ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ছেলের নামে চুরির অভিযোগ, বাবা-মাকে স্টোররুমে তালাবদ্ধ করে বিপাকে চেয়ারম্যান!  

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৩
ছেলের নামে চুরির অভিযোগ, বাবা-মাকে স্টোররুমে তালাবদ্ধ করে বিপাকে চেয়ারম্যান!
 

লক্ষ্মীপুর: ছেলে চুরি করেছে বলে অভিযোগ তুলে তার বাবা-মাকে একটি ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে লক্ষ্মীপুর সদরের চরশাহী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম রাজুর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে সংবাদ দেখে ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

 

বুধবার (২২ মার্চ) দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি অঞ্চল চন্দ্রগঞ্জ আদালতের বিচারক আনোয়ারুল কবির এ নির্দেশ দেন।

আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার জন্য চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ১৬ মার্চ একাধিক গণমাধ্যমে ‘অভিযোগ ছেলের বিরুদ্ধে, চেয়ারম্যানের নির্দেশে দুই ঘণ্টা স্টোররুমে তালাবদ্ধ বাবা-মা’ শিরোনামসহ বিভিন্ন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদটি বিচারকের নজরে এলে তিনি বিষয়টি আমলে নিয়ে এ আদেশ দেন।  

চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির মো. ইয়াছির আরাফাত বাংলানিউজকে আদালতের নির্দেশনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  

আদালত সূত্র জানায়, ‘অভিযোগ ছেলের বিরুদ্ধে, চেয়ারম্যানের নির্দেশে দুই ঘণ্টা স্টোররুমে তালাবদ্ধ বাবা-মা’ শিরোনামে ১৬ মার্চ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ আদালতের বিচারকের নজরে আসে। সংবাদে বর্ণিত ঘটনা পর্যালোচনায় প্রচলিত আইনে অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে। এতে ঘটনাটি তদন্ত প্রয়োজন। এ অবস্থায় ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড ১৮৯৮ এর ১৫৬ (৩) ধারা অনুযায়ী চরশাহী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম রাজু কর্তৃক ভূক্তভোগীদের গালাগাল, পরে পরিষদের স্টোররুমে দুই ঘণ্টা আটকে রাখা ও সাদা কাগজে সই নিয়ে ইউপি সদস্য মো. আব্দুস ছাত্তারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সাক্ষীদের জবানবন্দি ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য সাক্ষ্য নিয়ে আদেশের পর থেকে ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য চন্দ্রগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চন্দ্রগঞ্জ থানার ওসি তহিদুল ইসলাম বলেন, আদালতের নির্দেশের কপি এখনো হাতে আসেনি। সেটি পেলেই তদন্ত করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।  

এদিকে পরিষদের স্টোররুমে আটক রাখা এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালের অভিযোগ এনে গত ১৫ মার্চ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ইউসুফ নামে এক ভূক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দেন।  

এতে উল্লেখ করা হয়, গত ১২ মার্চ সদর উপজেলাধীন মিয়ার বাজার নামক এলাকায় রিকশাচালক বাবুলের রিকশার ব্যাটারি চুরি হয়। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম রাজু চরশাহীর ছোট ভল্লবপুর গ্রামের মোহাম্মদ ইউসুফের ছেলে পারভেজ ও একই এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে ফিরোজ আলমকে সন্দেহ করেন। ১৩ মার্চ বিকেলে চেয়ারম্যান ফোনে পারভেজের বাবা মোহাম্মদ ইউসুফ ও মা পারুল বেগম এবং ফিরোজের বাবা আবুল কাশেমকে পরিষদে দেখা করতে বলেন।

পরে তারা ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান কক্ষে গেলে চেয়ারম্যান তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং পরিষদের স্টোররুমে দুই ঘণ্টা আটকে রাখেন। একপর্যায়ে তাদের থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুস ছাত্তারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইউসুফ বলেন, আমার ছেলে যদি এ ঘটনায় জড়িত হয়, তাহলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কিন্তু বিনা কারণে চেয়ারম্যান আমাদের ওপর অন্যায় করেছে। তাই আমি ন্যায়বিচারের জন্য ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

ইউপি সদস্য আব্দুস ছাত্তার বলেন, কাউকে আটকে রাখা হয়নি। সাদা কাগজে সইও নেওয়া হয়নি। শুধু ইউছুফকে বলা হয়েছে, তার ছেলে যেন রাত ১১টার পর বাইরে বের না হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম রাজু বলেন, চুরির ঘটনার সঙ্গে পারভেজ জড়িত। সে আরও অনেক জায়গায় চুরি করেছে। তাকে খোঁজ করে না পেয়ে তার বাবা ইউসুফকে পরিষদে ডেকে আনা হয়। তবে তাকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এখন ষড়যন্ত্র করে আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।