতন টিনের ঘর ভেঙে ফেলায় ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের পাশে জনৈক মন্নু হাওলাদারের বাড়ির উঠানে পাঠদান করায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে।  

ওই স্কুলে মোট প্রথম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ৯৮ জন ছাত্র-ছাত্রী ও ৪ জন শিক্ষিকা ছিলেন। উঠানে ক্লাস নেওয়ার পর থেকে বর্তমানে ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ক্লাসে অংশ নেয়। তারপর ও প্রচণ্ড গরমে ছেলে-মেয়েরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।

এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকেরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, এ ধরনের কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জোর দাবি জানান তারা।  

এ বিষয় আজিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাজাহান হাওলাদার জানান, পুকুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সঙ্গে আমার বাড়ি। সেখানে শুরু থেকে একটি পুরাতন টিনের ঘর ছিল। নতুন ভবন বরাদ্দ হওয়ায় পর পুরাতন টিনের ঘরটি ভেঙে ফেলি। সব মালামাল আমি যত্ন সহকারে রেখেছি। আমার জায়গায় বিদ্যালয়ের পুরাতন কাঠ ও টিন দিয়ে আমার খরচে একটি ঘর নির্মাণ করে দেব। এখানে ছাত্র ছাত্রীরা আপাতত ক্লাস করবে।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা লাভলী আক্তার জানান, দীর্ঘদিন ধরে টিনের ঘরে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছি। তার পর ২০১৩ সালে স্কুলটি এমপিও ভুক্ত হয়। ২০২২ সালে নতুন ৪ তলা ফাউন্ডেশন করে একটি ১ তলা ভবন বরাদ্দ পাই। এরপর চেয়ারম্যান পুরাতন স্কুলটি ভেঙে ফেলে। যে কারণে অন্যের বাড়িতে খোলা আকাশের নিচে লেখাপড়ায় সবার কষ্ট হচ্ছে। তারপর অনেক গরমে আমাদের ছেলে মেয়েরা দুর্ভোগে পড়েছে। চেয়ারম্যান পুরাতন স্কুল ঘরটি ভেঙেছে। সে ইচ্ছে করলে ৭দিনের মধ্যে ঘর উঠাতে পারে। আমার কিছু করার নাই।  

ভাঙ্গা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মহসিন রেজা জানান, ভাই আমি ভাঙ্গায় নতুন এসেছি এবং গত ফেব্রুয়ারিতে জয়েন্ট করেছি। ছেলে মেয়েরা খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করছে আমি কিছু জানতাম না। আপনারা ওই বিদ্যালয়ে গেছেন শুনে আমি ও ইউএনও মহাদয় তার পরপরই সরেজমিনে গিয়েছি। খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করা দেখে আমি ক্ষুব্ধ হয়েছি। তবে কারো কাছ থেকে কোনো অনুমতি না নিয়ে কিভাবে পুরাতন স্কুল ঘর ভাঙা হল সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক তার দায় এড়াতে পারেন না।

ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজিমউদ্দিন জানান, শুনেছি চেয়ারম্যান স্কুলটি ভেঙে ফেলছে এবং তার জায়গায় আরেকটি ঘর করে দিবে। বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া কষ্ট হলেও আগামী সপ্তাহে সমাধান হবে আশা করছি।

ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, স্থানীয় এমপি মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী পুকুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন এনে দিয়েছে। দীর্ঘদিন হয় এলজিডি স্কুলে ভবনের পাইলিং কাজ করতে দেরি করছে। বিদ্যালয়ে ঘর ভাঙা ও গাছ বিক্রি করার বিষয় তিনি কিছুই জানেন না। ছাত্র ছাত্রীরা খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করছে তাও জানি না। আমি আপনাদের নিকট থেকে শুনলাম।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।