ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৩ মে ২০২৪, ১৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সাতমসজিদ সড়কের গাছ কাটা বন্ধ করার দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৬ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২৩
সাতমসজিদ সড়কের গাছ কাটা বন্ধ করার দাবি প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: ধানমণ্ডির সাতমসজিদ সড়ক বিভাজকের গাছ কাটা বন্ধ এবং সেখানে পুনরায় গাছ রোপণের দাবি জানিয়েছে ‘ধানমন্ডি সাতমসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলন’।  

সোমবার (৮ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানায় সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য গবেষক পাভেল পার্থ।  

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে সংবিধানের ১৮(ক) ধারা এবং বনভূমি উজাড় রোধে বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন ২০১৬ প্রচলিত আছে। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ২৩ নম্বর ধারা অনুযায়ীও ধানমন্ডি সড়কের স্মৃতিময় বৃক্ষগুলি সংরক্ষণ করার কথা।  

সিটি করপোরেশনের ভাষ্য, গাছগুলো সড়কদ্বীপের জন্য বেমানান। অথচ পৃথিবীতে বসবাসের অযোগ্য শহরের মধ্যে শীর্ষ সারিতে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। এখানে যেমন বায়ুদূষণ ভয়াবহ পর্যায়ের, তেমনি অব্যাহতভাবে তাপমাত্রা বেড়ে তাপদাহের সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকার যেসব এলাকায় তুলনামূলকভাবে গাছপালা বেশি আছে, সেসব এলাকার তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে গাছপালাবিহীন এলাকার চেয়ে ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কম থাকে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, ষাটের দশক থেকে রাজধানীর পরিধি ব্যপ্তির সঙ্গে সঙ্গে সবুজ ক্রমশ ধূসর হয়ে এসেছে। নৃশংসভাবে গাছ কেটে যে নগরায়ন হয়েছে, তার বিরূপ প্রভাব এখন আমরা ভোগ করছি। উচ্চ শব্দ দূষণ, মারাত্মক বায়ুদূষণ ও অসহনীয় তাপমাত্রা রাজধানীকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে।  

তিনি বলেন, প্রকৃতি উজাড় করে উন্নয়ন জনগণের জন্য সুফল আনে না। উন্নয়নের উদ্দেশ্য হবে মানুষকে স্বস্তি দেওয়া, গাছের অক্সিজেনের স্বস্তির বিকল্প কী আছে? 

শিক্ষাবিদ রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ধ্বংসের বিপরীতে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। উন্নয়নের পরিকল্পনায় জনগণের মতামত প্রতিফলিত হতে হবে। প্রকৃতি ধ্বংস আইনত অপরাধ হলে গাছ কাটা কেন শাস্তির আওতায় আসবে না।  

অভিনয়শিল্পী, নাট্যনির্দেশক ও সংগঠক মামুনুর রশীদ বলেন, গাছ উজাড় করলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পরিণতি কেউ আটকাতে পারবে না। অথচ বনভূমি উজাড়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মহলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের ব্যথিত করে। সংকীর্ণ সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই গাছ কেটে উজাড় আর জলাভূমি ভরাট করে মরুকরণ চলছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, রাজধানী রক্ষায় সবারই গাছের প্রয়োজন- এ সত্যটি উপেক্ষা করা নজিরবিহীন। নগর প্রশাসন নগরবাসীর মতামতকে তোয়াক্কা করেছে না। আপনারা সিঙ্গাপুরের উন্নয়ন মডেল দেখাচ্ছেন, তবে সিঙ্গাপুরের পরিবেশ সংরক্ষণের মডেল নিচ্ছেন না। বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন ২০১৬ নীতিগত অনুমোদনের পর আটকে থাকা দুঃখজনক।  

তাদের দাবিগুলো হলো 

সাতমসজিদ সড়কদ্বীপে গাছ কাটা অবিলম্বে বন্ধ করা এবং কেটে ফেলা গাছগুলোকে স্থানীয় প্রজাতি দ্বারা প্রতিস্থাপন করা;

গাছ রোপণ করে তা আবার কেটে ফেলার রেওয়াজ বন্ধ করা;

নগরের বনায়ন, গাছ রক্ষা ও কাটার প্রয়োজনে সুনির্দিষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন করা;

সিটি করপোরেশন এলাকায় যেকোনো প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা প্রতিবেদন তৈরি;

প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট এবং সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনার শাখার যথাযথ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা;

পার্ক, উদ্যান, সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের উন্নয়ন পরিকল্পনার নকশা জনগণের কাছে উপস্থাপনপূর্বক এলাকাবাসীসহ পেশাজীবী, পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশবিদসহ উদ্যানতত্ববিদদের যথাযথ মতামত নেওয়া সাপেক্ষে পরিকল্পনা চূড়ান্তকরণ এবং বাস্তবায়ন; 

বিদ্যমান গাছ ও সবুজকে অক্ষুণ্ণ রেখে উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন;

নগর এলাকায় গাছ কাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর আর বন অধিদপ্তরের যথাযথ ভূমিকা প্রতিপালনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া;

এবং নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রকৃতি ভিত্তিক পরিকল্পনাকে প্রাধান্য দেওয়া।  

ধানমণ্ডি সাত মসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলন কমিটির সমন্বয়ক আমিরুল রাজীবের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বাপার নগরায়ন বিষয়ক সদস্য সচিব আদিল মোহাম্মদ, মানবাধিকার শিরিন হক প্রমুখ।

চলতি বছর জানুয়ারিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ধানমন্ডির সাতমসজিদ সড়কে সড়কদ্বীপ উন্নয়নের সময় বেশ কয়েকটি গাছ কেটে ফেলার পর ৩১ জানুয়ারি এর প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করে শিশু শিক্ষার্থী, পরিবেশবাদী, সমাজকর্মী, গবেষক, শিক্ষক, শিল্পীরা।  

এরপর গাছ কাটা বন্ধ রাখে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সর্বশেষ ১ মে রাতে পুনরায় সড়ক বিভাজকের গাছ কাটা শুরু করে দক্ষিণ সিটি।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ গণমাধ্যমকে বলেন, বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় ঘাটারচর থেকে বসিলা হয়ে কাচপুর পর্যন্ত রুটটিতে নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য সাতমসজিদ সড়কের উন্নয়ন কাজ চলছে।  

তিনি বলেন, সড়কের বিভাজকটি সমান করে পূর্ণাঙ্গ একটি বিভাজক তৈরি করা হবে, ফলে যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল করবে। আমরা স্বীকার করি কিছু কিছু গাছ আমাদের কাটতে হয়েছে। তবে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে আমরা ওই বিভাজকে দ্রুতবর্ধনশীল গাছ রোপণ করব।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০১ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২৩
ইএসএস/এইচএমএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।