ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

সাবেক শ্বশুর হত্যায় জামাতার যাবজ্জীবন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট     | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৩
সাবেক শ্বশুর হত্যায় জামাতার যাবজ্জীবন

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে পারিবারিক বিরোধের জেরে শ্বশুর ফারুক হোসেনকে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে বাকপ্রতিবন্ধী জামাতা দেলোয়ার হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানাসহ অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের রায় দেওয়া হয়।

 

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে এ রায় দিয়েছেন। রায়ের সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।  

দণ্ডপ্রাপ্ত দেলোয়ার রামগতি উপজেলার চর বাদাম ইউনিয়নের পূর্ব চরসীতা গ্রামের আবদুল মতিনের ছেলে। তিনি জন্ম থেকেই বাকপ্রতিবন্ধী।

একই মামলায় আদালত দেলোয়ারের খালাতো ভাই মো. আরিফ হোসেন ওরফে আরিফ আমিন (৩৬) ও তার ভগ্নিপতি হাফিজ উল্যাকে (৫৮) বেকসুর খালাস দেন।  

ভিকটিম ফারুক হোসেন রামগতি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের চরসীতা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি রামগতির জমিদারহাট বাজারের একটি হোটেলের কর্মচারী ছিল।  

জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  

মামলার এজাহার ও আদালত সূত্র জানায়, ২০১২ সালের দিকে বাকপ্রতিবন্ধী দেলোয়ার হোসেন মিঝির সঙ্গে ফারুক হোসেনের মেয়ে সুমি আক্তারের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তাদের দুইজনের মধ্যে বনিবনা হতো না। এনিয়ে সাংসারিক ঝামেলা লেগেই থাকতো। এরই মধ্যে তাদের সংসারে দুই সন্তানের জন্ম হয়। তবে পারিবারিক বিরোধের কারণে স্বামী দেলোয়ার তার স্ত্রী সুমিকে নিয়ে সন্দেহ করতো। সুমি বিভিন্ন সময়ে তার বাবার বাড়িতে গিয়ে থাকতো। দেলোয়ার তাকে বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য চাপ প্রয়োগ করতো। ঘটনার তিন চারদিন আগে সুমি তার স্বামীকে আদালতের মাধ্যমে তালাক দেয়। বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি দেলোয়ার। দেলোয়ার তার স্ত্রী ফিরিয়ে দিতে তার শ্বশুরের ওপর চাপ প্রায়োগ করে এবং তাকে বাড়িতে গিয়ে আটকে রাখে। এছাড়া দেলোয়ার ও তার খালাতো ভাই আরিফ হোসেন তাদেরকে বিভিন্ন সময় হুমকি দিত।

২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাতে দেলোয়ার ও অজ্ঞাত এক সহযোগীকে নিয়ে তার শ্বশুর ফারুকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরদিন ফারুকের মরদেহ পাশ্ববর্তী কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একটি ঝিলের মাঝখান থেকে উদ্ধার করা হয়।  

এ ঘটনায় ওইদিন সুমির মা খতিজা বেগম বাদি হয়ে কমলনগর থানায় জামাতা দেলোয়ার হোসেন, তার খালাতো ভাই মো. আরিফ হোসেন ও ভগ্নিপতি হাফিজ উল্যার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মকবুল হোসেন।  

পুলিশ দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে তাকে রিমাণ্ডে নেয়। দেলোয়ার বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় একজন বাকপ্রতিবন্ধী শিক্ষকের উপস্থিতিতে দেলোয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। সে অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে তার শ্বশুরকে হত্যা ঘটনার কথা জানায় এবং ঘটনাটি স্বীকার করে। ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

ঘটনার সময় তার সঙ্গে অজ্ঞাত আরও একজন লোক ছিল বলে জানায়। তবে তাকে পুরোপুরি চিহ্নিত করতে পারেনি তিনি। এ জন্য পুলিশও তাকে চিহ্নিত করতে পারেনি।  

এদিকে মামলার তদন্তে উঠে আসে বাকপ্রতিবন্ধী দেলোয়ার খালাতো ভাই আরিফ হোসেন ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে চলাফেরা করার কারণে সে দেলোয়ারের অঙ্গভঙ্গি বুঝতো। দেলোরের স্ত্রী চলে যাবার কারণ হিসেবে তার শ্বশুর ফারুক হোসেনকে দায়ী করে আরিফ দেলোয়ারকে ফুঁসলিয়ে আসছিল। এছাড়া ঘটনার রাতে আরিফ মরদেহ প্রাপ্তির স্থানে অবস্থান নেয়। হত্যা মামলায় সে গ্রেফতার হওয়ার পর কারাগার থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসে হত্যা মামলার বাদিকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিত।  

ফলে মামলার তদন্ত কমকর্তা ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দেলোয়ার ও তার খালাতো ভাই আরিফকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেন। মামলার অন্য আসামি হাফিজ উল্যাকে অব্যাহতির আবেদন করেন। এছাড়া দেলোয়ারের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত অজ্ঞাত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা যায়নি বলে জানান।  

আদালত দীর্ঘ শুনানি শেষে শ্বশুর ফারুক হোসেনকে হত্যার দায়ে দোষী সাবস্ত করে দেলোয়ার হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আরিফ ও হাফিজ উল্যার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দেন।  

বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।